যে কারণে আজ চালু হচ্ছে না পদ্মা রেল সেতু সংযোগ
পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের পুরো ১৭২ কিলোমিটার রেলপথের কাজ শেষ। চালু হকে এখন শুধু উদ্বোধনের অপেক্ষা। গত নভেম্বর থেকেই উদ্বোধনের জন্য ২ ডিসেম্বরের কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু রানিং স্টাফদের মাইলেজ ও মাইলেজসহ পেনশন ও আনুতোষিক দেওয়ার দাবিতে কর্মবিরতি পালন করার কারণে সব আয়োজন সম্পন্ন করেও আজ (সোমবার) পদ্মা রেল সেতু সংযোগ প্রকল্প চালু করতে পারছে না বাংলাদেশ রেলওয়ে।
‘পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের’ ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু এবং গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী হয়ে যশোর-খুলনা রেলপথে যাতায়াতের দূরত্বের সময় কমবে প্রায় সাড়ে ৩ ঘণ্টার মতো এবং যশোর-বেনাপোল রেলপথে ৪ ঘণ্টার মতো। এর আগে গত বছরের ১০ অক্টোবর পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে ঢাকা থেকে প্রথম বাণিজ্যিক আন্তঃনগর ট্রেন চালানো হয় ফরিদপুরের ভাঙ্গা রেলওয়ে স্টেশন পর্যন্ত। সে সময় পুরো প্রকল্পের ১৭২ কিলোমিটার রেলপথের মধ্যে উদ্বোধন করা হয় মাত্র ৮২ কিলোমিটার। ভাঙ্গা জংশন স্টেশন থেকে মুকসুদপুর, লোহাগড়া, নড়াইল হয়ে প্রকল্পের বাকি ৯০ কিলোমিটার রেলপথ ইতোমধ্যে প্রস্তুত রয়েছে।
তবে বাংলাদেশ রেলওয়ের নবনিযুক্ত মহাপরিচালক ও পদ্মাসেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের পরিচালক আফজাল হোসেন বলেন, আজ (সেমবার) পদ্মা রেলসংযোগ প্রকল্প উদ্বোধন হবে না। আমাদের একটা ক্রাইসিস চলছে। মাইলেজ অ্যালাউন্সের জন্য রানিং স্টাফরা আন্দোলনে গেছে। তাদের আন্দোলনের জন্য আমাদের ট্রেন চলাচলে সমস্যা হচ্ছে। কিছু কিছু ট্রেন চলাচলে বিলম্ব হচ্ছে, কিছু কিছু ট্রেন বাতিল করা হচ্ছে। এটার সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত পুরো রুটে ট্রেন চালাতে পারছি না। এটার জন্য দেন-দরবার করা হচ্ছে। তবে অবশ্যই ডিসেম্বরের মধ্যে চালু হবে।
এছাড়া, কর্মবিরতির কারণে দেশজুড়ে চালক সংকটে নির্ধারিত সময়ে ট্রেন চলছে না। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা। এই ঘটনায় রোববার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে ১০টি ট্রেনের সিডিউল বিপর্যয় ঘটেছে এবং ঢাকা থেকে সিলেট, জয়দেবপুর ও দেওয়ানগঞ্জগামী মোট ৩টি ট্রেনের যাত্রা বাতিল করা হয়েছে। এমন ঘটনায়, আজও (সোমবার) সারাদেশের ট্রেন যাত্রীদের ভোগান্তিতে পড়তে হতে পারে বলে জানা গেছে।
রেলওয়ের ১৮৩২ সালের আইন অনুযায়ী, ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত ট্রেন চালক, সহ-চালক, পরিচালক ও টিকিট চেকারদের বিশেষ আর্থিক সুবিধা দেওয়া হয়ে থাকে। দৈনিক কর্মঘণ্টা ৮ ঘণ্টা হলেও রানিং স্টাফদের গড়ে ১৫–১৮ ঘণ্টা কাজ করতে হয়। এ জন্য তাদের দেওয়া হয় বিশেষ আর্থিক সুবিধা, যাকে রেলওয়ের ভাষায় বলা হয় মাইলেজ। এই মাইলেজ রানিং স্টাফদের বেতনেরই অংশ।
মাইলেজের হিসাব হলো- প্রতি ১০০ কিলোমিটার ট্রেন চালালে রানিং স্টাফরা মূল বেতনের এক দিনের বেসিকের সমপরিমাণ টাকা অতিরিক্ত পাবেন। ৮ ঘণ্টায় এক দিনের কর্মদিবস ধরলে রানিং স্টাফদের প্রতি মাসে কাজ দাঁড়ায় আড়াই বা দুই-তিন মাসের সমপরিমাণ। তাদের বেতনও সেভাবেই দেওয়া হয়। এ ছাড়া মূল বেতনের হিসাবে অবসরকালীন ভাতা যা হয় সেটির সঙ্গে অতিরিক্ত আরও ৭৫ শতাংশ টাকা বেশি দিয়ে তাদের পেনশন দেওয়া হয়। কিন্তু ২০২২ সালের জানুয়ারিতে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে রানিং স্টাফদের সেই সুবিধা বাতিল করা হয়। এরপর থেকে বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ঐক্য পরিষদ ধারাবাহিকভাবে আন্দোলন করছে।
এদিকে, রোববার বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. মজিবুর রহমান রেলওয়ে মহাপরিচালক বরাবর এক চিঠিতে কর্মবিরতির কথা জানান। তিনি চিঠিতে বলেন, পার্ট অব পে রানিং অ্যালাউন্সের ওপর অর্থ মন্ত্রণালয়ের অসম্মতি ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে বাতিল না হলে প্রাথমিক কর্মসূচি হিসেবে ১ ডিসেম্বর থেকে রানিং স্টাফরা ৮ ঘণ্টার অতিরিক্ত ডিউটি করবেন না। তারা আন্ডার রেস্টে (বিশ্রামকালীন) ডিউটি করবেন না।
এ সময় রেলের লোকোমাস্টার (এলএম), সহকারী লোকোমাস্টার (এএলএম) ও সাব লোকোমাস্টার (এসএলএম) কর্মবিরতিতে যাবেন। সহকারী লোকোমাস্টার (এএলএম) নিয়োগপত্রের দুটি ধারা বাতিল করে একই গ্রেডে কর্মরত রেলওয়ে কর্মচারীদের সঙ্গে বেতন কাঠামো ও আনুষঙ্গিক সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধির দাবিও জানানো হয়েছে এই চিঠিতে।
এ ব্যাপারে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মজিবুর রহমান বলেন, ১৬০ বছরের প্রচলিত নিয়ম হঠাৎ বন্ধ করা মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। আমরা বহুবার সময় দিয়েছি এবং আন্দোলন স্থগিত করেছি। কিন্তু এবার আর পেছানোর সুযোগ নেই। আমরা আমাদের ন্যায্য অধিকার দাবি করছি।
জানতে চাইলে রেলের নবনিযুক্ত মহাপরিচালক আফজাল হোসেন বলেন, এ নিয়ে রেলওয়েকে নতুন করে ভাবতে হচ্ছে। আমি মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পরে সর্বপ্রথম এ ইস্যুটি সমাধান করতে হচ্ছে। রানিং স্টাফদের দাবি-দাওয়া কীভাবে পূরণ করা যায় তা নিয়ে ভাবছি আমরা।
আরটিভি/কেএইচ
মন্তব্য করুন