শিগগিরই দেশে বিনিয়োগের চিত্র ঘুরে দাঁড়াবে: বেপজা
বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষের (বেপজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল আবুল কালাম মোহাম্মদ জিয়াউর রহমান বলেছেন, এনার্জি, গ্যাস, আর্থিক খাত, বন্দর ব্যবস্থাপনা, ব্যবসার পরিবেশ, এলডিসি গ্রাজুয়েশন ইত্যাদির মতো কিছু চ্যালেঞ্জ দেশে এখনো আছে। তবে এসব চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে উঠে শিগগির আমরা ঘুরে দাঁড়াব। আমি আশা করব বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে আরও বেশি বিনিয়োগ করবেন। কারণ, এখন পর্যন্ত আমি দেখিনি কোনো ব্যবসায়ী বা বিনিয়োগকারী বলেছেন যে তারা এখানে আসবেন না।
অবশ্য বেপজা চেয়ারম্যান স্বীকার করেছেন যে, জুলাই আন্দোলনের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতির পাশাপাশি বৈশ্বিক সংকট, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পাশাপাশি নানা কারণে দেশে প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগ কমেছে।
সোমবার (২৭ জানুয়ারি) রাজধানীর গ্রিনরোডে বেপজা কমপ্লেক্সে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব আশার কথা শুনান তিনি।
মেজর জেনারেল আবুল কালাম মোহাম্মদ জিয়াউর রহমান বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে চীনের রপ্তানিকৃত পণ্যের ওপর বাড়তি শুল্ক আরোপ করা হতে পারে। ফলে চীনের শিল্প-কারখানাগুলো বিভিন্ন দেশে স্থানান্তরিত হবে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ সবার ওপরে আছে। একটি চীনা কোম্পানি এরই মধ্যে ১৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করবে।
যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্পের নেতৃত্বাধীন সরকার আসায় বিনিয়োগ বাড়বে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন বেপজার নির্বাহী চেয়ারম্যান আরও বলেন, আর্থিক ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় দেশের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান ও স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাগুলোর মধ্যে বেপজা প্রথম স্থান অর্জন করেছে। বেপজার বিভিন্ন রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকায় বিশ্বের ৩৮টি দেশ বিনিয়োগ করেছে।
তিনি বলেন, দেশের ইপিজেডসমূহে উৎপাদিত উল্লেখযোগ্য পণ্য সমূহের মধ্যে রয়েছে- তাঁবু ও তাঁবুর সরঞ্জাম, বাই-সাইকেল, কসমেটিকস, হলিউড মাস্ক, ক্যাম্পিং ফার্নিচার, গল্ফ শ্যাফট, উইগ ও ফ্যাশন চুল, ম্যানিকুইন, পাট পণ্য, এনার্জি সেভিং বাল্ব, ধাতব পণ্য, খেলনা, চশমা ও চশমার ফ্রেম, ক্যামেরার লেন্স, মোবাইল যন্ত্রাংশ, কার সিট হিটার, বাঁশের তৈরি কফিন, পিপিই, ফেইস মাস্ক, ব্রাইডাল গাউন, গিফট বক্স, আইল্যাশ, কাটন, পিভিসি এপ্রোন, সেইফটি স্যু, ব্যাগ, লাগেজ ইত্যাদি।
বেপজার শুরু থেকে ডিসেম্বর ২০২৪ পর্যন্ত মোট ৪৪৯টি ইপিজেডে মোট ৬৯১৪ দশমিক ৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ হয়েছে। যেখানে ৫ লাখ ২৪ হাজার ৩৮৫ জনের কর্মসংস্থান হয়েছে এবং রপ্তানি হয়েছে ১ লাখ ১৪ হাজার ৯১৩ দশমিক ৬৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। বেপজার ৪৪৯টি শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে ৩টি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে। শতভাগ বিদেশি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলো রয়েছে ‘এ’ শ্রেণিতে, যার সংখ্যা ২৫৮টি। যৌথ মালিকানার প্রতিষ্ঠানগুলো রয়েছে ‘বি’ শ্রেণিতে, যার সংখ্যা ৪৯টি এবং দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো রয়েছে ‘সি’ শ্রেণিতে, যার সংখ্যা ১৪২টি। এছাড়া ১০৮টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান অন্তর্ভুক্তির প্রক্রিয়ায় রয়েছে।
বেপজার অধীনে ৮টি ইপিজেড এবং বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলের মোট আয়তন ৩৪৪৫ একর বা ১৩.৯৫ বর্গ কিলোমিটার। এছাড়া বেপজা যশোরে ৫০৩ একর জমির ওপর ৪০০টি শিল্প প্লট তৈরি করেছে। যেখানে বার্ষিক ২৪০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ হবে। পটুয়াখালী জেলায় ৪১০.৭৮ একর জমির ওপর ৩০৬টি শিল্প প্লটে প্রায় ১৫৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে জমি অধিগ্রহণের কাজ শেষে সেখানে ভূমি উন্নয়নের কাজ শুরু হয়েছে বলে জানান বেপজা চেয়ারম্যান।
এসময় উপস্থিত ছিলেন, বেপজার ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক (জনসংযোগ) এ এস এম আনোয়ার পারভেজ, বেপজার সদস্য (বিনিয়োগ উন্নয়ন) মো. আশরাফুল কবীর, বেপজার সদস্য (প্রকৌশল) মো. ইমতিয়াজ হোসেন, সদস্য (অর্থ) আ ন ম ফয়জুল হকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
আরটিভি/এএইচ
মন্তব্য করুন