সংসদে ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা বিল-২০১৮’ পাস
জাতীয় সংসদে ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা বিল-২০১৮’ পাস হয়েছে। আজ (বুধবার, ১৯ সেপ্টেম্বর) ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বিলটি পাসের প্রস্তাব উত্থাপন করলে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়।
বিলটি পাসের আগে জনমত যাচাই ও বাছাই কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাব দেন বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সদস্যরা। কিন্ত তাদের সেই প্রস্তাব কণ্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়।
বিলে বিধান করা হয় যে, এর কোনও বিধানের সাথে অন্য কোনও আইনের কোনও বিধান অসামঞ্জস্য হয়, তাহলে অন্য কোনও আইনের বিধানের সাথে যতটুকু অসামঞ্জস্য হয় ততটুকুর ক্ষেত্রে প্রস্তাবিত বিলের বিধান কার্যকর হবে।
বিলে বিধান করা হয় যে, কোনও ব্যক্তি দেশের বাইরে বিলের বিধানের অধীন কোনো অপরাধ সংঘটন করলে তা বাংলাদেশে সংঘটিত হয়েছে বলে বিবেচিত হবে।
বিলে বিধান করা হয়, কোনও ব্যক্তি বাংলাদেশের বাইরে থেকে দেশে অবস্থিত কোনও কম্পিউটার, কম্পিউটার সিস্টেম বা কম্পিউটার নেটওয়ার্কের সাহায্যে দেশের অভ্যন্তরে প্রস্তাবিত বিধানের অধীন কোনও অপরাধ সংঘটন করলে ওই অপরাধ দেশে সংঘটিত হয়েছে বলে বিবেচিত হবে। এছাড়া কোনও ব্যক্তি বাংলাদেশের অভ্যন্তর থেকে দেশের বাইরে এ বিধানের অধীন কোনও অপরাধ সংঘটন করেন তাহলে সে অপরাধের সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া দেশে সংঘটিত হয়েছে বলে বিবেচিত হবে।
বিলে ডিজিটাল নিরাপত্তা এজেন্সি গঠনের বিধান করা হয়েছে। এর প্রধান কার্যালয় ঢাকায় এবং প্রয়োজনে ঢাকার বাইরে দেশের যেকোনো স্থানে এর শাখা কার্যালয় স্থাপনের বিধান করা হয়।
বিলে এজেন্সির মহাপরিচালক নিয়োগ ও তার দায়িত্ব, কর্তব্য, ক্ষমতা এবং জনবল কাঠামোসহ অন্যান্য বিষয়ে বিধান করা হয়েছে।
বিলে বিধান করা হয়, মহাপরিচালকের নিজ অধিক্ষেত্রভুক্ত কোনও বিষয়ে ডিজিটাল মাধ্যমে প্রকাশিত বা প্রচারিত কোনো তথ্য-উপাত্ত ডিজিটাল নিরাপত্তার ক্ষেত্রে হুমকি সৃষ্টি করলে তিনি ওই তথ্য-উপাত্ত অপসারণ বা ক্ষেত্রমতে, ব্লক করার জন্য বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে (বিটিআরসি) অনুরোধ করতে পারবেন।
বিলে বিধান করা হয়, যদি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিকট প্রতীয়মান হয় যে, ডিজিটাল মাধ্যমে প্রকাশিত বা প্রচারিত কোনও তথ্য-উপাত্ত দেশের বা এর কোনও অংশের সংহতি, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড, নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষা, ধর্মীয় মূল্যবোধ বা জনশৃঙ্খলা ক্ষুণ্ন করে বা জাতিগত বিদ্বেষ ও ঘৃণার সঞ্চার করে, তাহলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ওই তথ্য-উপাত্ত অপসারণ বা ব্লক করার জন্য বিটিআরসিকে অনুরোধ করতে পারবেন।
বিলে বিধান করা হয়, সার্বক্ষণিকভাবে দায়িত্ব পালনের জন্য এজেন্সির অধীন একটি জাতীয় কম্পিউটার ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিম থাকবে। বিলে এ টিমের কার্যক্রম, দায়িত্ব, ক্ষমতা ইত্যাদির বিধান করা হয়।
বিলে একাধিক ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাব স্থাপন এর মাননিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার বিধান করা হয়।
বিলে একজন চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে ১১ সদস্যের ডিজিটাল নিরাপত্তা কাউন্সিল গঠনের প্রস্তাব করা হয়। বিলে কাউন্সিলের ক্ষমতা, দায়িত্ব, সভা অনুষ্ঠান ইত্যাদি বিষয়ে সুনির্দিষ্ট বিধান করা হয়।
বিলে বিধান করা হয় যে, সরকার গেজেট প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে কোনও কম্পিউটার সিস্টেম, নেটওয়ার্ক বা তথ্য পরিকাঠামোকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামো হিসেবে ঘোষণা করতে পারবে।
বিলে বিধান করা হয় যে, মহাপরিচালক এ আইনের বিধানাবলী যথাযথভাবে প্রতিপালিত হচ্ছে কিনা তা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনে, কোনো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামো পরিবীক্ষণ ও পরিদর্শন করবেন এবং এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন সরকারের নিকট দাখিল করবেন।
বিলে সাইবার বা ডিজিটাল অপরাধের জন্য সুনির্দিষ্ট দণ্ডের বিধানের প্রস্তাব করা হয়েছে। বিলের বিধান লংঘনজনিত এ অপরাধের জন্য ধরন বিশেষে ১, ৩, ৫, ৬, ৭, ১৪ বছর ও যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ৩ লাখ, ৫ লাখ ১০ লাখ ২৫ লাখ ১ কোটি, ৫ কোটি টাকা অর্থদণ্ডের বিধান করা হয়েছে।
বিলে যে সব সাইবার অপরাধের জন্য দণ্ড ও অর্থদণ্ডের বিধান করা হয়েছে তা হলো, কম্পিউটার সোর্স কোড পরিবর্তন সংক্রান্ত অপরাধ, মুক্তিযুদ্ধ বা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বা জাতির পিতার বিরুদ্ধে কোনও প্রকার প্রোপাগান্ডা বা প্রচারণা, ডিজিটাল বা ইলেকট্রনিক জালিয়াতি, ডিজিটাল বা ইলেকট্রনিক প্রতারণা, পরিচয় প্রতারণা বা ছদ্মবেশ ধারণ, আক্রমণাত্মক, মিথ্যা বা ভীতি প্রদর্শক, তথ্য-উপাত্ত প্রেরণ, প্রকাশ ইত্যাদি, অনুমতি ব্যতিত পরিচিতি তথ্য সংগ্রহ, ব্যবহার, ইত্যাদির দন্ড, সাইবার সন্ত্রাসী কার্য সংঘটনের অপরাধ ও দণ্ড, ওয়েবসাইট বা কোনও ইলেকট্রনিক বিন্যাসে ধর্মীয় মূল্যবোধ বা অনুভূতি আঘাত করে এমন কোনো তথ্য প্রকাশ, সম্প্রচার, ইত্যাদি, মানহানিকর তথ্য প্রকাশ, সম্প্রচার, ইত্যাদি, আইনানুগ কর্তৃত্ব বহির্ভূত ই-ট্রানজেকশনের অপরাধ ও দন্ড, আইন-শৃংখলার অবনতি ঘটানো, ইত্যাদি অপরাধ ও দণ্ড, কম্পিউটার বা ডিজিটাল গুপ্তচর বৃত্তির অপরাধ ও দন্ড, বে-আইনিভাবে তথ্য-উপাত্ত ধারণ, স্থানান্তর, ইত্যাদি দন্ড, হ্যাকিং সংক্রান্ত অপরাধ ও দণ্ড, অপরাধ সংঘটনে সহায়তা ও এর দণ্ড ও কোম্পানি কর্তৃক অপরাধ সংঘটন।
বিলে ক্ষতিপূরণের আদেশ, সেবা প্রদানকারীকে দায়ী না করারও বিধান করা হয়।
বিলে অপরাধ তদন্ত, তদন্তের সময়সীমা, তদন্তকারী কর্মকর্তার ক্ষমতা, পরোয়ানার মাধ্যমে তল্লাশি, পরোয়ানা ছাড়া তল্লাশি, জব্দ ও গ্রেপ্তার, তথ্য সংরক্ষণ, কম্পিউটারের সাধারণ ব্যবহার ব্যাহত না করা, তল্লাশি পদ্ধতি, তদন্তে সহায়তা বিধি প্রণয়নের ক্ষমতাসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সুনির্দিষ্ট বিধান করা হয়েছে।
জাতীয় পার্টির ফখরুল ইমাম, কাজী ফিরোজ রশীদ, সেলিম উদ্দিন, মোহাম্মদ নোমান, শামীম হায়দার পাটোয়ারী, বেগম রওশন আরা মান্নান ও বেগম নূর-ই- হাসনা লিলি চৌধুরী বিলের ওপর জনমত যাচাই, বাছাই কমিটিতে প্রেরণ ও সংশোধনী প্রস্তাব আনলে একটি সংশোধনী গ্রহণ করা হয়। বাকী প্রস্তাবগুলো কন্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়।
জেএইচ
মন্তব্য করুন