• ঢাকা মঙ্গলবার, ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ২০ কার্তিক ১৪৩১
logo

অপরাধের সাম্রাজ্যে এখনও দাপুটে গোল্ডেন মনির

আরটিভি নিউজ

  ০৩ নভেম্বর ২০২৪, ২০:২৬
অপরাধের সাম্রাজ্যে এখনও দাপুটে গোল্ডেন মনির
ফাইল ছবি

অপরাধের অন্ধকার জগতে অনেকটাই ভুলতে বসা এক নাম গোল্ডেন মনির। প্রকৃত নাম মনির হোসেন। গাউছিয়া মার্কেটের একজন সামান্য বিক্রয়কর্মী থেকে যিনি হয়ে উঠেছিলেন বাড্ডার মূর্তিমান আতঙ্ক। ২০২০ সালে র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তারের পর প্রায় ৩ বছর জেল খেটে জামিনে বের হন রহস্যময় এ অপরাধী। কয়েকটি মামলায় খালাসও পেয়ে যান এর মধ্যে। তবে ৩ বছর জেল খেটেও অপরাধ জগতে তারা দাপট কমেনি সেই অর্থে। বরং নেমছেন সাম্রাজ্য ফিরে পাওয়ার নতুন মিশনে।

সরকার পতনের পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটেও থেমে নেই তার সেই মিশন। সমানতালে জারি আছে তার দুর্বৃত্তায়ন ও অপকর্ম। বিভিন্ন অপরাধকাণ্ডে কলকাঠি নেড়ে জানান দিচ্ছেন, তিনি আছেন এখনও।

অপরাধ জগতের রহস্যময় এক চরিত্র এই গোল্ডেন মনির। মূলত বিএনপি আমলে উত্থান হলেও দাপট দেখিয়ে গেছেন আওয়ামী লীগ সরকারের এক যুগেও। দুই আমলেই মন্ত্রী-এমপিদের হাত করে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশ করে বাগিয়েছেন রাজউকের ২০টি প্লট, গড়েছেন হাজার কোটি টাকার সম্পদ, বনেছেন স্বর্ণ চোরাচালানের জগতের মুকুটবিহীন সম্রাট। ক্যাসিনো আর হুন্ডি ব্যবসায়ও ছিল তার অবাধ বিচরণ। মনিরের সম্পদের পাহাড় গড়ায় সেই অর্থে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি আইন কিংবা প্রশাসন। এমনকি রাজনৈতিক পটপরিবর্তনও তার সামনে দাঁড়িয়েছে খুবই সাধারণ বিষয় হয়ে। যে-ই ক্ষমতায় বসেছে, কিনে নিয়েছেন টাকা দিয়ে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, নব্বইয়ের দশকে নেতাদের সঙ্গে সম্পর্কের সূত্র ধরেই মূলত উত্থান মনিরুল ইসলাম ওরফে গোল্ডেন মনিরের। পরবর্তীতে ২০০১ সালে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি ধূর্ত মনিরকে। আস্থাভাজন হয়ে ওঠেন মন্ত্রীদের। পরবর্তীতে ওয়ান ইলেভেন এমনকি আওয়ামী লীগ সরকারের আগমনেও এতটুকু দাপট কমেনি তার; বরং বেড়েছে। রাজার মতোই বিচরণ করে বেরিয়েছেন গণপূর্ত আর রাজউকে।

২০২০ সালের এক অনুসন্ধানে জানা যায়, ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকায় মনিরের ২০২টি প্লট রয়েছে। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো পূর্বাচলে ৭ কাঠা, বাড্ডায় ১৯২টি প্লট, নিকুঞ্জ-২ নম্বরের ৫ নম্বর সড়কে ৭০ কাঠার বিশাল প্লট, বাড্ডায় স্কুল, উত্তরায় জমজম টাওয়ারে অংশীদার, উত্তরার ১১ নম্বর সেক্টরে নির্মাণাধীন সাফা টাওয়ার অন্যতম। এ ছাড়া বারিধারার প্রগতি সরণির জে ব্লকের ৭৪ নম্বরে রয়েছে গোল্ডেন মনিরের আলিশান অফিস। সোনা চোরাচালান, জমি দখল, হুন্ডি বাণিজ্য, সরকারি দপ্তরের সিল জাল করে অপরাধ কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতেন মনির।

২০১৯ সালের ১৬ অক্টোবর রাজউক থেকে ৭১টি প্লটের ফাইল বাসায় নিয়ে যান মনির। এ ঘটনায় রাজউকের পক্ষ থেকে একটি মামলা করা হয়। তবে মামলা হলেও রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুর রহমান ও সরকারের একজন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিমন্ত্রীর প্রশ্রয়ে মনিরের বিরুদ্ধে করা মামলার কোনো অগ্রগতি হয়নি। তারা দুজন মনিরকে বাঁচাতে ছায়া দেন বলে গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। বিনিময়ে মনিরের কাছ থেকে বিশাল অঙ্কের অর্থসহ বিভিন্ন ধরনের উপঢৌকন বাগিয়ে নেন। গণপূর্ত ও রাজউকে মনিরের রয়েছে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। বদলি, পদোন্নতিসহ সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করত এ সিন্ডিকেট।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুর রহমানের বক্তব্য ছিল, আমি ২০১৯ সালের মে মাসে অবসরে গিয়েছি। প্লটের ফাইল চুরির ঘটনা তার পরে ঘটেছে। চেয়ারম্যান হিসেবে তার (গোল্ডেন মনির) সঙ্গে আমার সম্পর্ক থাকতেই পারে। তার মানে এই নয় যে, আমি তার অনৈতিক কর্মকাণ্ডে সহায়তা দিয়েছি।

বিক্রয়কর্মী থেকে গোল্ডেন মনির: নব্বইয়ের দশকে গাউছিয়া মার্কেটে একটি কাপড়ের দোকানে বিক্রয়কর্মী হিসেবে কাজ করতেন মনির হোসেন। পরে তিনি রাজধানীর মৌচাকের একটি ক্রোকারিজের দোকানে কাজ শুরু করেন। তখন ‘লাগেজ পার্টি’র একজনের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। এরপর মনিরও লাগেজ ব্যবসায় যুক্ত হন।

এই লাগেজ ব্যবসা করতে গিয়ে শীর্ষ সন্ত্রাসী মুরগি মিলনের সঙ্গে পরিচয় হয়। চতুর মনির একটা সময় শীর্ষ সন্ত্রাসী মুরগি মিলনের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করেন, যে কারণে তাকে ক্যাশিয়ার হিসাবে নিয়োগ দেয়। শীর্ষ সন্ত্রাসী মুরগি মিলনের মৃত্যুর পর তার চোরাকারবারি সাম্রাজ্য মনিরের নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। এই নিয়ে শীর্ষ সন্ত্রাসী মুরগি মিলনের অনুসারীদের সঙ্গে গোলাগুলি পর্যন্ত হয় তার। এভাবেই লাগেজ পার্টি আর সোনা চোরাকারবারিদের গডফাদার হয়ে ওঠেন মনির; অপরাধ জগতে পরিচিত হয়ে ওঠেন গোল্ডেন মনির নামে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গোল্ডেন মনিরের ঘনিষ্ঠ সহযোগী জানায়, মনির বিদেশ থেকে গাড়ি আমদানির আড়ালে গাড়ির তেলের টাংকির ভেতরে বিশেষ প্রক্রিয়ায় স্বর্ণ নিয়ে আসেন, পরে সেগুলো তার ডিআইটি প্রজেক্টের গ্যারেজে আনলোড করেন। এছাড়া শুল্ক ফাঁকি দিয়ে বিভিন্ন সংসদ সদস্যের নামে দামি গাড়ি নিয়ে এসে যোগসাজশে বিক্রি করেছেন। দুবাই-সিঙ্গাপুরেও রয়েছে তার আলাদা সাম্রাজ্য, সেখানে দেশ থেকে প্রচুর পরিমাণ টাকা হুন্ডির মাধ্যমে পাচার করেছেন তিনি।

গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, মূলত ঢাকা-সিঙ্গাপুর-ভারত রুটে ছিল তার মূল ব্যবসা। মুরগি মিলনের কাজ করার সময় স্বর্ণ চোরাকারবারে জড়িয়ে পড়েন গোল্ডেন মনির। অবৈধভাবে দেশে নিয়ে আসেন বিপুল পরিমাণ স্বর্ণ। বায়তুল মোকাররম মার্কেটে তিনি একটি স্বর্ণের গহনার দোকানও দেন। চোরাচালানের স্বর্ণ ওই দোকান থেকে বিক্রি হতো বলেও অভিযোগ রয়েছে।

বেশকিছু প্রতিষ্ঠানের মালিকানার সঙ্গে জড়িত এই গোল্ডেন মনির। তার মধ্যে রয়েছে-মনির বিল্ডার্স, গালফ অটোকারস লিমিটেড, উত্তরার গ্র্যান্ড জমজম টাওয়ার। এসব প্রতিষ্ঠানের অন্যতম পরিচালক এই গোল্ডেন মনির। শুধুমাত্র জমজম টাওয়ারে মনিরের মালিকানার মূল্যমান প্রায় ৫০০ কোটি টাকা।

আরটিভি/এসএইচএম-টি

মন্তব্য করুন

rtv Drama
Radhuni
  • বাংলাদেশ এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এবার আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে মামলা
নাৎসিদের অপরাধের জন্য ক্ষমা চাইলো জার্মানি
সেই পুলিশ কর্মকর্তা শহিদুলকে আনা হয়েছে ট্রাইব্যুনালে
সাবেক ডিসি জসিমকে কারাগারে পাঠালেন ট্রাইব্যুনাল