হাসিনার পদত্যাগের আগের ৪৮ ঘণ্টা

হাসিনা বাংলাদেশ ছাড়ার আগের রাতে সেনাপ্রধান তার জেনারেলদের সাথে বৈঠক করেন। বৈঠকে বিক্ষুব্ধ জনতার উপর সেনাদের তরফ থেকে গুলি না ছোড়ার সিদ্ধান্ত হয়। এই আলোচনা সম্পর্কে জানেন এমন দুইজন সেনা কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এই তথ্য জানিয়েছেন।

এই ঘটনার পর জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান হাসিনার কার্যালয়ে গিয়ে তার সাথে দেখা করেন। এই বিষয়ে অবগত আছেন এমন একজন ভারতীয় কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে সেনাপ্রধান জানান, সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী সেনারা কারফিউ বাস্তবায়ন করতে অপরাগতা প্রকাশ করেছে। হাসিনার প্রতি সেনাবাহিনীর আর কোনো সমর্থন নেই, এটি তখন পরিষ্কার হয়ে যায় বলে জানান ঐ কমর্কর্তা।

রয়টার্স জানিয়েছে, মোট দশজনের সাথে কথা বলে তারা হাসিনার পদত্যাগের আগের ৪৮ ঘণ্টার তথ্য নেওয়ার চেষ্টা করেছে। এরমধ্যে চারজন বর্তমান সেনা কর্মকর্তা, ঘটনা সম্পর্কে জানেন এমন দুইজন রয়েছেন। এই ব্যক্তিরা তাদের নিরাপত্তার জন্য নাম প্রকাশ করতে চাননি বলে জানিয়েছে রয়টার্স।

রয়টার্স বলছে, বৈবাহিকসূত্রে ওয়াকার-উজ-জামান হাসিনার আত্মীয় হলেও শনিবারই তিনি বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ওপর থেকে তার সমর্থন তুলে নেওয়ার আভাস দেন। সেদিন কয়েক শ’ সেনা কর্মকর্তার উদ্দেশে ওয়াকার-উজ-জামান বক্তব্য রাখেন।

আরও পড়ুন

দেশের পথে ড. মুহাম্মদ ইউনূস

মানুষের জীবন রক্ষার নির্দেশ দিয়ে কর্মকর্তাদের ধৈর্য্য বজায় রাখার আহ্বান জানান তিনি। সেনাবাহিনী সহিংস বিক্ষোভকে জোরপূর্বক দমন করবে না, প্রথমবারের মতো এই আভাস মেলে।

সেনাপ্রধান হাসিনার ওপর থেকে সমর্থন তুলে নেয়ার বিষয়টি জনসম্মুখে প্রকাশ করেননি। তবে বিক্ষোভে অন্তত ২৪১ জনের মৃত্যুর পর তার পক্ষে হাসিনাকে সমর্থন দেওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ে বলে রয়টার্সকে সাবেক তিনজন সেনা কর্মকর্তা মত দেন।

অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য কারফিউ জারির পর সোমবার হাসিনা ছিলেন গণভবনে। এক পর্যায়ে ঢাকার রাস্তায় বিক্ষোভকারীদের জনস্রোত নামে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ায় ৭৬ বছর বয়সী আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন বলে কর্মকর্তাদের বরাতে রয়টার্স জানিয়েছে।

হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানার আলোচনার পর একসাথে ভারতে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর মঙ্গলবার ভারতের পার্লামেন্টে জানান, বাংলাদেশের এই সমস্য আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে দেশটির বিভিন্ন রাজনৈতিক দলকে জুলাই থেকেই বলে আসছিল দিল্লি।

তিনি বলেন, নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর প্রধানদের সঙ্গে বৈঠকের পর হাসিনা সোমবার পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন।

তিনি জানান, খুব অল্প সময়ের মধ্যে তখন ভারতে আসার অনুমোদনের জন্য অনুরোধ জানান৷

ভারতের আরেকজন কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেন, কূটনৈতিকভাবে হাসিনাকে জানানো হয়েছিল, তার এই অবস্থান হতে হবে স্বল্প সময়ের জন্য, যাতে দিল্লির সাথে ঢাকার পরবর্তী সরকারের সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব না পড়ে। এই বিষয়ে মন্তব্যের জন্য অনুরোধ জানানো হলে রয়টার্সকে সাড়া দেয়নি ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হতে যাওয়া ড. মুহাম্মদ ইউনূস ভারতের দ্য নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন,বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের ভালো সম্পর্ক ভুল লোকজনের সাথে। দয়া করে আপনাদের বৈদেশিক নীতি পুনর্বিবেচনা করুন।

সোমবার দুপুর নাগাদ ঢাকায় বাংলাদেশ বিমানের সি১৩০ উড়োজাহাজ হাসিনাকে নিয়ে দিল্লির বাইরে হিন্ডন বিমান ঘাঁটিতে অবতরণ করে। সেখানে তিনি ভারতের নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের সাথে সাক্ষাৎ করেন।

গত ৩০ বছরের মধ্যে ২০ বছরই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন শেখ হাসিনা। গত দেড় দশকের টানা শাসনামলে হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে বিরোধী মত দমন, বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুমসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। বিরোধীদের বয়কট ও কয়েক হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করে জানুয়ারিতে চতুর্থবারের মতো ক্ষমতায় আসে তার আওয়ামী লীগ সরকার।