নিষেধাজ্ঞাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে অবাধে চলছে পলিথিনের ব্যবহার
দেশে পলিথিনের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হলেও সরকারের এই সিদ্ধান্তকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে রাজধানীর সব জায়গায় চলছে পলিথিনের অবাধ ব্যবহার। তবে সুপারশপগুলোতে এই নির্দেশনা মানা হচ্ছে।
রোববার (৩ নভেম্বর) রাজধানীর মোহাম্মাদপুর, কারওয়ান বাজার, মগবাজার, মালিবাগ, লালবাগ, গুলশান-২ এলাকায় স্বাভাবিক সময়ের মতোই পলিথিন বিক্রি ও ব্যবহার দেখা গেছে।
গত ৯ সেপ্টেম্বর পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জানিয়েছিলেন, ১ অক্টোবর থেকে সুপারশপে কোনো পলিথিন বা পলিপ্রপাইলিনের ব্যাগ ব্যবহার করা যাবে না। বিকল্প হিসেবে কাগজ, পাট ও কাপড়ের ব্যাগ ক্রেতাদের দিতে হবে। সুপারশপগুলো সরকারের ওই নির্দেশনা মেনে চলছে। একই সঙ্গে তিনি বলেছিলেন, ১ নভেম্বর থেকে খুচরা বাজারেও এসব ব্যাগ ব্যবহার নিষেধ।
পরিবেশ উপদেষ্টার এই নিষেধাজ্ঞা মানতে নারাজ ক্রেতা-বিক্রেতা। তাদের ভাষ্য, পলিথিন ব্যাগের বিকল্প সামগ্রী ব্যায়বহুল। একই সঙ্গে পাটের বা কাপড়ের ব্যাগ সহজলভ্য না।
এ বিষয়ে কারওয়ান বাজারের ফল বিক্রেতা নাজমুল ইসলাম বলেন, পলিথিন বন্ধ হলে আমরাও কাগজের ঠোঙা ব্যবহার করতে পারব। কারখানায় পলিথিন তৈরি বন্ধ না করতে পারলে এটা বাজারে এসে অভিযান চালিয়ে বন্ধ করা যাবে না।
একই বাজারে কেনাকাটা করতে আসা আবুল হোসেন বলেন, আপনি বিকল্প তৈরি না করেই নিষিদ্ধ ঘোষণা করলে মানুষ আপনার কথা শুনবে কেন। তাই দ্রুত ও সস্তায় পাওয়া যায় এমন পণ্য বাজারে আনুন, মানুষ এমনিতেই পলিথিনের ব্যবহার ছেড়ে দিবে।
এদিকে পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধে সরকারের পক্ষ থেকে বাজারে অভিযান চালানো হচ্ছে। এবার পলিথিন বন্ধে আর ছাড় দেওয়া হবে না এমনই বার্তা দিচ্ছে সরকার।
এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক প্রকৌশলী আবদুস সোবহান বলেন, ‘পরিবেশ, জনজীবন ও প্রকৃতির ওপর পলিথিন ব্যাগের ক্ষতির প্রভাব বিচার-বিশ্লেষণ করেই নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। যখন নিষিদ্ধ করা হয়েছিল, তখন সর্বস্তরের মানুষ এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছিলেন। এটির বিকল্পও তখন বাজারে আসতে শুরু করেছিল। যেমন, কাগজের ঠোঙা, কাপড়ের ব্যাগ, পাটের ব্যাগ ও কাগজের ব্যাগসহ আরও অনেক কিছু। তখন দেখা গেল, যেখানে পলিথিন বিক্রি হতো, সেখানে বিকল্পগুলো বিক্রি হতে শুরু করে। ২০০২, ২০০৩ ও ২০০৪ সালের ঘটনা এটা। এভাবে চলতে থাকলে আমরা বাজারে ব্যাগ নিয়ে যেতে শুরু করলাম। অফিসে যারা যেতাম, তারা সঙ্গে বাজারের ব্যাগও রাখতাম, যাতে ফেরার সময় বাজার করতে সেটা ব্যবহার করতে পারি। আমাদের মধ্যে এই অভ্যস্ততা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু পরে ধীরে ধীরে সেখান থেকে আমরা সরে আসি। এতে বিকল্পের ব্যবহার বন্ধ হয়ে গেল। আবার বাজারে পলিথিন আসতে শুরু করে।
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভের প্রধান নির্বাহী এম জাকির হোসেন খান বলেন, বাজারে গিয়ে পলিথিন খুঁজে বের করে সাজা দেওয়ার ব্যবস্থা করা কোনো পদ্ধতি হতে পারে না। কারণ, বাজারে পলিথিন কোত্থেকে আসে? উৎপাদন যে জায়গায় হয়, যারা উৎপাদন করেন, তাদের যদি দৃষ্টান্তমূলক আর্থিক জরিমানা করা যায়, তাহলে বারবার এগুলো বাজারে আসবে না।
আরটিভি/এসএপি-টি
মন্তব্য করুন