ঋত্বিক ঘটকের বাড়ি ভাঙায় বিবর্তন সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের ক্ষোভ
রাজশাহীর মিয়াপাড়ায় অবস্থিত বিশ্ববরেণ্য চলচ্চিত্রকার ঋত্বিক কুমার ঘটকের স্মৃতিবিজড়িত বাড়ি ভেঙে ফেলার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বিবর্তন সাংস্কৃতিক কেন্দ্র।
বৃহস্পতিবার (১৫ আগস্ট) সংগঠনটির সভাপতি এ এস এম কামাল উদ্দিন এবং সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান লালটু এক বিবৃতিতে এ ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
এতে বলা হয়, গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে আমরা জানতে পেরেছি, গত ৬ ও ৭ আগস্ট ঋত্বিক ঘটকের বাড়ি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। বাড়ির কিছু অংশ এখনও ভাঙার কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। বাড়ি ভাঙার কাজে যুক্ত ঠিকাদার গণমাধ্যমকে জানিয়েছে, পার্শ্ববর্তী হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষের নির্দেশে তারা বাড়িটি ভাঙতে শুরু করেন।
‘দেশবিভাগের পূর্বে ঋত্বিক ঘটক এই বাড়িতেই বেড়ে উঠেছেন। এখানে থাকাকালীন তিনি রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুল এবং রাজশাহী কলেজে পড়াশোনা করেছেন এবং রাজশাহীর সাহিত্য ও নাট্য আন্দোলনে যুক্ত হয়েছেন। ‘অভিধারা’ নামক একটি সাহিত্য পত্রিকা সম্পাদনা করেন রাজশাহী থেকেই। এই বাড়িটি শুধু ঋত্বিক ঘটকেরই নয় উপমহাদেশের বরেণ্য কথাশিল্পী মহাশ্বেতা দেবীরও স্মৃতি বিজড়িত। উল্লেখ্য ১৯৮৯ সালে স্বৈরাচার এরশাদ সরকার এই বাড়ির পুরো জমি রাজশাহী হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালকে ইজারা দেয়। এর ফলে ঋত্বিক ঘটকের বাড়িটি কোন ঐতিহাসিক জায়গা হিসেবে সংরক্ষণের বদলে মেডিকেল কলেজের ইনডোর এবং আউটডোর হিসেবে ব্যবহৃত হওয়া শুরু করে।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ২০১৯ সালে আওয়ামী শাসনামলে গায়ের জোরে হোমিওপ্যাথি কলেজ কর্তৃপক্ষ বাড়িটির একাংশ ভেঙে গ্যারেজ তৈরি করলে এর বিরুদ্ধে দেশজুড়ে প্রতিবাদ উঠলে বাড়িটি সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয় রাজশাহী জেলা প্রশাসক। কিন্তু গত ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে স্বৈরশাসক হাসিনা সরকারের পতন ঘটলে সেনাপ্রধান জনগণের নিরাপত্তার দায়িত্ব নেয়। কিন্তু সেনাপ্রধান দায়িত্ব নেওয়ার পরেও সারাদেশে অস্থিরতা, জনমনে অতঙ্ক, ভয়-ভীতির, লুটপাটের নানা ঘটনা, বিভিন্ন ধর্ম জাতি গোষ্ঠীর মধ্যে অস্থিরতা এবং এই সংক্রান্ত নানামূখী মিথ্যা প্রপাগাণ্ডায় দেশব্যাপী থমথমে অবস্থা বিরাজ করতে থাকে।’
বিবর্তন সাংস্কৃতিক কেন্দ্র জানায়, আমরা দেখেছি যে, এই পরিস্থিতি নিরসনের জন্য সেনাবাহিনী প্রধান কোনো পদক্ষেপ নেয়নি, বরং পুলিশ, বিজিবি, র্যাবসহ সকল আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী নিজেদের দায়িত্ব পালন না করে নিরাপদ দর্শকের ভুমিকা পালন করেছে। সেনাপ্রধানের অকার্যকর ভুমিকা, দায়িত্বরত জেলা প্রশাসকের অবহেলা এবং আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর অনুপস্থিতির সুযোগ নিয়ে রাজশাহী হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ ঋত্বিক ঘটকের বাড়িটি ভেঙে ফেলে এবং তাদের সাবেক শিক্ষার্থীর উপর দায় চাপায়।
আমরা বলতে চাই যে, এই বাড়ি ভাঙার পুরো দায় জেলা প্রশাসকের। কারণ বাড়িটি ঐতিহাসিক স্থান হিসেবে সংরক্ষণের দায়িত্ব ও কর্তব্যের ভারটি জেলা প্রশাসকের উপরেই ন্যস্ত ছিল। কিন্তু আওয়ামী সরকার পতনের পরেই তিনি কেন তার দায়িত্বে অবহেলা করে এই বাড়িটিকে অরক্ষিত রাখলেন এই প্রশ্নের উত্তর তাকে দিতে হবে। এই বাড়িটি ভাঙ্গার সঙ্গে জড়িত সকলকে আইনের আওতায় এনে সুষ্ঠূ তদন্ত করে বিচার করতে হবে। ঋত্বিক ঘটকের এই স্মৃতিবিজড়িত বাড়ি পুনঃনির্মাণের দাবি জানাচ্ছি আমরা।
এ সময় ছাত্র-জনতার রক্তক্ষয়ী গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী এই বাংলাদেশে দলীয়ভাবে ভুমি দখলের রাজনীতি থেকে বের হয়ে ঐতিহাসিক জায়গাগুলো সংরক্ষণের আহ্বান জানায় সংগঠনটি।
মন্তব্য করুন