নকল সাপ্লাইকারী শিক্ষকদের ফায়ারিং স্কোয়াডে দেয়া উচিত: রাষ্ট্রপতি (ভিডিও)
যেসব শিক্ষক নকল সাপ্লাই দেন তাদের ফায়ারিং স্কোয়াডে দেয়া উচিত বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ।
মঙ্গলবার বিকেলে ওসমানী মিলনায়তনে সেরা প্রাথমিক স্কুলের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
রাষ্ট্রপতি বলেন, শিক্ষক ও অভিভাবক তাদের ছেলে-মেয়েদের নকল সাপ্লাই দেন। এর চেয়ে লজ্জার আর কিছু হতে পারে না। তাই পরীক্ষা পদ্ধতি পরিবর্তন জরুরি।
রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, নৈতিকতা বিবর্জিত শিক্ষা দেশের কোনো কাজেই আসবে না। তাই যেসব শিক্ষক নকল সাপ্লাই দিয়ে পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের পাস করাচ্ছেন তাদের ফায়ারিং স্কোয়াড দেয়া উচিত।
শিশুরা মোমের মতো উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, শিশুদের যা শিখানো হবে তারা তাই শিখবে। তাই নকল রোধে শিক্ষক ও বাবা-মাকেই সচেতন হতে হবে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, সব বাবা-মা'ই চায়, তার সন্তান ফার্স্ট-সেকেন্ড হোক, গোল্ডেন এ প্লাস পাক। কিন্তু যখন শোনা যায় যে বাবা-মা'ই ছেলেকে নকল সরবরাহ করছে- তা কী করে সম্ভব। এর চেয়ে লজ্জাজনক জঘন্য কাজ আর কি হতে পারে? এই বাপ আর মা তার ছেলে-মেয়েকে কী শিখাইতেছে? ভবিষ্যতে তারে দিয়া কী হবে? দেশের কী হবে?
--------------------------------------------------------
আরও পড়ুন: সিএনজি-অটোরিকশার মেয়াদ বৃদ্ধি আর না: বুয়েট
--------------------------------------------------------
তিনি বলেন, যেসব শিক্ষক ছেলে মেয়েদের শিখাইবো, তারা নিজেরাই... তার মার্কেট ভালা করার জন্য, প্রাইভেট পড়াইবার মার্কেট ভালা করার জন্য সে যদি প্রশ্ন কইয়া দেয়- ‘এই প্রশ্ন আইতাছে লেখ’… মার্কেট ভালো হবে, বেশি বেশি (শিক্ষার্থী) পড়তে আইব, এসব চিন্তা থেকে তারা এইগুলি করতেছে।
আবদুল হামিদ সেই সময়ের সঙ্গে আজকের পরিস্থিতির তুলনা করে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহের অনুষ্ঠানে আরও বলেন, ‘আমাদের তো বাপ-মা খবরই নিছে না। আমিতো খুব খারাপ ছাত্র আছিলাম। আমার মতো খারাপ ছাত্র যদি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হইতে পারে, তাহলে অত ভালা ছাত্র হওয়ার দরকারটা কী?
এর আগে লিখিত বক্তৃতায় তিনি বলেন, কোমলমতি শিক্ষার্থীরা যাতে সুশিক্ষায় শিক্ষিত হতে পারে এবং যে কোনো অন্যায় ও নীতি বিবর্জিত কর্মকাণ্ড থেকে দূরে থাকে, সে লক্ষ্যে শিক্ষক অভিভাবকদের উদ্যোগী হতে হবে।
মনে রাখবেন, একজন শিক্ষার্থীর শিক্ষার মূল ভিত্তি রচিত হয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। তাই প্রতিটি শিক্ষার্থী যাতে শক্ত ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত হয়ে শিক্ষাজীবন শুরু করতে পারে, তা নিশ্চিত করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। আর তা করতে পারলেই পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন ও প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা শেষ হয়ে আসবে।
অভিভাবকদের উদ্দেশে রাষ্ট্রপতি বলেন, শিশুরা জাতির ভবিষ্যৎ, তাই অভিভাবকদের প্রতি আমার অনুরোধ, জাতির উজ্জ্বল ভবিষ্যতের স্বার্থে শিশুদের নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তুলুন। পড়াশোনা ও বইয়ের ভারে জর্জরিত না করে তাদের খেলাধুলা ও সুস্থ বিনোদনের পর্যাপ্ত সময় দিন। আমরা যে আনন্দঘন শৈশব পেয়েছি, তাদেরকেও তার স্বাদ দিতে হবে।
শিক্ষকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারাই আপনাদের নীতি ও আদর্শ দিয়ে দেশের প্রতিটি শিশুকে দেশ গড়ার কারিগর হিসেবে গড়ে তুলতে পারেন। শিশুদের মাঝে নেতৃত্ব সৃষ্টি করতে পারেন। সমাজের কোন কাজটি ভালো এবং কোন কাজটি মন্দ, কোন কাজটি করলে দেশ ও জাতির উন্নয়ন ঘটবে- সে সম্পর্কে ধারণা প্রদানের পাশাপাশি ভাল কাজের চর্চা করাতে পারেন। তাদের মাঝে দেশাত্মবোধ সৃষ্টি করে দেশপ্রেমী হিসেবে গড়ে তুলতে পারেন। এ জন্য আপনাদের উদ্যোগী ও নিবেদিত হতে হবে।
জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ উপলক্ষে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি শিক্ষা পদকের জন্য মনোনীত শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠান ও আন্তঃ প্রাথমিক বিদ্যালয় সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যে পদক বিতরণ করেন।
এসএস
মন্তব্য করুন