দুই জাহাজে আগুন, তারপরও লাভবান বিএসসি
অবশেষে ৩৮ বছরের পুরোনো ‘বাংলার জ্যোতি’ ও ‘বাংলার সৌরভ’ যাচ্ছে শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডে। দুই জাহাজের শেষ ঠিকানা শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড হলেও দুদিক থেকেই আর্থিক লাভবান হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন (বিএসসি)। ইনস্যুরেন্স থেকে যেমন ক্ষতিপূরণ পাওয়া যাবে, তেমনি ওপেন টেন্ডারে বিক্রি করা হবে শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডের কাছে।
ইনস্যুরেন্স প্রতিষ্ঠান থেকে ক্লিয়ারেন্স পেলেই উন্মুক্ত টেন্ডারের মাধ্যমে কেটে টুকরো টুকরো করার জন্য শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডের কাছে বিক্রি করে দেওয়া হবে জাহাজ দুটি।
অগ্নিকাণ্ডের ক্ষতিপূরণ হিসেবে টোটাল লস, কন্সট্রাকটিভ টোটাল লস এবং ওপেন টেন্ডার -এ তিনটি প্রক্রিয়া সামনে থাকলেও দ্বিতীয় পন্থা বেছে নিচ্ছে বিএসসি। অর্থাৎ আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও জাহাজ দুটি পুরোপরি ধ্বংস হয়ে যায়নি।
আর তাই ইনস্যুরেন্স থেকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে যেমন মিলিয়ন ডলার পাওয়া যাবে, তেমনি ওপেন টেন্ডারে বিক্রি করে আরও ৪০ কোটি টাকা বাড়তি পাবে প্রতিষ্ঠানটি।
বিএসসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমোডর মাহমুদুল মালেক বলেন, জাহাজ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় কন্সট্রাকটিভ টোটাল লস পদ্ধতিটি বেছে নেওয়া হবে।
১৯৮৮ সালে তৈরি হওয়া বাংলার জ্যোতি এবং বাংলার সৌরভ জাহাজের প্রতিটির ওজন ৩ হাজার ৭৮৭ টন। বর্তমানে পুরাতন জাহাজ কেনার ক্ষেত্রে ইয়ার্ডপর্যায়ে প্রতি টন স্ক্র্যাপ লোহার দর প্রায় ৫১ হাজার টাকা। সে হিসেবে দুটি জাহাজ থেকে প্রায় ৪০ কোটি টাকা পেতে পারে জাহাজের মালিক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন।
মার্চেন্ট মেরিনার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ক্যাপ্টেন আনাম চৌধুরী বলেন, জাহাজের যেসব যন্ত্রপাতির জন্য ইনস্যুরেন্স করা হয়েছে, সেসব যন্ত্রপাতি ক্ষতিগ্রস্ত হলে চুক্তি অনুযায়ী অবশ্যই ক্ষতিপূরণ পাবে বিএসসি। এরপর জাহাজগুলো স্ক্র্যাপ হিসেবে বিক্রি করা যাবে। তাতে ডবল বেনিফিট পাওয়া যাবে।
দুর্ঘটনাকবলিত বাংলার জ্যোতিকে তেল খালাসের ডলফিন জেটি থেকে সরিয়ে পাশের একটি বেসরকারি ইয়ার্ডে রাখা হয়েছে। আর বাংলার সৌরভকে চট্টগ্রাম বন্দরের বহিঃনোঙরের বিপজ্জনক অংশ থেকে সরিয়ে আনোয়ারা পারকি বিচের আপে এনে রাখলেও এখনো পুরোপরি নিরাপদ নয়। অবশ্য চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না আসায় জাহাজ দুটিতে নাবিক এবং ক্রুরা অবস্থান করছেন।
চট্টগ্রামের পিএইচপি শিপ ব্রেকিং অ্যান্ড রিসাইকেলিং ইয়ার্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জহিরুল ইসলাম বলেন, জাহাজ দুটির ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ ইনস্যুরেন্স সুবিধা পেলে দেশের কোনো ক্ষতি হবে না। এর পাশাপাশি জাহাজগুলো রিসাইকেলিংয়ে পাঠাতে পাওয়া যাবে অর্থও। এটা দুদিক থেকেই দেশের জন্য লাভ।
উল্লেখ্য, গত ৩০ সেপ্টেম্বর সকাল ১০টায় পতেঙ্গার ডলফিন জেটিতে তেল খালাসের সময় এমটি বাংলার জ্যোতি বিস্ফোরিত হয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে ঘটনাস্থলেই তিনজন মারা যান। ক্ষতিগ্রস্ত হয় জাহাজটি। এ ঘটনার পরপরই ৪ অক্টোবর রাত ১২টা ৪০ মিনিটে এমটি বাংলার সৌরভ বহির্নোঙরে থাকা অবস্থায় বিস্ফোরিত হয়ে অগ্নিকাণ্ড ঘটায়। এতে একজনের মৃত্যু হয়। আর পরপরই উভয় জাহাজ আর তেল পরিবহন করবে না বলে ঘোষণা দেয় বিএসসি। এ দুই জাহাজ বহির্নোঙর থেকে (কুতুবদিয়া) তেল নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের ডলফিন জেটিতে ইস্টার্ন রিফাইনারির ট্যাংকে তেল সরবরাহ করত। ইস্টার্ন রিফাইনারি এসব তেল পরিশোধন করে সারাদেশে সরবরাহ করত।
আরটিভি/একে/এসএ
মন্তব্য করুন