বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আজ
১০ জানুয়ারি আজ। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস। স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি ছিলেন সর্বকালের এই শ্রেষ্ঠ বাঙালি। সেখান থেকে মুক্ত হয়ে ১৯৭২ সালের এদিনে স্বাধীন বাংলাদেশে পা রাখেন তিনি। স্বাধীন বাংলাদেশে এই মহান নেতার প্রত্যাবর্তনে স্বাধীনতা সংগ্রামের বিজয় পূর্ণতা পায়।
১৯৭০ সালের ঐতিহাসিক নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। তবু পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী ক্ষমতা হস্তান্তরে অনীহা প্রকাশ করে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে বাংলার মুক্তকামী মানুষ।
১৯৭১ সালের ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে বঙ্গবন্ধু ঘোষণা দিয়েছিলেন ‘এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। এরপর মুক্তিপাগল বাঙালিকে দমাতে মরিয়া হয়ে ওঠে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী।
২৫ মার্চ কালরাতে ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামের অভিযানের শুরুতেই পাকিস্তানের হানাদাররা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে তার ধানমন্ডির বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়।
বাঙালি যখন স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করছে, বঙ্গবন্ধু তখন পাকিস্তানের কারাগারে প্রহসনের বিচারে ফাঁসির আসামি হিসেবে মৃত্যুর প্রহর গুনছিলেন। একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি সেনাদের আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়। তখনো পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি বঙ্গবন্ধু। গোটা জাতি তখন তার জীবনের নিরাপত্তার ব্যাপারে উৎণ্ঠিত, তার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের প্রতীক্ষায় অধীর। সেই সময় বিশ্ব নেতারা বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবিতে সোচ্চার হয়ে ওঠেন। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী শেষপর্যন্ত বন্দিদশা থেকে বঙ্গবন্ধুকে সসম্মানে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়।
বঙ্গবন্ধু পাকিস্তান কারাগার থেকে মুক্তি পান ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি। এদিন তাকে ও কামাল হোসেনকে বিমানে তুলে দেয়া হয়। সকাল সাড়ে ছয়টায় তিনি পৌঁছান লন্ডনের হিথ্রো বিমান বন্দরে। সেখানে বঙ্গবন্ধু ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হিথের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পরে ব্রিটেনের বিমান বাহিনীর একটি বিশেষ বিমানে ৯ জানুয়ারি তিনি দেশের পথে যাত্রা করেন। ১০ জানুয়ারি সকালে তিনি নামেন দিল্লিতে। বঙ্গবন্ধু সেখানে ভারতের রাষ্ট্রপতি ভিভি গিরি ও প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এসময় তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সহযোগিতার জন্য ভারতের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। সেই সঙ্গে বাংলাদেশ থেকে দ্রুত ভারতীয় সেনাদের প্রত্যাহারের কথাও জানান।
১০ জানুয়ারি বাঙালির অধীর প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশে পা রাখেন সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি শেখ মুজিবুর রহমান। বিমানবন্দর থেকে রেসকোর্স (সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) ময়দান পর্যন্ত লাখ লাখ মানুষ তাকে সংবর্ধনা জানান। সেদিন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে লাখো জনতার উদ্দেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ঘোষণা দেন, ‘রক্ত দিয়ে হলেও আমি বাঙালি জাতির এই ভালবাসার ঋণ শোধ করে যাব।’
কে/জেএইচ
মন্তব্য করুন