জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আমিরুল, মহাসচিব মাজহারুল, যুগ্ম মহাসচিব ছগির
খুলনা জেলার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. আমিরুল ইসলাম বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাহী কমিটির সভাপতি, কুষ্টিয়া জেলার যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ মুহাম্মদ মাজহারুল ইসলাম মহাসচিব এবং সিলেট মেট্রোপলিটনের সিনিয়র মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ছগির আহমেদ টুটুল যুগ্ম মহাসচিব নির্বাচিত হয়েছেন।
দীর্ঘ ২৫ বছর পর ভোটের মাধ্যমে অ্যাসোসিয়েশনের ৪৫ সদস্যের নির্বাহী কমিটি বেছে নিলেন বিচারকরা।
অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা জানান, এই নির্বাচনে অনলাইনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। মোট ভোটার ছিলেন ৬৪ জেলার ২ হাজার ১৮৫ বিচারক। এর মধ্যে ভোট দিয়েছেন ২ হাজার ৩৫ জন বিচারক। উৎসবমুখর ও আনন্দঘন পরিবেশে বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে রাত পৌনে ১০টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলে।
এই নির্বাচনের সভাপতি ও মহাসচিবসহ অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাহী কমিটির ১৬টি পদে মোট ৪৫ জন বিচারক নির্বাচিত হয়েছেন।
বিচার প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের সম্মেলনকক্ষে অনলাইনে ভোটগ্রহণ কার্যক্রমটি পুরো সময় লাইভ দেখানো হয়। বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের অন্তর্বর্তী নির্বাহী কমিটির সভাপতি মো. জাকির হোসেন গালিব, মহাসচিব মোহাম্মদ ফারুক ও বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক মো. সাব্বির ফয়েজ ভোটদান কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন।
নির্বাচনে অন্যান্য বিজয়ীরা হলেন, সহসভাপতি পদে নুরুল আলম মোহাম্মদ নিপু, মুহাম্মদ মাহবুব আলম, শ্যাম সুন্দর রায়, মো. ফারুক ইকবাল, মেহেদী হাসান মন্ডল, নিশাত সুলতানা, মাসরুর সালেকীন, মুহাম্মদ জাকারিয়া, এ এন এম মোরশেদ খান ও ফেরদৌস আরা। যুগ্ম মহাসচিব পদে সগির আহমেদ টুটুল ছাড়াও রয়েছেন সাদেকীন হাবিব বাপ্পী, তাজউল ইসলাম, মুজাহিদুর রহমান ও হাবিবুল্লাহ মাহমুদ। সহকারী মহাসচিব পদে বিজয়ী হয়েছেন এস এম মাহফুজ আলম, মো. জুনাইদ, জিয়া উদ্দিন আহমেদ, ইফতি হাসান ইমরান ও শাকিল আহমেদ।
কোষাধ্যক্ষ পদে নির্বাচিত হয়েছেন কুদরাত-ই খোদা, সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম শরীয়ত উল্লাহ্, আপ্যায়ন সম্পাদক মোসলেম উদ্দীন, তথ্য-প্রযুক্তি ও গবেষণা সম্পাদক এ কে এম কামাল উদ্দিন ও প্রচার সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন মোস্তানছির রহমান।
এ ছাড়া নির্বাহী কমিটির সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন মাসুম মিয়া, মুসতানসীর হাসান চৌধুরী নকীব, এলিছ জাহান, নজরুল ইসলাম, জান্নাতুন নাইম মিতু, কাজী ফখরুল আবেদীন, অনন্যা রায়, ইব্রাহিম খলিল মুহিম, এফ এম শেফায়েত সালাম, নূরুল হক, মতিউর রহমান, মুহাম্মদ আলী তালহা, মোত্তালেব হোসেন, শামসুল হক ও রাসেল মজুমদার।
জানা গেছে, বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে এই সংগঠনকে কুক্ষিগত করে রাখে একটি মহাল। ঘুরে ফিরে নেতৃত্ব থাকে ওই সিন্ডিকেটের হাতে। ফলে দীর্ঘদিন অ্যাসোসিয়েশনের কোনো নির্বাচন হয়নি। এতে ক্ষুব্ধ ছিল অধস্তন আদালতের বিভিন্ন পর্যায়ের বিচারকরা। অবশেষে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তন ঘটে। ক্ষমতাচ্যুত হন স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা। তৎকালীন সরকার ঘনিষ্ঠ যেসব বিচারক দীর্ঘদিন ধরে জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও মহাসচিবসহ বিভিন্ন পদ দখলে রেখেছিলেন রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে পর তারা পদত্যাগ করেন। অবশেষে পরিষ্কার হয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের পথ। এরপর গঠন করা হয় নির্বাচন কমিশন। কমিশনের ঘোষণা অনুযায়ী বুধবার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
বিচারকরা বলছেন, এই সংগঠনকে অতীতে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়েছে। কারণ অধস্তন আদালতের যেসব বিচারক রায় বা আদেশ দিয়ে অন্যায় আচরণের শিকার হয়েছেন তার বিরুদ্ধে কোনো বক্তব্য বা বিবৃতিও দেয়নি সংগঠনের তৎকালীন নেতারা। ফলে বিচারকদের মনে একধরনের ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছিল। নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনের মাধ্যমে সেই ক্ষোভ কিছুটা হলেও প্রশমিত হবে।
এবারের নির্বাচনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক জেলা ও দায়রা জজ মো. নূরে আলম। কমিশনার ছিলেন ঢাকার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ নাসরিন জাহান, ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আরিফুর রহমান ও নাটোরের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. শানু আকন্দ।
আরটিভি/এফআই
মন্তব্য করুন