ভারতে হাসিনাকে চুপ থাকতে হবে: ড. ইউনূস
বাংলাদেশে প্রত্যর্পণ না করা পর্যন্ত শেখ হাসিনাকে ভারতে চুপ থাকতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর ) ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদ সংস্থা প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়াকে (পিটিআই) দেওয়া প্রধান উপদেষ্টার একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়েছে। গত রোববার ড. ইউনূস ঢাকায় তার সরকারি বাসভবনে এই সাক্ষাৎকার দেন।
ড. ইউনূস বলেন, ‘শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে বাংলাদেশ অনুরোধ না করা পর্যন্ত ভারত যদি তাকে নিজের দেশে রাখতে চায়, তাহলে তাকে (হাসিনাকে) চুপ থাকতে হবে। ভারতে তার অবস্থান নিয়ে কেউ স্বস্তিতে নেই। বিচারের জন্য তাকে আমরা ফিরিয়ে আনতে চাই। তিনি ভারতে আছেন এবং মাঝে-মধ্যেই কথা বলছেন। এটি সমস্যাজনক।’
তিনি বলেন, ‘তিনি (শেখ হাসিনা) যদি চুপ থাকতেন, তাহলে আমরা তা ভুলে যেতাম। তিনি নিজের জগত নিয়ে থাকলে মানুষও তা ভুলে যেত। কিন্তু তিনি ভারতে বসে কথা বলে যাচ্ছেন এবং নির্দেশনা দিচ্ছেন। এটা কেউ পছন্দ করছে না।’
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আনতে হবে। না হলে বাংলাদেশের মানুষ শান্তি পাবে না। যে নৃশংসতা তিনি দেখিয়েছেন তার সমাধান বিচারের মাধ্যমেই হতে হবে।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘ভারতে বসে শেখ হাসিনার করা বিভিন্ন রাজনৈতিক মন্তব্য অবন্ধুসুলভ আচরণ, যা দুই দেশেই অস্বস্তি তৈরি করছে।’
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘ভারতের সাথে শক্তিশালী সম্পর্ককে বাংলাদেশ সম্মান করে এবং এই কারণে নয়াদিল্লিকে অবশ্যই এমন ধারণার বাইরে যেতে হবে যেটাতে আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য সব রাজনৈতিক দলকে ইসলামপন্থি হিসেবে চিত্রিত করে এবং শেখ হাসিনা ছাড়া দেশ আফগানিস্তানে পরিণত হবে বলে মনে করা হয়।’
শেখ হাসিনার চুপ থাকার বিষয়ে বাংলাদেশ তার অবস্থান ভারতের কাছে জানিয়ে দিয়েছে কি না জানতে চাইলে ড. ইউনূস বলেন, ‘মৌখিকভাবে এবং বেশ দৃঢ়ভাবে জানানো হয়েছে যে, তার চুপ থাকা উচিত।’
বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নিয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নিতে ভারতকে নিজেদের আখ্যান থেকে বেরিয়ে আসা। আখ্যানটি হলো– (বাংলাদেশে) সবাই ইসলামপন্থি, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ইসলামপন্থি, বাকি সবাই ইসলামপন্থি এবং এই দেশকে তারা আফগানিস্তানে পরিণত করবে। আর শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ নিরাপদ থাকবে। এই আখ্যানে ভারত বিমোহিত। ভারতকে এই আখ্যান থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও তাদের আরেকটি প্রতিবেশী।’
তিনি বলেন, ‘উভয় দেশকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে এবং এটা (দুই দেশের সম্পর্ক) বর্তমানে নিচের দিকে যাচ্ছে। আমাদের এই সম্পর্ক উন্নত করতে একসঙ্গে কাজ করতে হবে, যা এখন নিম্নপর্যায়ে রয়েছে।’
ভারতের সাথে দ্বিপাক্ষিক চুক্তির ভবিষ্যৎ সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে ড. ইউনূস বলেন, ‘ট্রানজিট এবং আদানি বিদ্যুৎ চুক্তির মতো কিছু চুক্তির পুনর্বিবেচনার বিষয়ে দাবি রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘সবাই বলছে এটা (চুক্তির পুনর্বিবেচনা) দরকার। আমরা দেখব (চুক্তির) কাগজে কী আছে এবং দ্বিতীয়ত, বাস্তবে আসলে কী ঘটছে। আমি এটা নির্দিষ্টভাবে উত্তর দিতে পারি না। যদি পর্যালোচনা করার প্রয়োজন হয়, তাহলে আমরা এটা সম্পর্কে প্রশ্ন উত্থাপন করব।’
মন্তব্য করুন