বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ভারতীয় ছাত্র সংগঠনগুলোর সংহতি
কোটা সংস্কার নিয়ে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবির সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেছে ভারতীয় ছাত্ররা।
মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) অল ইন্ডিয়া ডেমক্র্যাটিক স্টুডেন্টস অর্গ্যানাইজেশন (এআইডিএসও), অল ইন্ডিয়া স্টুডেন্টস’ অ্যাসোসিয়েশন (এআইএসএ), অল ইন্ডিয়া স্টুডেন্টস’ ব্লক (এআইএসবি), অল ইন্ডিয়া স্টুডেন্টস’ ফেডারেশন (এআইএসএফ) ও পিএসইউর পক্ষ থেকে এ প্রসঙ্গে একটি যৌথ বিবৃতি দিয়েছে ভারতের প্রগতিশীল সংগঠনগুলো।
বিবৃতি বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশের ছাত্রসমাজ জেগে ওঠেছে এবং ‘কোটা নয়, মেধা’ দাবিতে আন্দোলন করছে। ‘মুক্তিযোদ্ধা কোটা’র দীর্ঘদিনের নীতি এবং এর ফলে তাদের আত্মীয়-স্বজনদের সুবিধা দেওয়ার চর্চা ছাত্র ও যুবসমাজের মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি করে আসছে। এর আগেও এ নিয়ে অসংখ্য প্রতিবাদ হয়েছে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ছিল জনযুদ্ধ। এটি ছিল দেশের কৃষক, শ্রমিক, বুদ্ধিজীবী, ছাত্র, যুবক ও নারীসমাজের সকল স্তরের একীভূত সংগ্রাম। ক্ষমতাসীন দল তাদের সুবিধাবাদী স্বার্থে ‘মুক্তিযোদ্ধা’ কোটাকে কাজে লাগিয়ে এ ইতিহাসকে অপব্যবহার করছে।’
এতে বলা হয়, ‘বর্তমানে এই সাহসী আন্দোলন একটি জাতীয় রূপ নিয়েছে। গত কয়েক দিন ধরে সারা বাংলাদেশে শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমেছে। বৈষম্যের অবসানের দাবিতে অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব, শিক্ষাবিদ ও বুদ্ধিজীবী তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনায় না গিয়ে তাদের জাতীয় স্বাধীনতার শত্রু (রাজাকার) হিসেবে আখ্যায়িত করে সাধারণ জনগণের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। এ ছাড়া বাংলাদেশের পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ‘বর্বরতা’ও অব্যাহত আছে। এতে অনেক বিক্ষোভকারী গুরুতর আহত হয়েছেন এবং তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক।’
এতে আরও বলা হয়, ‘মঙ্গলবার বাংলাদেশের রংপুরে পুলিশের গুলিতে এক ছাত্র ‘শহীদ’ হয়েছেন। এই দমন-পীড়নে বাংলাদেশ সরকারের ভূমিকা নিন্দনীয় এবং আমরা এই ফ্যাসিবাদী হামলার বিরুদ্ধে আমাদের দেশের গণতান্ত্রিক ছাত্রসমাজের পক্ষ থেকে তীব্র নিন্দা জানাই। আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, বিশ্বব্যাপী প্রতিটি দেশের স্বৈরাচারী সরকার পুঁজিবাদী ও সাম্রাজ্যবাদী শ্রেণির স্বার্থ রক্ষার জন্য জনগণের স্বার্থকে বলি দিচ্ছে, সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ওপর ফ্যাসিবাদী আক্রমণ চালাচ্ছে।’
‘বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ এই ফ্যাসিবাদী ভূমিকা পালন করছে। পুঁজিবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক আন্দোলন ছাড়া এ সংকট সমাধানের কোনো পথ নেই। এই ঐতিহাসিক আন্দোলনকে সঠিক পথে চালিত করার দায়িত্ব এখন বাংলাদেশের ছাত্রসমাজের কাঁধে, তা না হলে তা কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছাবে না।’
উল্লেখ্য, চীন সফর নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কোটা সংস্কার আন্দোলন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন ‘মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এত ক্ষোভ কেন? মুক্তিযোদ্ধার নাতিপুতিরা কিছুই পাবে না, তাহলে কি রাজাকারের নাতিপুতিরা সব পাবে?’ প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা বা নাতিপুতি’ বলা হয়েছে অভিযোগ করে রোববার রাত থেকে প্রতিবাদ শুরু করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এরপর আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে রাজধানীজুড়ে। মঙ্গলবার সেই আন্দোলন দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়লে ৬ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। সারাদেশে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশ ও ছাত্রলীগের ন্যক্কারজনক হামলার প্রতিবাদে বুধবারও কর্মসূচি দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
মন্তব্য করুন