মেরুদণ্ডে আটকে থাকা বুলেট নিয়ে জীবন-মৃত্যুর হিসেব কষছেন শাকিল
গত জুলাই এবং আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অনেকে যেমন মারা গেছেন, আহতও হয়েছেন কয়েক হাজার। এদের কেউ গুলিতে চোখ হারিয়েছেন, কেউ পা হারিয়েছেন আবার কেউ শরীরে বুলেট নিয়েই বেঁচে আছেন। তাদের পরিবারও আছে দুর্দশার মধ্যে। আহতদের কেউ হাসপাতাল ছেড়েছেন। আবার এক মাস পরও সুস্থ না হওয়ায় অনেকের ঠিকানা হয়েছে হাসপাতাল।
তাদের মধ্যে একজন গাজীপুরের শাকিল আহমেদ। মেরুদণ্ডের হাড়ে আটকে থাকা সেই বুলেট নিয়েই এখন জীবন-মৃত্যুর হিসেব কষছেন তিনি।
মো. শাকিল আহমেদ বলেন, ‘গাজীপুর মাওনার মোড়ে আমরা মিছিলে ছিলাম। সেখানে হঠাৎ করে বিজিবি গুলি ছোড়ে। এর একটা বুলেট এসে লাগে আমার কোমরে। এত জোরে ধাক্কা লাগে যে আমি মাটিতে পড়ে যাই। আমার ওপর দিয়েই মানুষ পালাতে থাকে। এতো রক্ত বের হয় যে থামানো যাচ্ছিল না।’
তিনি বলেন, ‘যখন দেখি যে বুলেট, আমি তো আতঙ্কে পইড়া গেছি। মেরুদণ্ডের এমন জায়গায় বুলেটটা আটকায়া আছে, আমি মনে হয় আর বাঁচবো না। তখন সবার আগে আমার বাচ্চাটার কথা মনে পড়তেছিল। আমার কিছু হলে বাচ্চাটা তো এতিম হয়ে যাবে।’
শাকিল পরে চিকিৎসা নেন বিএসএমএমইউতে এবং পরে সিএমএইচএ। কিন্তু সবখানেই জানানো হয়, এই বুলেট বের করা যাবে না।
তিনি বলেন, ‘মেরুদণ্ডে এমনভাবে আটকাইছে বুলেটটা যে এটা বের করতে গেলে আমি মারা যাইতে পারি। অথবা পেছনের অংশটা প্যারালাইসিস হয়ে যেতে পারে। সব হাসপাতাল এইটাই বলছে। যেভাবে আছে সেভাবেই রাখতে হবে আপাতত। আর এটার চিকিৎসা নিতে হলে দেশের বাইরে যেতে হবে। কিন্তু সেটা তো আমার পক্ষে সম্ভব না। আমার সেই সামর্থ্য নাই।’
শরীরে বুলেট নিয়ে শাকিল ঠিকমতো হাঁটতে পারেন না। গাড়িচালকের চাকরিও ছেড়েছেন। শুধু তার জীবন নয়, বাবা-মাসহ ৬ সদস্যের সংসারের ভবিষতও এখন অনিশ্চিত।
শাকিল আহমেদ বলেন, ‘বুলেটটা তো বের করা যাচ্ছে না। বুলেট নিয়ে আমি কতদিন থাকবো? এটা তো বের করতে হবে। কারণ, এটা তো একটা লোহা। এটা জং ধরতে পারে। গানপাউডার থাকতে পারে। সেখান থেকে ইনফেকশন হইতে পারে। আজকে না হলেও কিছুদিন পর তো সেটা হইতেই পারে। আমি গাড়ি চালায় যে টাকা ইনকাম করি, সেটা দিয়েই আমার ছোট ভাইয়ের লেখা-পড়া, বাবা-মা এবং আমার নিজের সংসার চলে। এখন তো আমি অচল। কাজ নাই, আয় নাই। আমার সংসারের কী হবে? আমি কি বাঁচতে পারবো?’
তিনি আশা করছেন, তার উন্নত চিকিৎসার জন্য যেন সবাই এগিয়ে আসে।
সূত্র: বিবিসি
মন্তব্য করুন