যুক্তরাষ্ট্রকে সেন্টমার্টিন দেওয়ার অঙ্গীকার করিনি: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বাংলাদেশের কোনো অংশ তুলে দেওয়ার অঙ্গীকার অন্তর্বর্তী সরকার করেনি।
রোববার (১১ আগস্ট) বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অডিটোরিয়ামে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে তিনি এ কথা বলেন। মতবিনিময়ের শুরুতে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিহতদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
গত কয়েক দিন ধরে ভারতের গণমাধ্যমে প্রচার করা বাংলাদেশ সংক্রান্ত একটি সংবাদ তুলে ধরা হয় পররাষ্ট্র উপদেষ্টার কাছে। দ্য প্রিন্টের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অভিযোগ করেছেন, ‘আমি যদি যুক্তরাষ্ট্রের হাতে সেন্টমার্টিন ও বঙ্গোপসাগর ছেড়ে দিতাম, তাহলে ক্ষমতায় থাকতে পারতাম’।
এ সংক্রান্ত কোনো অঙ্গীকার করে এসেছেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘আমি শুধু এটুকু বলতে পারি, আমি এ রকম কোনো অঙ্গীকার করিনি। আর আমার খুব সন্দেহ যে, রাস্তার ছাত্ররা এই অঙ্গীকার করেছে আমেরিকার কাছে। খুবই আনলাইক।
শেখ হাসিনার পদত্যাগ প্রশ্নে পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা বলেন, আমি যেটুকু জানি সেটুকু আপনাদের বলছি। উপদেষ্টাদের যে বৈঠক হয়েছে সেখানে বলা হয়েছে, তিনি পদত্যাগ করেছেন এবং পদত্যাগপত্র রাষ্ট্রপতির কাছে আছে। এটুকু তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে। তারপরে বাকিটুকু আমি বলতে পারব না।
সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন করা হয়, বৈষম্যবিরোধী অন্দোলনের সমর্থনে বেশ কয়েকটি দেশে বিক্ষোভ হয়েছে। তার মধ্যে আরব আমিরাতে বেশ কয়েকজন কর্মীকে আটক করা হয়, এমনকি জেলও দেওয়া হয়েছে।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, বিষয়টি আমরা গভীরভাবে দেখছি। তারা কিছুতেই যেন সাফার না করে সেই চেষ্টা করা হচ্ছে। আশা করছি আজ বা কালকের মধ্যেই প্রধান উপদেষ্টা নিজে কথা বলবেন তাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে। যাতে করে তারা সহায়তা পেতে পারেন।
তিনি বলেন, তারা হয়তো স্থানীয় আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়েছে। সে কারণে আমরা সেই দেশকে দোষারোপ করতে পারি না। তাদের যে আইন আছে সে অনুযায়ী তারা ব্যবস্থা নিয়েছে। কিন্তু তাদের (প্রবাসী) সেন্টিমেন্ট যেটার কারণে তারা এটার পক্ষে এসেছে তখন তারা হয়তো সেই আইন-কানুনও ভুলে গেছে অনেকে। আমরা চেষ্টা করবো তাদের যেন মুক্ত করতে পারি।
তিনি আরও বলেন, বিদেশে বাংলাদেশি শ্রমিকদের পারিশ্রমিক বাড়ানোর বিষয়েও পদক্ষেপ নেবে এই সরকার।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, বর্তমান সরকারের চূড়ান্ত লক্ষ্য, সঠিক নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তর করা। এই সরকার বিশেষ কোনো দিকের নয়, যুক্তরাষ্ট্র-চীন-ভারত; দেশের স্বার্থ রক্ষায় সবার সঙ্গেই ভালো সম্পর্ক রাখতে চায়।
তিনি বলেন, এই মুহূর্তে একটা ‘ফায়ার ফাইটিং জব’ চলছে। স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে কিছুটা সময় লাগবে। সরকারের মেয়াদ কতদিন, তা তারপর বলা যাবে।
সাম্প্রতিক আন্দোলন ও সহিংসতায় নিহতদের তালিকার ব্যাপারে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, নিহতের প্রকৃত সংখ্যা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। প্রাথমিকভাবে ৪৫০ জনের তালিকা হয়েছে, তবে সরকারে থাকা দুই সমন্বয়কের অধীনে নির্ভুলভাবে এটা করা হবে।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও বলেন, সংখ্যালঘুদের ওপর কিছু আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে। তবে অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে রাজনৈতিক কারণেও ঘটেছে। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। হয়তো আগামীকালই সংখ্যালঘু নেতাদের সঙ্গে বৈঠক বসবেন প্রধান উপদেষ্টা। কোনো ধর্মীয় কারও ওপর নির্যাতন হলে তার তদন্ত ও বিচার সুনিশ্চিত করা হবে। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া হবে না।
মন্তব্য করুন