প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক শেষে যা বললেন শায়েখ আহমাদুল্লাহ
রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ধর্মীয় সম্প্রদায়ের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) বিকেল থেকে প্রায় ২ ঘণ্টা বৈঠক শেষে জনপ্রিয় আলেম ও আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শায়েখ আহমাদুল্লাহ বলেন, প্রধান উপদেষ্টার ডাকে সাড়া দিয়ে বিভিন্ন ধর্মের নেতৃবৃন্দ এখানে এসেছেন। অন্য ধর্মাবলম্বীরা তাদের অবস্থা ব্যক্ত করেছেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে চমৎকার ধর্মীয় সম্প্রীতি বজায় আছে। সেটা কীভাবে ধরে রাখা যায় সেজন্য সবাই মন খুলে কথা বলেছি। প্রধান উপদেষ্টা মনোযোগ দিয়ে আমাদের কথাগুলো শুনেছেন।
শায়েখ আহমাদুল্লাহ বলেন, আমাদের দেশের সংখ্যালঘু ভাইয়েরা নিরাপদে আছেন এবং আরও নিরাপদ থাকবেন। তাদের নিরাপদ রাখার জন্য সরকার যেমন কাজ করছে, ধর্মীয় নেতারাও কাজ করছে। আমরা ঐক্যবদ্ধ আছি ঐক্যবদ্ধ থাকবো।
বৈঠকে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ও ইসলামসহ সব ধর্ম ও সম্প্রদায়ের মানুষকে নিয়ে ঢাকায় একটি শান্তি ও সম্প্রীতি সমাবেশ আয়োজনের প্রস্তাব দিয়েছেন ধর্মীয় নেতারা।
এর আগে, এদিন বিকেল সাড়ে ৪টায় ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে বৈঠকটি শুরু হয়। বৈঠকে পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা, আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা শায়খ আহমদুল্লাহ, বায়তুল মোকাররমের খতিব আবদুল মালেক, কবি ও চিন্তক ফরহাদ মজহার এবং হেফাজতে ইসলামের সাজেদুল হক, রমনা হরিচাঁদ মন্দিরের সহ-সম্পাদক অবিনাশ মিত্র, বাংলাদেশ বুদ্ধিস্ট ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ভিক্ষু সুনন্দ প্রিয়, রমনা সেন্ট ম্যারিজ ক্যাথেড্রালের প্রধান পুরোহিত অলভার্ট রোজারিও এবং গারো পুরোহিত জনসন মুরি কামাল উপস্থিত ছিলেন।
ভারতীয় মিডিয়ায় অপপ্রচার এবং উসকানির বিরুদ্ধে ধর্ম, দলমত নির্বিশেষে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অটুট রাখতে এ বৈঠক।
উল্লেখ্য, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট ক্ষমতা ছেড়ে শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়। তখন থেকেই ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের টানাপোড়েন চলছে।
বাংলাদেশের সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের নির্যাতনসহ বেশ কিছু ভিত্তিহীন অভিযোগ নিয়ে ভারতের গণমাধ্যমগুলো মিথ্যা ও অতিরঞ্জিত খবর প্রকাশ করে আসছে। বাংলাদেশ বিষয়গুলো নিয়ে প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে। এরমধ্যে জাতীয় পতাকা অবমাননার অভিযোগে সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেপ্তার করলে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনার পারদ আরও বেড়ে যায়। তার জামিন নামঞ্জুর হওয়ায় ‘চিন্ময়ের অনুসারীরা’ সাইফুল ইসলাম নামে এক আইনজীবী পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করে।
এ ঘটনার রেশ না কাটতেই ২ ডিসেম্বর আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশন কার্যালয়ে হিন্দুত্ববাদী একটি সংগঠনের হামলা হয়, যাকে পূর্বপরিকল্পিত হিসেবে বর্ণনা করে ‘ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া’ জানিয়েছে বাংলাদেশ। এসব পরিস্থিতিতে জাতীয় ঐক্যের ডাক দিতে সংলাপে বসেন প্রধান উপদেষ্টা।
প্রথমে গত ৩ ডিসেম্বর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের সঙ্গে প্রথমে বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা। এরপর বুধবার বিএনপি, জামায়াত, নাগরিক ঐক্য, গণসংহতি আন্দোলন, বিজেপি, এবি পার্টি, গণঅধিকার পরিষদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন ড. ইউনূস।
আরটিভি/আরএ/এস
মন্তব্য করুন