যেভাবে দেশে ফিরেছিলেন বঙ্গবন্ধু
নেতা আসছেন। ফিরে আসছেন মৃত্যুর কোল থেকে বন্দীদশা কাটিয়ে। হানাদারবাহিনীর নির্মম অত্যাচার সহ্য করে ফিরে আসছেন বাঙালির শ্রেষ্ঠ সন্তান। যার অহংকারে উজ্জ্বল বাঙালি সেই মহানেতা ফিরছেন তার প্রিয় বাংলায়।
প্রিয় মুজিব ভাইকে এক নজর দেখতে তাই ঢল নামে, যুদ্ধবিধ্বস্ত তেজগাঁ বিমানবন্দরে। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু শ্লোগানে রাজপথ যখন মূর্হুমূর্হু কাঁপছে, ঠিক তখনই দূর আকাশে দেখা মেলে সাদা কমেট বিমানের।
বারকয়েক স্বাধীন বাংলার রাজধানীর মুক্ত আকাশে চক্কর দিয়ে বিমানটি যখন মাটি স্পর্শ করে, তখন শ্লোগান আর উল্লাস ধ্বনিতে, কান পাতা দায়। এরপর বিমানের দরজা খুলে বেরিয়ে আসেন যে মহামানব, তিনি আর কেউ নন! তিনি স্বাধীন বাংলার স্থপতি, বাঙালি জাতির পিতা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
লাখো মানুষের করতালি আর বাঁধভাঙ্গা উল্লাসই বলে দেয়, কতোটা অপেক্ষার অবসান হয়েছিলো সেদিন। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর দেশ হানাদারমুক্ত হলেও, বিজয়ের পূর্ণতা আসে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি, জাতির জনকের দেশে ফেরার মধ্য দিয়ে।
বঙ্গবন্ধুকে কাছে পেয়ে উল্লাসে মেতে ওঠে, পুরো ঢাকা শহর। লাখ লাখ মানুষের ভালবাসায় সিক্ত হয়ে বঙ্গবন্ধু ওঠেন, ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানের মঞ্চে। এর আগে, বাংলার মাটিতে পাক হানাদারবাহিনীর আত্মসমর্পণের পর, বিশ্ব নেতাদের চাপে ৮ জানুয়ারি পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠী মুক্তি দিতে বাধ্য হন, বঙ্গবন্ধুকে।
পাকিস্তান থেকে তিনি যান, লন্ডনে। সেখানে তাকে অভ্যর্থনা জানান, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হিথ। এরপর সংবাদ সম্মেলনে যোগ দিয়ে, দ্রুত বাংলার জনগনের কাছে ফিরে যাওয়ার ব্যকুলতার কথা বলেন বঙ্গবন্ধু।
লন্ডন থেকে যান ভারতে। সেখানেও তাকে অর্ভ্যথনা জানাতে ছুটে আসেন, রাষ্ট্রপতি ভি ভি গিরি, প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীসহ বড় নেতারা।
মুক্তিযুদ্ধে সাহায্য-সহায়তা করায়, ভারতবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান, বঙ্গবন্ধু। ধন্যবাদ জানান, ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে।
জীবনের বেশিরভাগ সময় কারাবরণ ও মৃত্যুকে তুচ্ছ করে বঙ্গবন্ধু জাগিয়ে তুলেছেন বাঙ্গালি জাতিকে। বাংলার জনগণকে শিকল ভাঙ্গার আহ্বান জানিয়েছেন। যার পরিণতিতে, ’৭১ সালে নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর, বিশ্ব মানচিত্রে অভ্যূদয় ঘটে, বাংলাদেশ নামে স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্রের।
এসজে
মন্তব্য করুন