মুক্তি পাচ্ছেন শীর্ষ সন্ত্রাসীরা, আন্ডারওয়ার্ল্ড নিয়ে নতুন শঙ্কা
একের পর এক কারাগার থেকে বেরিয়ে আসছেন ঢাকার শীর্ষ সন্ত্রাসীরা। এরই মধ্যে ৬ জন জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। যাদের বেশির ভাগই এক থেকে দেড় যুগের বেশি সময় ধরে কারাগারে ছিলেন। রয়েছে হত্যাসহ ডজনের বেশি মামলা। এতে উদ্বিগ্ন অপরাধ বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, শীর্ষ সন্ত্রাসীরা কারাগারে থেকেই ঢাকার অপরাধজগৎ নিয়ন্ত্রণ করতেন। এখন তারা আবার বেপরোয়া হয়ে উঠতে পারেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
অবশ্য, কারা কর্তৃপক্ষের দাবি—নিয়ম মেনেই ছাড়া পাচ্ছেন আসামিরা।
ইতোমধ্যে জামিনে মুক্ত হওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসীদের মধ্যে আছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর খাতায় ‘কিলার আব্বাস’ হিসেবে পরিচিত মিরপুরের আব্বাস আলী, তেজগাঁওয়ের শেখ মোহাম্মদ আসলাম ওরফে সুইডেন আসলাম, মোহাম্মদপুরের ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলাল, হাজারীবাগ এলাকার সানজিদুল ইসলাম ওরফে ইমন। এ ছাড়া ঢাকার অপরাধজগতের আরও দুই নাম খন্দকার নাঈম আহমেদ ওরফে টিটন ও খোরশেদ আলম ওরফে রাসু ওরফে ফ্রিডম রাসুও কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন।
২০০১ সালের ডিসেম্বরে ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকা করে সেসময়কার সরকার। তালিকার একজন আব্বাস উদ্দিন ওরফে কিলার আব্বাস। গত ১৩ আগস্ট, কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগার থেকে মুক্তি পান অর্ধডজন হত্যা মামলার এই আসামি।
চলতি মাসের শুরুর দিকে একই কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন ৯টি হত্যাসহ অন্তত ২২ মামলার আসামি আসলাম হোসেন ওরফে সুইডেন আসলাম।
এর আগে, একে একে জামিনে বেরিয়ে আসেন ঢাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল ইমন, নাইম আহমেদ টিটন, ফ্রিডম রাসু, পিচ্চি হেলালের মত সন্ত্রাসীরা। জামিন নিয়ে লাপাত্তা কয়েকজন। যাদের বেশিরভাগে নামে ঝুলছে ইন্টারপোলের রেড নোটিশ। কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, সব ধরনের আইনি প্রক্রিয়ার পরই কারামুক্ত হচ্ছে এসব আসামি।
শীর্ষ সন্ত্রাসীরা কীভাবে জামিন পাচ্ছেন, এ বিষয়ে গোয়েন্দা সূত্রগুলো বলছে, বড় অপরাধীদের মামলা, জামিন, গ্রেপ্তার ও সামগ্রিক কার্যক্রমের ওপর পুলিশের বিশেষ শাখাসহ অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সব সময় নজরদারি করত। সরকার পতনের পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর ভঙ্গুর অবস্থা তৈরি হয়। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে শীর্ষ সন্ত্রাসীরা খুব সহজেই বের হয়ে আসছেন। আবার বের হওয়ার পর তাদের ওপর কোনো নজরদারি নেই।
কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগারের জেলার লুৎফর রহমান বলেন, জামিন ছাড়া কেউ যেতে পারবে না। যারা যারা গিয়েছেন, সবাই সঠিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই গিয়েছেন।
রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর অনেকটাই নিষ্ক্রিয় পুলিশসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলো। দাগি সন্ত্রাসীদের এভাবে জামিনে মুক্তি পরিস্থিতি জটিল করে তুলতে পারে, মনে করছেন অপরাধ বিশ্লেষকরা।
অপরাধ বিশ্লেষক ড. হাফিজুর রহমান কার্জন বলেছেন, আমরা কিন্তু অনেকগুলো ঘটনা জানি যে উচ্চ আদালত থেকে এসব অপরাধীরা হত্যা মামলার আসামি হিসেবে জামিনে বেরিয়ে আসে আবার হত্যা করেছে। এটা প্রযোজ্য যারা সাধারণ হত্যা মামলার আসামি। আর যারা শীর্ষ সন্ত্রাসী রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে-তো শুধুমাত্র হত্যা হয়, নানা ধরনের অপরাধ সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত। তাতে করে তো, দেশের যে সামগ্রিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, সেটার-ই অবনতির একটা আশঙ্কা আমরা করছি।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) রেজাউল করিম মল্লিক গণমাধ্যমকে বলেন, জামিনে বের হয়ে কেউ যেন নতুন করে অপরাধমূলক কাজে জড়াতে না পারেন, সেটি নিশ্চিত করতে আমাদের কঠোর নজরদারি থাকবে। শীর্ষ সন্ত্রাসী, গডফাদার বা যেকোনো পরিচয়েই হোক, অপরাধ করলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
মন্তব্য করুন