বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ ফেরাতে সহায়তা করবে যুক্তরাজ্য
ঢাকায় সফররত যুক্তরাজ্যের ইন্দো-প্যাসিফিকবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ক্যাথরিন ওয়েস্ট বলেছেন, বাংলাদেশ থেকে পাচার করা বিলিয়ন-বিলিয়ন ডলার অর্থ ফিরিয়ে আনতে পূর্ণ সহায়তা দেবে যুক্তরাজ্য।
রোববার (১৭ নভেম্বর) দুপুরে ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাতকালে তিনি এই আশ্বাস দেন।
বৈঠকে ব্রিটিশ প্রতিমন্ত্রী ক্যাথরিন ওয়েস্ট জানান, তার সরকার অন্তর্বর্তী সরকারকে পূর্ণ সমর্থন দেবে। এ সময় প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাজ্যে পাচার হওয়া অর্থের বিষয়টি তুললে যুক্তরাজ্য অর্থ ফেরাতে সহায়তা করবে বলে আশ্বাস দেন ব্রিটিশ প্রতিমন্ত্রী।
যুক্তরাজ্যের প্রতিমন্ত্রী ক্যাথরিন ওয়েস্টকে ধন্যবাদ জানিয়ে ড. ইউনূস বলেন, দুর্নীতিবাজ-রাজনীতিবিদ এবং আমলারা যে টাকা পাচার করেছে, তা ফিরিয়ে আনায় এই সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার।
এ সময় ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশ থেকে বছরে ১২ বিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থ বিদেশে পাচার হয়েছে।
বৈঠকে অধ্যাপক ইউনূস দেশের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান ও নির্বাচন কমিশন ঠিক করতে তার সরকারের সংস্কার উদ্যোগের কথা ব্রিটিশ প্রতিমন্ত্রীকে জানান। তিনি বলেন, দেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করা এবং পূর্ববর্তী শাসনামলের ব্যাপক ভোট কারচুপি থেকে বিরত থাকা এই সংস্কারের লক্ষ্য।
ব্রিটিশ প্রতিমন্ত্রী রোহিঙ্গা শরণার্থী সম্প্রদায় এবং বাংলাদেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের প্রয়োজনীয় সেবা ও সহায়তা প্রদানের জন্য ইউকে অনুদান সহায়তার ১০ দশমিক ৩ মিলিয়ন পাউন্ড ঘোষণা করেন।
বৈঠকে তারা ভূ-রাজনৈতিক সমস্যা, সংখ্যালঘুদের অধিকার, দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিবেশীদের সঙ্গে সম্পর্ক এবং নেপালের সঙ্গে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ৪০ মেগাওয়াট জ্বালানি চুক্তি নিয়েও আলোচনা করেন।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস জানান, তার সরকার জলবিদ্যুৎ সমৃদ্ধ নেপাল ও ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আনার জন্য দক্ষিণ এশিয়ার বিদ্যুৎ গ্রিড তৈরিকে পুরোপুরি সমর্থন করেছে। তিনি বলেন, হিমালয়ের দুই দেশ থেকে নবায়নযোগ্য জ্বালানি আমদানি করতে পারলে বাংলাদেশ জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে পারে। এ লক্ষ্যে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সহযোগিতা প্রয়োজন।
একই বৈঠকে ঢাকায় ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক বলেন, জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে গুরুতর আহত ছাত্র ও অন্যান্য বিক্ষোভকারীদের চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্যের একটি মেডিকেল টিম চলতি মাসে বাংলাদেশে এসেছে। তারা দিনে তিনটি অস্ত্রোপচার করছে বলেও জানান ব্রিটিশ হাইকমিশনার।
এর আগে, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে বৈঠক করেন ঢাকায় সফররত যুক্তরাজ্যের ইন্দো-প্যাসিফিকবিষয়ক মন্ত্রী ক্যাথরিন ওয়েস্ট। ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানান পররাষ্ট্র উপদেষ্টা।
পরে সাংবাদিকদের ব্রিটিশ প্রতিমন্ত্রী ক্যাথরিন বলেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্র ফেরাতে ড. ইউনূস রূপরেখা ঘোষণা করবে বলে আশাবাদী ব্রিটেন। রাজনীতিতে সব দলের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিতের আহ্বানও জানান তিনি।
পরে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, নির্বাচন নিয়ে ব্রিটিশ সরকারের আগ্রহ আছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কোনো রাজনৈতিক অভিলাষ নেই। সংস্কার শেষেই নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হবে।
আরটিভি/কেএইচ-টি
মন্তব্য করুন