প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে যেসব বিষয়ে কথা হলো শিক্ষার্থীদের
অন্তর্বর্তী সরকারের একমাস-পূর্তিতে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এ সময় এই সরকারের কাছে নিজেদের প্রত্যাশা এবং মতামত তুলে ধরেন শিক্ষার্থীরা।
রোববার (৮ সেপ্টেম্বর) প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের শাপলা হলে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
আন্দোলন রাজনীতির অংশ উল্লেখ করে এক নারী সমন্বয়ক বলেন, এ রাজনীতিটা ক্যাম্পাসের বাইরে থাকবে। সবার রাজনৈতিক মতাদর্শ থাকতে পারে, সেটা শিক্ষক কিংবা শিক্ষার্থী হোক। সেটা থাকবে চায়ের চুমুকে। পাঠদানের সময় তিনি শুধুই শিক্ষক। কোনো ট্যাগধারী ছাত্র ও শিক্ষককে ক্যাম্পাসে দেখতে চাই না।
দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ করেন তিনি। এ সময় কৃষকদের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর দাবি করেন এ নারী সমন্বয়ক। এ ছাড়াও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আগামীতে ভোটাধিকার নিশ্চিতের পাশাপাশি নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের দাবি করেন তিনি।
সরকারি হাসপাতালের অনিয়মের বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে আন্দোলনের সমন্বয়ক ও মেডিকেল শিক্ষার্থী বলেন, যত দ্রুত সম্ভব কার্যকর পদক্ষেপ নিয়ে, রোগীদের যাতে হেনস্তা না হতে হয়, সেই ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। আমরা চাই, চিকিৎসা সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করা হোক। যেখানে শুধুমাত্র চিকিৎসক না, রোগীদেরও সেবা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করা হয়ে থাকে।
তিনি বলেন, সিভিল সার্ভিস, জুডিশিয়ারি সার্ভিসের মতো বাংলাদেশ হেলথ সার্ভিসের অধীনে সব মেডিকেল শিক্ষার্থী ও চিকিৎসকদের যদি এর অধীনে আনা যায়, তাহলে অনেক স্বচ্ছতা ও সেবার মান বৃদ্ধি পাবে।
দেশের মেধাপাচারের ওপর গুরুত্ব দিয়ে আন্দোলনের আরেক সমন্বয়ক বলেন, হাজার হাজার কোটি টাকা পাচারের চেয়েও মেধাপাচার ভয়ংকর। মেধা পাচার না হলে প্রতি বছরই দুই-একজন ড. ইউনূস বের হতো। বিদেশি পিএইচডি করতে যাওয়াদের দেশে ফিরিয়ে এনে পলিসি লেভেলে নিয়োগ দেওয়ার অনুরোধ করেন তিনি।
মব জাস্টিস নিয়ন্ত্রণ করার অনুরোধ করে এক নারী সমন্বয়ক বলেন, এই মুহূর্তে প্রধান কাজের মধ্যে এটি একটি। মব জাস্টিস যদি সমাজের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে যায় এবং কুচক্রী মহল এই দুরবস্থার সুযোগ নিয়ে আমাদের ভেতর প্রবেশ করে- তাহলে এই ঐক্য নষ্ট করার চেষ্টা করবে। তাই এ বিষয়ে সজাগ দৃষ্টি দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ করেন তিনি।
আরেক সমন্বয়ক বলেন, যে রক্ত ঝরেছে তার ঋণ শোধ করার দায় আমাদের কাঁধে। এ দায়িত্ব পালনে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। এ দায়িত্ব পালন করতে পারলে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম আমাদের স্মরণ করবে। আমাদের দায়িত্বের গুরুত্ব ও ভার বুঝতে হবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশের তরুণ সমাজ ও ছাত্রদেরকে দায়িত্ব পালনে উপযুক্ত হিসেবে গড়ে তুলতে সহায়তা করবেন। আমাদের সংগ্রাম চলমান থাকবে।
পরে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘যে যতই পরামর্শ দিক না কেন, এটা থেকে বেরিয়ে আসবে। সে পরামর্শ তোমরা গ্রহণ কর না। তোমাদের চিন্তাই স্বচ্ছ ও সঠিক, এটা মুঠো থেকে ছাড়বে না। যদি আমরা এ স্বপ্ন থেকে দূরে সরার কোনো কাজ করি, স্মরণ করিয়ে দেবে। আমাদের কারও কোনো ইচ্ছা নেই, এ স্বপ্ন থেকে বাইরে যাওয়ার। এ স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা আমাদের সার্বক্ষণিক কাজ।’
তিনি বলেন, ‘ভুলক্রমে আমরা যদি সীমা অতিক্রম করি, তাহলে আমাদের সঙ্গে সঙ্গে জানাবে। এ শপথ নিয়ে আমরা সবাই একত্র হলাম। যারা আজকে উপস্থিত হতে পারে নাই, তাদের জানিয়ে দিও, আমরা একযোগে, একসঙ্গে এ কাজে নামলাম। এটাকে সফল করব।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের জন্ম থেকে ৫৩ বছরে এ সুযোগ আর আসে নাই। যে সুযোগ তোমরা আমাদের দিয়েছ। এ সুযোগ যেন হাতছাড়া না হয়। এ সুযোগ হাতছাড়া হলে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ থাকবে না। এটা কোনও রাষ্ট্র আর থাকবে না। এটা যেন শুধু রাষ্ট্র নয়, পৃথিবীর সম্মানিত রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। যেহেতু তরুণরা এটার ঢাল ধরেছে। এ কারণে এটা ইউনিক, অন্যন্য দেশ আমরা তৈরি করতে চাই।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘দুনিয়ার মানুষ তোমাদের কাছে শিখতে আসবে। তোমাদের নিয়ে যাবে, বলবে কী মন্ত্র দিয়ে এটা করেছো? এ মন্ত্রটা তারা শিখতে আসবে। সে মন্ত্রটা তোমরাও টের পাচ্ছ না, এটা কীভাবে আসলো? কিন্তু একটা বিরাট মন্ত্র তোমরা আবিষ্কার করেছো। সেটাকে ধরে রাখবে। এ মন্ত্র যদি শিথিল হয়ে যায়- তাহলে আমাদের কপালে অশেষ দুঃখ আছে। সেই দুঃখ যেন আমাদের দেখতে না হয়।’
সভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল; বন, পরিবেশ ও জলবায়ু উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার, তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম এবং যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া।
মন্তব্য করুন