জমিতে একসঙ্গে তিন ফসল, কৃষকের আয় হচ্ছে দ্বিগুণ
নানা কৌশলের ব্যবহার কৃষিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসছে। এ রকম একটি কৌশল সাথি ফসল চাষ। এসব বৈচিত্র্যময় পদ্ধতিতে চাষাবাদ করে লাভবান কৃষকরা। কৃষি বায়োস্কোপ মাল্টি লেয়ার মিক্সড ক্রপিং মডেল-০১ এর মাধ্যমে একসঙ্গে তিনটা লাভজনক ফসল আবাদের আওতায় নিয়ে এসে হাসি ফুটছে ফসলের মাঠে। এতে কৃষকের আয় কয়েকগুণ বৃদ্ধি পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
কুমিল্লার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের কয়েকটি উপজেলার কৃষকরা তিনটি সাথী ফসলের (ভুট্টা, ধনেপাতা, আলু) আগাম চাষ করে লাভবান হচ্ছেন। তারা ভুট্টা চাষের পাশাপাশি প্রতিটি জমিতে ধনেপাতা ও আলুর চাষ করে রীতিমতো তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ভুট্টার বাম্পার ফলনের পাশাপাশি জমিতে আলু ও ধনেপাতার চাষও বেশ ভালো হয়েছে। আর ধনেপাতা ও আলু বিক্রি থেকেই কৃষকের ভুট্টা চাষের খরচ উঠে আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
অপর দিকে আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়া লেগেছে চুয়াডাঙ্গার সদর উপজেলার ডিঙ্গেদহের হাটখোলা গ্রামে। কৃষক দোয়াল্লিন মোল্লা এবার একই জমিতে এক সঙ্গে তিনটি লাভজনক ফসল আবাদ করেছেন।
তিনি একটা জমিতে লাউ, আবার অন্য জমিতে মাশকলাই, আলু, বেগুন। আর ২৫ শতক জমিতে আবাদ করেছি এক সঙ্গে তিন ফসল।
চলতি মৌসুমে লাউ, মিষ্টিকুমড়া, আলু, রসুন, একাঙ্গী, মরিচ, করল্লা, মাস কলাই, ফুলকপি, বাঁধাকপি, ফিলিপাইনের গেন্ডারি আবাদ করেছেন। শুধু সবজির আবাদ করেই থেমে থাকেনি তিনি। তার জমিতে আছে আম, কাঁঠাল, লিচু মেহগনির গাছ।
চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আলী হাসান বলেন, চুয়াডাঙ্গায় বছরে প্রায় ১৬শ ৬৩ হেক্টর জমিতে কলার আবাদ হয়ে থাকে। যাদের প্রযুক্তিগত জ্ঞান আছে তারা কলা আবাদের জমিতেই কয়েকটি ফসল আবাদ করছেন। তবে একটি প্যাটার্ন (এক ধরনের মাল্টি লেয়ার মিক্সড ক্রপিং টেকনিক-যেখানে একাধিক ফসল একই জমিতে একই সময়ে চাষ করা হয়) খুব জনপ্রিয় হচ্ছে বলে জানান তিনি।
দেশের কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে একই অবস্থা।
কুমিল্লার কৃষক সোহেল মিয়া বলেন, তিনি সাড়ে ১২ বিঘা জমিতে অগ্রহায়ণ মাসের শেষ সপ্তাহে প্রথমে ধনেপাতা বপন করেন। একই জমিতে পৌষ মাসের প্রথম সপ্তাহে বপন করেন ভুট্টা। ধনেপাতা বিক্রির পর একই জমিতে মাঘ মাসের শেষ সপ্তাহে ভুট্টার সঙ্গে আলু চাষ করেন। আলু তোলার পর বৈশাখ মাসের প্রথম সপ্তাহে ভুট্টা সংগ্রহ করেন।
তিনি জানান, আবাদকৃত জমি থেকে ৮৫ হাজার টাকার ধনেপাতা এবং ৬৫ হাজার টাকার আলু বিক্রি করেছেন। সেখানে ১৫ হাজার টাকা লাভ হয়েছে। আর বাজারে প্রতিমণ ভুট্টার দাম ৭৮০ টাকা। ভুট্টা বিক্রিতে এবার প্রায় আড়াই লাখ টাকা লাভ হবে। প্রতি বিঘা জমির ভুট্টাগাছ ১২ হাজার টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক ও কৃষি বায়োস্কোপের উপদেষ্টা মো. হামিদুর রহমান বলেন, বিগত কয়েকবছর ধরে আমরা কৃষক পর্যায়ে লাভজনক ফসল আবাদের কৌশলগত বিষয় নিয়ে কাজ করছি। মরিচ, সবরি কলা ও একাঙ্গী তিনটাই লাভজনক ফসল এবং এই তিনটা ফসলকে একত্রে চাষ করে জমির সর্বোত্তম ব্যবহার যেমন নিশ্চিত করা যায় তেমনি কম খরচে অধিক ফসল ফলানোর কাজটাও লাভজনক উপায়ে করা সম্ভব। একজন চাষ করলে আশেপাশে অনেক কৃষক এই ধরনের চাষাবাদে অনুপ্রাণিত হচ্ছে বলে জানান তিনি।
আরটিভি/এএইচ/এআর
মন্তব্য করুন