সরকারের চূড়ান্ত লক্ষ্য নির্বাচনের দিকে যাওয়া: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেছেন, সরকারের চূড়ান্ত লক্ষ্য নির্বাচনের দিকে যাওয়া। নির্বাচনের মাধ্যমে এ সরকার সরে যাবে।
রোববার (১১ আগস্ট) বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অডিটোরিয়ামে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে তিনি এ কথা বলেন। মতবিনিময়ের শুরুতে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিহতদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, বর্তমান সরকারের চূড়ান্ত লক্ষ্য, সঠিক নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তর করা। তিনি বলেন, এই সরকার বিশেষ কোনো দিকের নয়, যুক্তরাষ্ট্র-চীন-ভারত; দেশের স্বার্থ রক্ষায় সবার সঙ্গেই ভালো সম্পর্ক রাখতে চায়।
তিনি বলেন, এই মুহূর্তে একটা ‘ফায়ার ফাইটিং জব’ চলছে। স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে কিছুটা সময় লাগবে। সরকারের মেয়াদ কতদিন, তা তারপর বলা যাবে।
সাম্প্রতিক আন্দোলন ও সহিংসতায় নিহতদের তালিকার ব্যাপারে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, নিহতের প্রকৃত সংখ্যা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। প্রাথমিকভাবে ৪৫০ জনের তালিকা হয়েছে, তবে সরকারে থাকা দুই সমন্বয়কের অধীনে নির্ভুলভাবে এটা করা হবে।
উপদেষ্টা বলেন, বৈষম্যবিরোধী অন্দোলনের সমর্থনে বেশ কয়েকটি দেশে বিক্ষোভ হয়েছে। তার মধ্যে আরব আমিরাতে বেশ কয়েকজন কর্মীকে আটক করা হয়, এমনকি জেলও দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি আমরা গভীরভাবে দেখছি। তারা কিছুতেই যেন সাফার না করে সেই চেষ্টা করা হচ্ছে। আশা করছি আজ বা কালকের মধ্যেই প্রধান উপদেষ্টা নিজে কথা বলবেন তাদের ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে। যাতে করে তারা সহায়তা পেতে পারে। অন্তত কোনো শাস্তি ছাড়া তাদের যেন মুক্তি দেওয়া হয়। তারপর বাকিটুকু না হয় আমরা সহায়তা করার চেষ্টা করলাম। তিনি (ড. ইউনূস) নিজেই উচ্চপর্যায়ে কথা বলবেন, চেষ্টা করবেন তাদের যেন শাস্তির সম্মুখীন হতে না হয়।
তৌহিদ হোসেন বলেন, তারা হয়তো স্থানীয় আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়েছে। সে কারণে আমরা সেই দেশকে দোষারোপ করতে পারি না। তাদের যে আইন আছে সে অনুযায়ী তারা ব্যবস্থা নিয়েছে। কিন্তু তাদের (প্রবাসী) সেন্টিমেন্ট যেটার কারণে তারা এটার পক্ষে এসেছে তখন তারা হয়তো সেই আইন-কানুনও ভুলে গেছে অনেকে। আমরা চেষ্টা করব, তাদের যেন মুক্ত করতে পারি।
দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি তুলে ধরে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘ব্যবসা-বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, এটা অস্বীকারের কিছু নেই। একজন যোগ্য ব্যক্তি অর্থনীতির দায়িত্ব পেয়েছেন। তিনি প্রচণ্ডভাবে লেগেছেন। আশা করা যায় ১ থেকে ২ মাসে স্ট্রিমলাইনে নিয়ে আসবেন।’
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘আপনারা জানেন গভর্নর বাংলাদেশ ব্যাংক পদত্যাগ করেছেন। তার স্থলে নিয়োগ দিতে যোগ্য মানুষ খোঁজা হচ্ছে। এমন মানুষ পাওয়া খুব মুশকিল হয়ে গেছে। আমরা চেষ্টা করছি গভর্নর নিয়োগ দেওয়া যায় কিনা। ডেপুটি গভর্নর নিয়োগেরও চেষ্টা করছি।’
তৌহিদ বলেন, আইন শৃঙ্খলার দায়িত্বে যিনি আছেন, তিনি আজ সারাদেন ব্যস্ত ছিলেন। পরিস্থিতির কিছু উন্নতি হয়ত আমরা ১ থেকে ২ দিনের মধ্যে দেখতে পাব। একজন বিদেশি সাংবাদিক আমার কাছে জানতে চেয়েছিলেন, শিক্ষার্থীরা ঘরে ফিরবে কিনা। অবশ্যই তারা ফিরবেন, এটা যাদের কাজ, তারা যখন ফিরবেন তখন শিক্ষার্থীরাও ফিরে যাবে।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও বলেন, সংখ্যালঘুদের ওপর কিছু আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে। তবে অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে রাজনৈতিক কারণেও ঘটেছে। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। হয়তো আগামীকালই সংখ্যালঘু নেতাদের সঙ্গে বৈঠক বসবেন প্রধান উপদেষ্টা। কোনো ধর্মীয় কারও ওপর নির্যাতন হলে তার তদন্ত ও বিচার সুনিশ্চিত করা হবে। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া হবে না।
মন্তব্য করুন