বিএনপি'র গঠনতন্ত্রের ৭ম ধারা নিয়ে বিপাকে ইসি
বিএনপির গঠনতন্ত্রে সাত নম্বর ধারা বাতিল করে সংশোধিত গঠনতন্ত্র নির্বাচন কমিশনকে গ্রহণ না করতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। হাইকোর্টের দেয়া এই নির্দেশ নিয়ে আইনি জটিলতার মধ্যে রয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) ও রাজনৈতিক দল নিবন্ধন বিধিমালার শর্ত পূরণ না করলে যেকোনো রাজনৈতিক দলকে নিবন্ধন দেয়া থেকে বিরত ও নিবন্ধন বাতিল করতে পারে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু ইসির এই দুটি আইনে এমন কোনও বিধান নেই, যার মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলো গঠনতন্ত্রে কোন ধারা রাখবে কি রাখবে না, তা নির্ধারণ করতে পারে। তাছাড়া কোনও দলের গঠনতন্ত্র গ্রহণ বা বর্জনের বিষয়েও ইসির সুনির্দিষ্ট কোনও বিধান নেই।
এই বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের কমিশনার রফিকুল ইসলাম আরটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘গঠনতন্ত্র যেকোনো দলের সাংগঠনিক ব্যাপার। এটা নিয়ে কমিশনের বলার কিছু নেই। হাইকোর্টের দেয়া নির্দেশ নিয়ে কমিশনে এখনও কোনও বৈঠক হয়নি। তবে নির্বাচন কমিশন আইনের ঊর্ধ্বে না। নির্বাচন কমিশন হাইকোর্টের আদেশ মেনে চলতে বাধ্য। এখন নির্বাচন কমিশন যদি মনে করে হাইকোর্ট কেন দিল এই ধরনের আদেশ, তাহলে বৈধ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে হাইকোর্টকেই এই ধরনের প্রশ্ন করতে হবে।’
বিএনপির গঠনতন্ত্রে সাত নম্বর ধারা বাতিল করে সংশোধিত গঠনতন্ত্র নির্বাচন কমিশনকে গ্রহণ না করার পাশাপাশি এক মাসের মধ্যে বিএনপির গঠনতন্ত্র সংশোধন কেন অবৈধ নয় এর ব্যাখ্যা ইসির কাছে চেয়েছেন হাইকোর্ট। এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৩১ অক্টোবর, বুধবার হাইকোর্ট ওই নির্দেশনা জারি করায় অনেকটা দোটানায় পড়েছে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি।
নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের মত, রাজনৈতিক দলের গঠনতন্ত্রে কি থাকবে না থাকবে সেটা তাদের নিজস্ব এখতিয়ারের বিষয়, নির্বাচন কমিশনের নয়। কমিশন রেগুলেটরি কর্তৃপক্ষ। দলগুলো আইন-কানুন মানছে কিনা তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব ইসির।
রাজনৈতিক দলগুলো সাধারণত তাদের গঠনতন্ত্র নির্ধারণ করে সাংগঠনিকভাবে। সাংগঠনিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই গঠনতন্ত্রের সংযোজন-বিয়োজন বা সংশোধন করে থাকে তারা। তেমনিভাবে ২০১৬ সালের মার্চে ৭ নম্বর ধারা বাদ দিয়ে গঠনতন্ত্রের সংশোধনী প্রস্তাব কাউন্সিলের মাধ্যমে সর্বসম্মতিক্রমে অনুমোদন দেয় বিএনপি। কিন্তু হাইকোর্টের নির্দেশ থাকায় ইসিকে এখন জবাবদিহি করতে হবে, বিএনপি ৭ নম্বর ধারা গঠনতন্ত্র থেকে বাদ দিতে পারবে কি না।
বিএনপির গঠনতন্ত্রের বাদ দেয়া ৭ নম্বর ধারাটি হলো- ১৯৭২ সালের রাষ্ট্রপতির আদেশ নম্বর ৮-এর বলে দণ্ডিত ব্যক্তি, দেউলিয়া, উন্মাদ ও দুর্নীতিপরায়ণ বা কুখ্যাত ব্যক্তি দলটির জাতীয় কাউন্সিল, জাতীয় নির্বাহী কমিটি, জাতীয় স্থায়ী কমিটি বা যেকোনো পর্যায়ের যেকোনো নির্বাহী কমিটির সদস্যপদের কিংবা সংসদ নির্বাচনে দলের প্রার্থীপদের অযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন।
হাইকোর্ট বলছে, বিএনপির গঠনতন্ত্রের এই ৭ নম্বর ধারাটি বহাল রাখতে। এছাড়া অন্য কোনও ধারা নিয়ে আপত্তি নেই হাইকোর্টের। এই হিসাবে ধারাটি বাদ দিলেও বিএনপির গঠনতন্ত্রে প্রচলিত আইন বা সংবিধান বিরোধী কোনও কিছুই থাকছে না।
সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদের ২-এর ‘ঘ’ অনুযায়ী, যদি কোনও ব্যক্তি দোষী সাব্যস্ত হয়ে দুই বছরের বেশি দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত হন এবং তার মুক্তি লাভের পর পাঁচ বছর অতিবাহিত না হয়, তাহলে তিনি সংসদ সদস্য হতে পারবেন না।
আরও পড়ুন :
এসএস
মন্তব্য করুন