অন্তর্বর্তী সরকারের ৪ নারী উপদেষ্টা যেসব মন্ত্রণালয় সামলাবেন
নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত হয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) রাতে ড. ইউনূস ও ১৩ উপদেষ্টা শপথ নিয়েছেন। শুক্রবার (৯ আগস্ট) মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব বণ্টন করা হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে উপদেষ্টাদের দপ্তর বণ্টনের বিষয়টি জানানো হয়েছে।
নবগঠিত অন্তর্বর্তী সরকারে আছেন চারজন নারী। তারা হলেন- সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, শারমীন এস মুরশিদ, ফরিদা আখতার ও নুরজাহান বেগম। মোট ১৭ জনের মধ্যে সরকারে থাকা এই চার নারী উপদেষ্টা পেয়েছেন চার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান (পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়)
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান পেয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৯৩ সালে আইন বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন এবং ২০০৭ সালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আইজেনহাওয়ার ফেলোশিপ সম্পন্ন করেন। তিনি ফ্রেন্ডস অব আর্থ ইন্টারন্যাশনাল এবং আইইউসিএনের নির্বাহী সদস্য।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান পরিবেশবিষয়ক সচেতনতা সৃষ্টির স্বীকৃতি হিসেবে ২০০৭ সালে জাতীয় পরিবেশ পদক, ২০১২ সালে র্যামন ম্যাগসেসে পুরস্কার এবং প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ২০০৯ সালে ‘পরিবেশের নোবেল’ খ্যাত গোল্ডম্যান এনভায়রনমেন্টাল প্রাইজে ভূষিত হন তিনি। ২০০৯ সালে টাইম সাময়িকী তাঁকে হিরোজ অব এনভায়রনমেন্ট খেতাবে ভূষিত করে।
ফরিদা আখতার (মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়)
সরকারি সংস্থা উবিনীগের (উন্নয়ন বিকল্পের নীতি নির্ধারণী গবেষণা) নির্বাহী পরিচালক ফরিদা আখতার পেয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতিতে পড়াশোনা করেছেন। তার জন্ম চট্টগ্রাম জেলার চন্দনাইশ থানার হারলা গ্রামে। বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলের দরিদ্র মানুষের অবস্থা জানা এবং পরিবর্তনের জন্য নীতিনির্ধারণী গবেষণা ও লেখালেখিই তার কাজের প্রধান জায়গা।
বর্তমানে তিনি উবিনীগের (উন্নয়ন বিকল্পের নীতি নির্ধারণী গবেষণা) নির্বাহী পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন। তাঁর প্রকাশিত বইয়ের মধ্যে রয়েছে ‘নারী ও গাছ’, ‘কৈজুরী গ্রামের নারী’ ও ‘গাছের কথা’। তিনি নারী উন্নয়ন, স্বাস্থ্য, কৃষি, মৎস্য সম্পদ, তাঁত শিল্প, গার্মেন্টস শিল্প ও শ্রমিক, জনসংখ্যা এবং উন্নয়নমূলক বিষয়ে নিবিড়ভাবে দীর্ঘ প্রায় তিন দশক ধরে কাজ করছেন।
শারমিন মুরশিদ (সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়)
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পেয়েছেন ব্রতীর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন এস মুরশিদ। তিনি বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নির্বাচন পর্যবেক্ষণকারী হিসেবে কাজ করেছেন। তিনি হাসিনা সরকারের সময় নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার ও নানা অনিয়ম নিয়ে কথা বলেন। দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমে তার মতামত ও পরামর্শ গুরুত্বসহকারে প্রচার করা হয়। সর্বশেষ ৭ জানুয়ারি ২০২৪-এর নির্বাচন বিষয়ে আমেরিকার একটি গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি এই নির্বাচনকে নির্বাচন বলি না।’ বিষয়টি ব্যাপক আলোচিত হয়।
নূরজাহান বেগম (স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়)
নূরজাহান বেগম পেয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। তিনি নোবেল বিজয়ী প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন, যে দায়িত্ব তিনি পেয়েছিলেন ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছ থেকে। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা করেছেন।
তিনি গ্রামীণ ব্যাংকের প্রকল্প শুরুর সময় থেকে অধ্যাপক ইউনূসের প্রথম সারির সহযোগীদের একজন ছিলেন। তিনি বিভিন্ন দেশে মাইক্রো-ক্রেডিট প্রোগ্রামের পরামর্শদাতা, প্রশিক্ষক এবং মূল্যায়নকারী হিসাবে কাজ করেছেন এবং বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়, সম্মেলন এবং সেমিনারে বক্তৃতা দিয়েছেন। তিনি গ্রামীণ ফাউন্ডেশন, যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশ কয়েকটি সংস্থার বোর্ডেও দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি ২০০৭ সালে লস অ্যাঞ্জেলেসে অনুষ্ঠিত ফরচুন মোস্ট পাওয়ারফুল উইমেন সামিটে অংশগ্রহণ করেন এবং স্পেনের ভ্যালেন্সিয়ায় অনুষ্ঠিত ফাউন্ডেশন ফর জাস্টিস পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে সভাপতি নিযুক্ত হন ২০০৭ সালে।
এদিকে ড. ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম। এ ছাড়া অপর সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়াকে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
অন্যদিকে, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের দায়িত্বে থাকা ২৭টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো হলো- মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয়, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, ভূমি মন্ত্রণালয়, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয়, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, রেলপথ মন্ত্রণালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়, নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
মন্তব্য করুন