লাগামছাড়া দামে গরিবের পুষ্টিতে টান
নিত্যপণ্যের দামে ক্রমবর্ধমান ঊর্ধ্বগতিতে নাভিশ্বাস উঠে গেছে জনসাধারণের। পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকা সত্ত্বেও তদারকির অভাবে বাজারে জেঁকে বসেছে সিন্ডিকেট। সপ্তাহের বাজার করতে গিয়েই ফেলতে হচ্ছে দীর্ঘশ্বাস; ব্যাগের তলানি ভরতেই পকেট খালি হওয়ার উপক্রম। যার প্রভাব পড়ছে মধ্যবিত্তের পাতের পুষ্টিতেও ।
চাল-ডাল থেকে শুরু করে প্রতিটা পণ্যেরই দাম বাড়ছে হু হু করে। মাছ-মাংসের বাজার আগে থেকেই চড়া; তার ওপর ডিম আর ব্রয়লার মুরগির আরেক দফা দাম বাড়াতে ভাটা পড়েছে পাতের আমিষে। কোরবানির ঈদের পর থেকেই অবাধ্য সবজীর বাজারের উত্তাপে লেগেছে নতুন করে লেগেছে আগুনে ছোঁয়া। সপ্তাহের ব্যবধানে লাগামছাড়া হয়ে গেছে নিত্যপণ্যের বাজার। পরিবহন খরচ ও বৃষ্টির সঙ্গে ব্যবসায়ীরা নতুন অজুহাত হিসেবে পেয়েছেন কোটাবিরোধী আন্দোলন।
মূল্যস্ফীতির বাজারে ‘মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে দাঁড়িয়েছে চালের বাড়তি দাম। শুক্রবার (১২ জুলাই) রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে খবর নিয়ে জানা গেছে, বস্তাপ্রতি সব ধরনের চালের দামই বেড়ে গেছে। এর মধ্যে মোটা চালের দামই বেড়েছে কেজিপ্রতি ৪ টাকা। গত সপ্তাহেও যে বিআর-২৮ চাল বিক্রি হয়েছে ৫৬ টাকায়, আজ তা বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়। এছাড়া প্রতি কেজি মিনিকেট ৭০ থেকে ৭২ টাকা, নাজিরশাইল ৭০ টাকা ৭৫ ও বাসমতি ৯০-৯৫ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, তাদের কিছু করার নেই। আড়ত থেকে সব ধরনের চালই বস্তাপ্রতি ২০০-৩৩০ টাকা বেশি দিয়ে কিনতে হচ্ছে তাদের। যেমন দামে কিনছেন, তেমন দামে বিক্রি করতে বাধ্য তারা।
সপ্তাহ তিনেক ১৭০-১৮০ টাকায় ঘোরাফেরার পর আবারও এক লাফে ২০০ টাকায় পৌঁছে গেছে ব্রয়লার মুরগির দাম। ব্যবসায়ীরা বলছেন, টানা কয়েকদিন ধরে বৃষ্টির কারণে মুরগির দাম বেড়েছে। কিন্তু ক্রেতাদের দাবি, দুর্মূল্যের বাজারে অন্যসব মাংস ছেড়ে ক্রেতা সাধারণ ব্রয়লার মুরগিতে ঝুঁকে পড়ায় ব্যবসায়ীরা ইচ্ছেমতো দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছেন।
এছাড়া সোনালী মুরগি প্রতি কেজি ৩২০ টাকা, কক প্রতি কেজি ৩৫০ টাকা, লেয়ার প্রতি কেজি ৩৩০ থেকে ৩৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খুচরা বাজারে দেশি মুরগির দাম হাঁকা হচ্ছে ৬৫০-৬৮০ টাকা। অন্যদিকে প্রতি কেজি গরুর মাংস ৭৮০ টাকা এবং খাসির মাংস ১১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ব্রয়লার মুরগির পাশাপাশি আরেক দফা বেড়েছে ডিমের দামও। প্রতি ডজন ডিম আজ ১৫০-১৬০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।
সবকিছু ছাপিয়ে উত্তাপ ছড়াচ্ছে সবজির বাজার। ৩২০ টাকা কেজিতে গিয়ে ঠেকেছে কাঁচামরিচের দাম। ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে টমেটো। সেঞ্চুরি ছাড়িয়েছে বরবটি, বেগুন, করলা, কচুরমুখি, কাকরোল, চিচিঙ্গা ও ঝিঙ্গার দাম। প্রতি কেজি বেগুন আজ বিক্রি হচ্ছে ১০০-১১০ টাকায়। এছাড়া প্রতি কেজি বরবটি ১০০-১২০, করলা ১২০-১৪০, কচুরমুখি ১২০-১৬০ এবং কাকরোল, চিচিঙ্গা ও ঝিঙ্গা ৮০-১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে আজ। যা একটু নাগালের মধ্যে আছে পেঁপে-পটল। এ দুটি সবজি কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৫০-৬০ টাকায়।
স্বস্তি ফেরেনি পেঁয়াজ ও আলুর দামেও। বিভিন্ন বাজারে আজ প্রতি কেজি পেঁয়াজ ১১০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। আর প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকা দরে।
তাল মিলিয়ে মাছের বাজারও বেশ চড়া। বাজারে প্রতি কেজি চাষের পাঙাশ ও তেলাপিয়া ২৫০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে আজ। এছাড়া রুই প্রতি কেজি ৩৫০-৫০০ টাকা, কাতলা প্রতি কেজি ৩৮০ থেকে ৪০০ টাকা ও শিং প্রতি কেজি ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
দেশি মাছে হাত দেওয়ারও সাহস পাচ্ছেন না ক্রেতারা। বাজারে প্রতি কেজি টেংরা ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকা, পাবদা ৪৮০ থেকে ৫০০ টাকা, চিংড়ি ৭০০ টাকা ও বোয়াল প্রতি কেজি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে এখন।
মিরপুর-১ এর কাঁচাবাজার ঘুরে কথা হয় রাজীব হাসান নামে এক ক্রেতার সঙ্গে। তিনি বলেন, সব ধরনের সবজির দাম অতিরিক্ত বেশি। বাজারে কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই। হুটহাট যখন খুশি দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে বিক্রেতারা। আগে যেখানে দুই-তিন আইটেম থাকতো ভাতের পাতে, সেখানে এখন আলুভর্তা খেয়েও বাঁচা মুশকিল।
রুহুল আমীন নামে আরেক ক্রেতা বলেন, সব কিছুর দাম যেভাবে বাড়ছে, তাতে আমাদের মতো মধ্যবিত্তদের খেয়ে-পরে বাঁচাই দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাজারের যে অবস্থা, অনেক কাটছাঁট করে চলেও মাসের হিসাব মেলানো কঠিন। মাংস কেনা বলতে গেলে ছেড়েই দিয়েছি। এখন দেখছি, সবই ছাড়তে হবে।
আব্দুল হালিম নামে এক সবজি বিক্রেতা বলেন, বেশিরভাগ সবজির মৌসুম শেষ হয়ে গেছে। নতুন সবজি ওঠার আগ পর্যন্ত দাম কমার সম্ভাবনা নেই। তাছাড়া, টানা বৃষ্টিতে সররবরাহ কমেছে। আন্দোলনের কারণে পরিবহন খরচও বেড়েছে।
মন্তব্য করুন