ছাত্রলীগের হামলায় ঢামেকে ৩০ জনের বেশি শিক্ষার্থী
কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের ব্যাপক ধাওয়া পাল্টাধাওয়া হয়েছে। এ সময় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হামলায় ৩০ জনের বেশি শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) নেওয়া হয়েছে।
সোমবার (১৫ জুলাই) দুপুর ২টার পর থেকে তারা ঢামেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
পুলিশ জানায়, সোমবার দুপুর ২টার পর থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ৩০ জনের বেশি আহত শিক্ষার্থী ঢামেকে এসেছেন। তবে আহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
ঢামেকের জরুরি বিভাগে গিয়ে দেখা গেছে, আহত শিক্ষার্থীরা চিকিৎসা নিচ্ছেন। তারা কেউ হেঁটে, কেউ রিকশায়, কেউ অন্যান্য বাহনে চড়ে এসেছেন। অনেকেরই মাথায় আঘাত লেগেছে। তাদের মাথা থেকে রক্ত ঝরতেও দেখা গেছে।
ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের সহকারী ইনচার্জ (এএসআই) মো. মাসুদ মিয়া এসব তথ্য নিশ্চিত করে জানান, ঢাবি থেকে আহত শিক্ষার্থীরা আসার আগে ইডেন মহিলা কলেজের কিছু আহত শিক্ষার্থী চিকিৎসা নিয়ে গেছেন। দুপুর ২টার পর থেকে যারা এসেছেন তাদের বেশির ভাগ এসেছেন ঢাকা ইউনিভার্সিটি এলাকা থেকে। ৩০ জনের বেশি আহত এসেছেন ঢামেকে।
তিনি বলেন, ধাপে ধাপে আহতরা আসছেন। দু-একজন করে সংখ্যা বাড়ছে। আহত আরও বাড়তে পারে।
এর আগে সোমবার দুপুরে সরকারি চাকরিতে ‘মুক্তিযোদ্ধা কোটা’ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো আন্দোলন শুরু হয়। এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা কলেজ, ইডেন কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এসে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশ থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন। মিছিলটি ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ স্থান প্রদক্ষিণ করে পুনরায় রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এক সমাবেশে মিলিত হয়।
বিক্ষোভ মিছিলে শিক্ষার্থীরা ‘কোটা না মেধা, মেধা মেধা’, ‘কে রাজাকার কে রাজাকার, তুই রাজাকার তুই রাজাকার’, ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, রাষ্ট্র কারো বাপের না’, ‘চেয়েছিলাম অধিকার, হয়ে গেলাম রাজাকার’, ‘আমার স্বাধীন বাংলায়, একের কথা চলে না’, ‘তুমি কে আমি কে, বাঙালি বাঙালি’, ‘লাখো শহীদের রক্তে কেনা, দেশটা কারো বাপের না’ অ্যাকশন টু অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’, ‘হামলা/মামলা দিয়ে আন্দোলন, বন্ধ করা যাবে না’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন।
এরপর সোমবার বিকেল সোয়া ৪টার দিকে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের হটিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ক্যাম্পাস নিয়ন্ত্রণে নেয় ছাত্রলীগ।
এর আগে বিকেল ৩টার দিকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ঢাবির বিজয় একাত্তর হল সংলগ্ন হল পাড়ায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেন। একপর্যায়ে কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের পিটিয়ে ছত্রভঙ্গ করে দিয়ে ক্যাম্পসের নিয়ন্ত্রণে নেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এতে গণমাধ্যমকর্মীসহ অনেকেই আহত হয়েছেন। আহতদের ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, রোববার (১৪ জুলাই) সংবাদ সম্মেলনে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে এত ক্ষোভ কেন? মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-পুতিরাও পাবে না? তাহলে কি রাজাকারের নাতি-পুতিরা পাবে? আমার প্রশ্ন দেশবাসীর কাছে।’
মন্তব্য করুন