যে কারণে বাংলাদেশে এখনও সীমিত ভারতের ভিসা কার্যক্রম
বাংলাদেশ থেকে ভারতের ভিসা প্রাপ্তি নিয়ে বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ ছিল আগে থেকেই। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে সংঘটিত গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর যখন নতুন মোড় নিলো ঢাকা-নয়াদিল্লি সম্পর্ক, তখন থেকেই আরও জটিল হয়ে উঠেছে এই ভিসা ইস্যু। জরুরি কিছু ক্ষেত্র ছাড়া বাংলাদেশিদের ভিসা দিচ্ছে না ভারত, ফেরত দেওয়া হচ্ছে পাসপোর্টও।
এ অবস্থায় ভারতীয় বেশ কিছু গণমাধ্যম বলছে, মূলত বাংলাদেশের চলমান পরিস্থিতি বিবেচনায় ভিসা দেওয়া হচ্ছে না বাংলাদেশিদের। সংশ্লিষ্ট সূত্রের বরাতে এসব গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে দাবি করা হচ্ছে, ঢাকার পরিস্থিতি ‘স্বাভাবিক’ না হওয়া পর্যন্ত ভিসা কার্যক্রমও স্বাভাবিক হওয়ার কোনও আশা নেই।
রোববার (২৯ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য প্রিন্ট জানিয়েছে, ২০ হাজারের বেশি বাংলাদেশি ভিসা আবেদনকারীর পাসপোর্ট ফেরত দিয়েছে ভারত। বলা হচ্ছে, ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনে কিছু ‘হুমকিমূলক ই-মেইল’সহ প্রতিবাদ ও কড়া শব্দের ই-মেইল পাঠানোয় পাসপোর্ট ফেরত দেওয়ার এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য ভিসা পরিষেবা অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত থাকায়, পাসপোর্টগুলো ভারতীয় হাইকমিশনের তত্ত্বাবধানে ছিল বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
দ্য প্রিন্ট বলছে, ভারতীয় সরকারি সূত্র নিশ্চিত করেছে যে, জরুরি ভিসার জন্য মাত্র কয়েকশ অনুরোধ বিবেচনা করা হচ্ছে। এর মধ্যে প্রাথমিকভাবে মেডিকেল, স্টুডেন্ট এবং ডাবল এন্ট্রি ভিসা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত মাসে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বিক্ষোভের কারণে বাংলাদেশে ভারতীয় ভিসা আবেদন কেন্দ্রগুলো অনেকাংশে বন্ধ থাকায়, বহু ভিসা আবেদনকারীর পাসপোর্ট ঢাকার হাইকমিশনের কাছে থেকে যায়। পরে ‘উত্তেজিত’ আবেদনকারীরা হাইকমিশনকে বেশ কিছু ই-মেইল পাঠায়, যার মধ্যে ভাঙচুরের হুমকিও ছিল বলে দাবি করা হয়েছে।
ভিসা আবেদন কেন্দ্রগুলোতে কর্মীদের হেনস্থা করারও অভিযোগ ওঠে। অনেকে হাইকমিশনকে ট্যাগ করে সোশ্যাল মিডিয়ায় হুমকি দিয়েছেন বলেও দাবি করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সূত্রের বরাতে ভারতীয় গণমাধ্যম বলেছে, গত ৫ আগস্ট থেকে বাংলাদেশিদের ভিসা প্রদান বন্ধ রয়েছে। কর্মী স্বল্পতার পাশাপাশি বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে ভিসা না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। শুধুমাত্র কিছু জরুরি ক্ষেত্রে এবং কিছু ক্ষেত্রে তৃতীয় দেশের ভিসার জন্য আবেদন করতে ভারতে আসতে হয়- এমন লোকদের জন্য ডবল এন্ট্রি ভিসার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। বাকি সব পাসপোর্ট ফেরত দেওয়া হয়েছে।
এর আগে, ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার রোববার (২৯ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে জানায়, ‘আপৎকালীন এবং চিকিৎসার’ প্রয়োজন ছাড়া আপাতত বাংলাদেশি নাগরিকদের ভিসা দেওয়া হচ্ছে না।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়ালের উদ্ধৃতি দিয়ে এতে আরও বলা হয়, আপাতত বাংলাদেশিদের চিকিৎসার এবং জরুরি প্রয়োজনে ভিসা দেওয়া হচ্ছে। যখন বাংলাদেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে, তখন পূর্ণমাত্রায় কাজ শুরু হবে এবং ভিসা প্রদানও স্বাভাবিক হবে।
এদিকে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে ভারতীয় ভিসা কেন্দ্রগুলো পুনরায় কাজ শুরু করলেও সেখানে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন অনেকে। এর জেরে ফের ব্যাহত হয় কাজ। বাধ্য হয়ে ভারতীয় দূতাবাস এবং ভিসা কেন্দ্রগুলোতে বাড়তি নিরাপত্তা মোতায়েন করে অন্তর্বর্তী সরকার। এর মধ্যে সেপ্টেম্বর থেকে আবার জরুরি ভিত্তিতে পরিষেবা দেওয়া শুরু হয়েছে ভিসা আবেদন কেন্দ্রগুলোতে।
ভারতীয় ভিসা আবেদন কেন্দ্র জানিয়েছে, প্রাথমিকভাবে ভিসা সেন্টার খুলেছে ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, সিলেট এবং খুলনায়। তবে এখনই সবাই ভিসা পাবেন না। কেবলমাত্র যারা চিকিৎসার জন্য যাবেন, তাদেরই জরুরি ভিত্তিতে দেওয়া হবে অগ্রাধিকার।
সাম্প্রতিক বিজ্ঞপ্তিতে ভারতও জানিয়েছে, ‘বাংলাদেশের পরিস্থিতি এখনও স্বাভাবিক নয়। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবার ভিসা প্রদানের বিষয়টিও আগের মতো হয়ে যাবে।’
আরটিভি/এসএইচএম
মন্তব্য করুন