গণমাধ্যমের ওপর আক্রমণ-হুমকি বৈষম্যবিরোধী চেতনার পরিপন্থী: টিআইবি
সম্প্রতি সাংবাদিক ও গণমাধ্যমের ওপর উদ্দেশ্যপ্রণোদিত আক্রমণ, হুমকি, নির্বিচারে মামলা, ব্যক্তিগত ক্ষোভের বশবর্তী হয়ে হেনস্তার উদ্দেশ্যে স্বার্থান্বেষী মহলের অপতৎপরতা বৈষম্যবিরোধী চেতনার পরিপন্থী বলে জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
বুধবার (৬ নভেম্বর) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে সংস্থাটির পক্ষ থেকে আরও বলা হয়েছে, মুক্ত সাংবাদিকতার পরিবেশকে বাধাগ্রস্ত করার এই প্রবণতার বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিয়ে গণমাধ্যম ও সংবাদকর্মীদের জন্য ভয়ডরহীন পরিবেশ সৃষ্টির উদ্যোগ নিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে টিআইবি। একইসঙ্গে, গণমাধ্যম ও সাংবাদিকতার ক্ষমতার অপব্যবহার রোধ করে দায়িত্বশীল সাংবাদিকতার চর্চা নিশ্চিতের জন্য সংশ্লিষ্ট অংশীজনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।
বিভিন্ন গণমাধ্যম ঘেরাওয়ের হুমকি, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে নির্বিচার মামলা ও হেনস্তার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, পতিত কর্তৃত্ববাদী সরকারের শাসনামলে মুক্ত গণমাধ্যম সূচকে ১৪ বছরে ৪২ ধাপ নেমেছিল বাংলাদেশ। এ সময়ে গণমাধ্যমের স্বাধীনতাসংক্রান্ত সব মানদণ্ডেই বাংলাদেশের ক্রমাবনতি হয়েছে। ছাত্র-জনতার নজিরবিহীন প্রাণহানি ও রক্তের বিনিময়ে অর্জিত নতুন বাংলাদেশে এই অবস্থান থেকে উত্তরণের অভূতপূর্ব সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকেও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা বাধাগ্রস্ত হবে না, ক্ষমতার প্রভাবের বাইরে থেকে দেশে সাংবাদিকতার স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছি, স্বার্থান্বেষী বিভিন্ন মহল দেশের কোনো কোনো গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা, হামলা, ঘেরাওয়ের হুমকিসহ নানা আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে। দৃশ্যত অতি ক্ষমতায়িত কোনো কোনো মহলের স্বার্থের বাইরে গেলেই গণমাধ্যমকে আক্রমণ ও সাংবাদিক হেনস্তা, গণমাধ্যমকে দখল বা খেয়ালখুশিমতো পরিচালনার প্রচেষ্টা চলছে। যা আসলে মুক্ত গণমাধ্যমের সম্ভাবনার জন্য অশনি সংকেত।
ড. জামান আরও বলেন, টিআইবি বিশ্বাস করে, সাংবাদিকের বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট কোনো ফৌজদারি অপরাধের অভিযোগ থাকলে বা যারা সরাসরি কর্তৃত্ববাদের দোসরের ভূমিকা পালন করেছেন, তাদের সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া উচিত। কিন্তু পতিত কর্তৃত্ববাদী সরকারের সহযোগী ‘ট্যাগ’ দিয়ে সাংবাদিকের বিরুদ্ধে যথেচ্ছ মামলা, তথ্য অধিদপ্তরের দেওয়া স্থায়ী ও অস্থায়ী প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিল, হুমকি ও বরখাস্ত করার মতো ঘটনা গণমাধ্যমের স্বাধীনতার সপক্ষে কোনো ইতিবাচক বার্তা দিচ্ছে না।
বরং, ভিন্নমতের কারণেই স্বৈরাচারের দোসর অভিযোগ তোলার পেছনে স্বার্থান্বেষীদের দুরভিসন্ধি কাজ করছে। টিআইবি স্পষ্টভাবে বলতে চায়, শুধুমাত্র সাংবাদিকতার জন্য কোনো সাংবাদিককে কখনোই শাস্তি দেওয়ার সুযোগ নেই পতিত সরকারের দোসর অভিযোগে ‘উইচ হান্টিং’ করে সাংবাদিক হয়রানির চলমান চর্চা অবিলম্বে বন্ধের উদ্যোগ নিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই আমরা। একইসঙ্গে, সাংবাদিকতার ক্ষমতার অপব্যবহার রোধ করে দায়িত্বশীল সাংবাদিকতার চর্চা নিশ্চিতের জন্য গণমাধ্যম ও গণমাধ্যমকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানাই।
আরটিভি/একে
মন্তব্য করুন