১৮৮ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে একই পরিবারের ৭ জনের নামে মামলা
প্রায় ১৮৮ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের সাবেক চেয়ারম্যান মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসের পরিবারের সাতজনসহ আটজনের নামে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১ এ মামলাটি করেন সংস্থাটির সহকারী পরিচালক রাকিবুল হায়াত।
মামলায় মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস ছাড়াও তার স্ত্রী ফজলুতুননেসা, দুই মেয়ে ফৌজিয়া কামরুন তানিয়া ও তাসনিয়া কামরুন অনিকা, ছেলে মোস্তফা কামরুস সোবহান ও ছেলের স্ত্রী শাফিয়া সোবহানকে আসামি করা হয়েছে। এছাড়া কুদ্দুসের আত্মীয় নূর-ই-হাফজা এবং মেয়ে ফৌজিয়া কামরুন তানিয়ার স্বামী মীর রাশেদ বিন আমানকেও আসামি করা হয়েছে। মীর রাশেদ প্রতিষ্ঠানটির সাবেক সিইও ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, আসামিরা সুপরিকল্পিতভাবে সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের তহবিল থেকে মোট ১৮৭ কোটি ৮৪ লাখ ১৫ হাজার ৯৬৬ টাকা আত্মসাৎ করেন। বিধিবহির্ভূতভাবে একই পরিবারের সাতজন সদস্য কোম্পানির বোর্ড পরিচালক এবং প্রধান অর্থ কর্মকর্তা কাম ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা পদ গ্রহণ করেন।
এজাহারে আরও বলা হয়, আসামিরা আত্মসাৎ করা অর্থ তাদের নামীয় বিভিন্ন কোম্পানি ও ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তর ও রূপান্তর করেন। এ কারণে অভিযুক্তদের নামে দণ্ডবিধির ৪০৯/৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/১০৯ ধারা এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪ (২) ও (৩) ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
দুদক সূত্র জানায়, সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের পেইড আপ ক্যাপিটাল বাড়ানোর জন্য ২০১৮ সালে উদ্যোক্তা পরিচালকদের মধ্যে প্রতিটি শেয়ার ১০ টাকা দরে এক কোটি পাঁচ লাখ প্লেসমেন্ট শেয়ার ইস্যুর সিদ্ধান্ত নেয়। কোম্পানির পরিচালক ও প্রথম চেয়ারম্যান আসামি নূর-ই-হাফজা, পরিচালক ফৌজিয়া কামরুন তানিয়া, রূপালী ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির পরিচালক শাফিয়া সোবহান চৌধুরী এবং মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসের জামাতা শেখ মোহাম্মদ ডানিয়েলের কাছ থেকে কোনো টাকা না নিয়েই তাদের নামে মোট ৯ কোটি ১৬ লাখ ৫০ হাজার টাকার শেয়ার ইস্যু করা হয়।
মামলার প্রতিবেদনে বলা হয়, অবৈধভাবে প্রতারণা ও বিধিবহির্ভূতভাবে একই পরিবারের সাত সদস্যকে কোম্পানির বোর্ড পরিচালক করা হয়। মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসের জামাতা আসামি মীর রাশেদ বিন আমানকে কোম্পানির প্রধান অর্থ কর্মকর্তা ও ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) নিয়োগ দিয়ে অর্থ আত্মসাৎ করা হয়।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, প্রধান আসামি মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস সুপরিকল্পিতভাবে চেয়ারম্যান থাকাকালীন তার মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানে ১৪১ কোটি ৫৬ লাভ ৯০ হাজার ৫০০ টাকা প্রদান, মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস নিজে ও পরিবারের সদস্যদের নামে অবৈধভাবে বেতন হিসেবে ২ কোটি ২৪ লাখ টাকা, অন্যদিকে কোম্পানির টাকায় নিজেদের জন্য শেয়ার ইস্যু বাবদ ৯ কোটি ১৬ লাখ ৫০ টাকা, ইআরপি মেইনটেন্যান্স বাবদ ৭ কোটি ৮৫ লাখ ৬৮ হাজার ৮১৭ টাকা, অবৈধভাবে বিলাসবহুল অডি গাড়ি কেনা বাবদ ১ কোটি ৭০ লাখ টাকা, পরিবারের সদস্যদের অতিরিক্ত ডিভিডেন্ড প্রদান বাবদ ১ কোটি ৬০ লাখ ১০ হাজার ৭৫০ টাকা, বিদেশে নিজের চিকিৎসা, সন্তানের শিক্ষা, ভ্রমণব্যয় বাবদ ১ কোটি ৫৪ লাখ ৯০ হাজার ৮০০ টাকা, গ্রুপ বিমা পলিসি থেকে অবৈধ কমিশন বাবদ ১৯ লাখ টাকা, আইপিও খরচের নামে অবৈধ ব্যয় বাবদ ৮ কোটি ২৬ লাখ ৬৭ হাজার ৮৫৯ টাকা, অফিস ভাড়ার নামে নিজস্ব প্রতিষ্ঠান ড্রাগন আইটিকে প্রদান বাবদ ১১ কোটি ৯৪ লাখ ২০ টাকা, নিজ মালিকানাধীন পুরো ভবনের ইউটিলিটি বিল পরিশোধ বাবদ ১ কোটি ৭২ লাখ ৪২ হাজার ২২৩, নিজস্ব প্রতিষ্ঠান ড্রাগন সোয়েটার ও স্পিনিং লিমিটেডের ট্যাক্স পরিশোধ বাবদ ১৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকাসহ সর্বমোট ১৮৭ কোটি ৮৪ লাখ ১৫ হাজার ৯৬৬ টাকা আত্মসাৎ করেন।
মন্তব্য করুন