• ঢাকা শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
logo

২০২৪ সালে বিতর্কিত নির্বাচন হয়েছে: সিইসি

আরটিভি নিউজ

  ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৩:১০
কাজী হাবিবুল আউয়াল
ছবি: সংগৃহীত

২০২৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিতর্কিত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন সদ্য বিদায়ী প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল।

বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১২টায় নির্বাচন কমিশনে সংবাদ সম্মেলনে আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগের ঘোষণা দেওয়ার সময় তিনি এ মন্তব্য করেন।

কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‌২০২৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিতর্কিত হয়েছে। ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি নির্বাচনে ব্যক্তির মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে, দলের সঙ্গে নয়। সম্প্রতি ভেঙে দেওয়া সংসদের ২৯৯টি আসনে নির্বাচন প্রার্থীদের মধ্যে ব্যক্তিকেন্দ্রিক প্রতিযোগিতার মাধ্যমে হয়েছে, দলের মধ্যে নয়। ২৯৯ আসনে এক হাজার ৯৬৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। ২০২৪ সালে একদলীয় নির্বাচন হওয়ার কারণে কারচুপি বা সরকারিভাবে প্রভাবিত করার প্রয়োজনও ছিল না। নির্বাচন এক দলের ভেতরেই হয়েছে। বহুদলের মধ্যে হয়নি। ভোটের পর বিজয়ী পেয়েছি। ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়েছে বর্তমান কমিশনের অধীনে। ৪৪টি নিবন্ধিত দলের মধ্যে ২৮টি দল নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করলেও প্রধানতম বিরোধী দল বিএনপি ও সমমনা দলগুলো সেই নির্বাচন প্রত্যাখান করে। নির্বাচন অন্তর্ভুক্তিমূলক হয়নি। কমিশন বিএনপিসহ সমমনা দলগুলোকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য একাধিকবার আহ্বান করা সত্ত্বেও তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি। নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা না করার বিষয়টি দলের নিজস্ব সিদ্ধান্তের বিষয়।

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, দেশের প্রথম সাংবিধানিক সাধারণ নির্বাচন ১৯৭৩ সালে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সেই নির্বাচন নিয়েও বিতর্ক ছিল। ১৯৭৯ ও ১৯৮৭ সালের সাধারণ নির্বাচন সামরিক শাসনামলে হয়েছে। ফলাফল নিয়েও বিতর্ক ছিল। ১৯৯১ এর নির্বাচন সম্মত রাজনৈতিক রূপরেখার ভিত্তিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হয়েছিল। ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের নির্বাচন সাংবিধানিক নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে, সুক্ষ্ম বা কারচুপির সীমিত সমালোচনা সত্ত্বেও সার্বিকভাবে গ্রহণযোগ্য হয়েছিল।

তিনি আরও বলেন. ২০০৮ সালের নির্বাচন সেনাসমর্থিত নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেই নির্বাচনে বিএনপি সংসদে মাত্র ২৭টি এবং আওয়ামী লীগ ২৩০টি আসন পেয়েছিল। নির্বাচন বিতর্কের ঊর্ধ্বে ছিল না। নিরাপদ প্রস্থানের বিষয়ে বিএনপি এবং আওয়ামী লীগের সঙ্গে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দরকষাকষির বিষয়টি প্রকাশ্য ছিল। সে প্রশ্নে বিএনপি এবং আওয়ামী লীগের অবস্থানও গোপন ছিল না। ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালের নির্বাচন সংবিধান মতে দলীয় সরকারের অধীনে হয়েছে।

কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিএনপিসহ অনেক দলই অংশগ্রহণ করেনি। ফলে সেই নির্বাচনও ২০২৪ সালের অনুরূপ অন্তর্ভুক্তিমূলক ছিল না। ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করে আসন পেয়েছিল মাত্র ছয়টি। পক্ষান্তরে আওয়ামী লীগ পেয়েছিল ২৫৮টি। এটা নিয়ে মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন। নির্বাচন স্থগিত বা বাতিল করে দেওয়ার মতো কোনো সাংবিধানিক ভিত্তি ছিল না। সেই কারণে অনেকেই কমিশনকে দোষারোপ করছেন। নির্বাচন কখন কী কারণে কতদিনের জন্য স্থগিত করা যাবে, তাও সংবিধানে সুষ্পষ্টভাবে উল্লেখ করা আছে।

তিনি বলেন, অতীতে কখনোই কোনো কমিশন নির্বাচন বাতিল করে দিয়ে পদত্যাগ করেনি। নির্বাচন নিষ্পন্ন করা অতিশয় কঠিন একটি কর্মযজ্ঞ। নির্বাচন গ্রহণযোগ্য না হওয়ার সব দোষ বা দায়-দায়িত্ব সবসময় কেবল নির্বাচন কমিশনের ওপর এককভাবে আরোপ করা হয়ে থাকে। একটি কমিশন না হয় অসৎ বা পক্ষপাতদুষ্ট হতে পারে। কিন্তু সবসময় সব কমিশনই অসৎ বা পক্ষপাতদুষ্ট হতে পারে না। কমিশন বিভিন্ন কারণে নির্ভেজাল গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে অক্ষম বা অসমর্থ হতে পারে। বিদ্যমান ব্যবস্থায়, আমাদের বিশ্বাস, কেবল কমিশনের পুনর্বিন্যাসের মাধ্যমে অবাধ, নিরপেক্ষ, কালো টাকা ও পেশিশক্তি-বিবর্জিত এবং প্রশাসন-পুলিশের প্রভাবমুক্ত নির্বাচন নিশ্চিত করা যাবে না। নির্বাচন পদ্ধতিতে দুর্ভেদ্য মৌলিক সংস্কার প্রয়োজন হবে। রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও আচরণে এবং বিশেষত প্রার্থীদের আচরণে পরিবর্তন প্রয়োজন হবে।

তিনি আরও বলেন, নির্বাচন কমিশন দায়িত্বগ্রহণের পর থেকে দুই বছর সময়ে ইউনিয়ন পরিষদের ৯৯২টি, উপজেলা পরিষদের ৪৯৬টি, জেলা পরিষদের ৭১টি, পৌরসভার ৯০টি এবং সিটি কর্পোরেশনের ১৬টি নির্বাচন করেছে। নির্বাচনগুলোর সততা, সিদ্ধতা, নিরপেক্ষতা অবাধ-হওয়া নিয়ে অতীতের ন্যায় ব্যাপক বিতর্ক বা সমালোচনা হয়নি। উপ-নির্বাচনসহ জাতীয় সংসদের মোট ৩১৮টি আসনে কমিশন নির্বাচন করেছে। দলীয়ভাবে ইনক্লুসিভ না হওয়ার কারণে নির্বাচন বিতর্কিত হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের ৫৩ বছরের ইতিহাসে কোনো নির্বাচন কমিশন সংবিধান উপেক্ষা করে স্বেচ্ছায় নির্বাচন বাতিল করে দিয়ে পদত্যাগ করেছে এবং সেই কারণে নির্বাচন হয়নি এমন উদাহরণ নেই। সরকার বারবার বলছেন ব্যাপক সংস্কারের মাধ্যমে নির্বাচন ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে। নির্বাচন বারবার ব্যর্থ হওয়ার প্রকৃত সত্য ও কারণ এই কথাটির মধ্যেই নিহিত।

সংবাদ সম্মেলনে পদত্যাগের ঘোষণা দেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন। সংবাদ সম্মেলন শেষে ইসি সদস্যরা রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করতে যাবেন বলেও জানা গেছে।

ছাত্র-জনতার গণ-আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার গঠন হয়। এরপর থেকে কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশনের পদত্যাগের দাবি ওঠে। নির্বাচন কমিশনের সদস্যরাও মনে করছিলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে তাদের পদ ছাড়তেই হবে। তাই পদত্যাগের জন্য মানসিক প্রস্তুতিও নিয়ে রেখেছিলেন বলেও বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।

তবে নিজেরাই পদত্যাগ করবেন, নাকি এ নিয়ে সরকারের কোনো পরিকল্পনা আছে তা বোঝার চেষ্টায় ছিলেন এতদিন। এ বিষয়ে পরামর্শের জন্য ইসি সদস্যরা রাষ্ট্রপতি ও অন্তর্বর্তী সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও সফল হননি বলে জানা গেছে। এ অবস্থায় বৃহস্পতিবার পদত্যাগ করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালসহ পাঁচ কমিশনার।

উল্লেখ্য, ২০২২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি শপথ নেয় কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশন। এই কমিশনের মেয়াদ ছিল পাঁচ বছর। এই কমিশনের আমলে গত জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনও বর্জন করে বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল। শুধু আওয়ামী লীগ ও তাদের মিত্র দলগুলো ওই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে।

মন্তব্য করুন

Bangal
rtv Drama
Radhuni
  • বাংলাদেশ এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
দেশে নির্বিঘ্ন নির্বাচন উপহার দেওয়াই বড় চ্যালেঞ্জ: নতুন সিইসি 
নতুন সিইসি কে এই নাসির উদ্দীন
অবসরপ্রাপ্ত সচিব নাসির উদ্দীনকে সিইসি নিয়োগ
মনোনয়ন বাণিজ্য বন্ধ ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন অসম্ভব: সাবেক সিইসি রউফ