এবারের বন্যার কারণ ও স্বাস্থ্যঝুঁকিতে করণীয়
টানা ভারী বর্ষণ এবং ভারত থেকে আসা পানিতে দেশের ১৩টি জেলায় স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। কহুয়া, মুহুরী ও সিলোনিয়া নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবল বেগে প্রবাহিত হয়ে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের স্থল দিয়ে প্রবেশ করছে। ফলে প্লাবিত হচ্ছে একের পর এক জনপদ।
এবারের বন্যার কারণ
প্রতি মাসের শুরুতে আবহাওয়া অধিদপ্তর ওই মাসের আবহাওয়া পরিস্থিতির দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাস দেয়। চলতি মাসের শুরুতে সেই পূর্বাভাসে বলা হয়েছিল, এ মাসে দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-মধ্যাঞ্চল এবং দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে স্বল্পমেয়াদি বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে অতিবৃষ্টির কারণেই এ বন্যা হবে বলে জানানো হয়েছিল। এরমধ্যে এখন উত্তর-মধ্যাঞ্চলের মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া এবং দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের কুমিল্লা, ফেনী, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে।
শুক্রবার (২৩ আগস্ট) প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সব মিলিয়ে এখন দেশের ১৩টি জেলা বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। এসব জেলা হলো ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, লক্ষ্মীপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কক্সবাজার, খাগড়াছড়ি, চট্টগ্রাম, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, রাঙ্গামাটি, কক্সবাজার ও সিলেট।
বন্যার কারণ ও স্বাস্থ্যঝুঁকিতে করণীয়
অপুষ্টি: বানভাসি জনগণ বিশেষত দরিদ্র পরিবারের শিশুরা দীর্ঘমেয়াদি অপুষ্টির মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়ে নিরাপদ পানীয়র অভাব এবং স্বাস্থ্যসম্মত পুষ্টিকর খাবারের স্বল্পতার জন্য।
পানিবাহিত রোগ: খাবার পানির উৎসগুলোকে বন্যার দূষিত পানি ও সংক্রমিত করে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় স্যানিটারি টয়লেটগুলোও। প্রাণঘাতী টাইফয়েড, কলেরা, হেপাটাইটিস রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণু দূষিত পানিতে ছড়িয়ে পড়ে। পানিবাহিত রোগব্যাধির প্রাদুর্ভাব বাড়ে অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে খাবার গ্রহণ, অপরিষ্কার হাত বা নোংরা প্লেট, জীবাণুবাহক পোকামাকড় ও মশা-মাছির কারণে ।
অস্বাস্থ্যকর পানি ও খাবার: বিভিন্ন ধরনের ময়লা, মানব ও প্রাণিজ বর্জ্য এবং খামার ও শিল্প এলাকার রাসায়নিকগুলো বন্যার পানিতে মিশে যায়। ফলে কৃষিজমিগুলোয় খাদ্যশস্য নষ্ট হয়ে যায়। বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় হিমায়িত সঞ্চিত খাদ্যও।
মশা, প্রাণী ও সাপের প্রকোপ: আর্দ্র অঞ্চল এবং আবদ্ধ জলাশয়ের সৃষ্টি হয় দীর্ঘায়িত বৃষ্টিপাত এবং বন্যার কারণে, যা কাজ করে মশার প্রজনন ক্ষেত্র হিসাবে । এতে বেড়ে যায় ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু এবং চিকুনগুনিয়ার মতো মশাবাহিত রোগের সংখ্যা। বন্যার পানিতে নিজেদের আবাসস্থল থেকে সাপ খোলাখুলি বাইরে আসতে বাধ্য হয়। শুকনো জায়গার সন্ধানে সাপগুলো তখন মানুষের কাছাকাছি চলে আসে। ফলে বন্যার পরে বেড়ে যায় সাপে কামড়ানোর ঘটনা। এ ছাড়া ইঁদুর, বন্যপ্রাণী ইত্যাদির জন্য ঝুঁকি থাকে বিভিন্ন ধরনের রোগ সংক্রমণের।
বন্যার পানিতে ডুবে মৃত্যু: পানিতে ডুবে মৃত্যুর ঘটনা ঘটে বন্যার সময়ে। অসাবধানতার কারণে এক্ষেত্রে শিশুরাই বেশি ভুক্তভোগী হয়।
ফাঙ্গাসের সংক্রমণ: বন্যার আর্দ্র আবহাওয়ায় বংশবিস্তার ঘটে ফাঙ্গাসের। ফলে, অ্যালার্জি এবং হাঁপানিতে আক্রান্তদের বেড়ে যায় শ্বাসতন্ত্রের প্রদাহজনিত রোগের মাত্রা। এ ছাড়া বিভিন্ন ধরনের ত্বকের সংক্রমণ যেমন– দাউদ, খোস-পাঁচড়া, চুলকানিসহ নানা ধরনের চর্মরোগের বিস্তার ঘটতে পারে ময়লা পানিতে নেমে, দৈনন্দিনের প্রয়োজনীয় কাজ করতে গিয়ে।
এ ছাড়াও সবাই সাধারণত যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের পর ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘর এবং সম্পত্তির পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও মেরামতে বেশি মনোযোগী ও ব্যস্ত হয়ে পড়ে, যা ভুক্তভোগীদের মানসিক চাপ ও উদ্বেগ বাড়িয়ে দেয়।
মন্তব্য করুন