ক্ষতিপূরণ পায়নি হাত হারানো শিশু নাঈম, কারখানা মালিককে তলব 

আরটিভি নিউজ

সোমবার, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ , ০১:২৮ পিএম


ক্ষতিপূরণ পায়নি হাত হারানো শিশু নাঈম, কারখানা মালিককে তলব 
ফাইল ছবি

প্রায় সাড়ে তিন বছর আগে ওয়ার্কশপে কাজ করতে গিয়ে ডান হাত হারায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলার ১৩ বছর বয়সী শিশু নাঈম হাসান নাহিদ। গত বছরের শুরুতে অসহায় শিশুটি ও তার দারিদ্রপীড়িত পরিবারকে ৩০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আদেশ দেন হাইকোর্ট। কিন্তু রায়ের এক বছর পেরিয়ে গেলেও সেই ক্ষতিপূরণ পায়নি শিশুটি। 

বিজ্ঞাপন

এ অবস্থায় আদালত অবমাননার আবেদনের প্রেক্ষিতে কারখানার মালিক হাজী ইয়াকুবকে তলব করেছেন আপিল বিভাগ। আগামী ২১ এপ্রিল তাকে আদালতে হাজির করতে কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপারকে (এস‌পি) নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। 

সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ এ আদেশ দেন। আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার ওমর ফারুক।  

বিজ্ঞাপন

এর আগে, ‘ভৈরবে শিশুশ্রমের করুণ পরিণতি’ শিরোনামে ২০২০ সালের ১ নভেম্বর একটি জাতীয় দৈনিকে প্রতিবেদন ছাপা হয়। প্রতিবেদন অনুয়ায়ী, তখন নাঈম হাসানের বয়স ১০ বছর। চতুর্থ শ্রেণিতে পড়তো। বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলার আড়াইসিধা গ্রামে। তার বাবা আনোয়ার হোসেনের পেশায় জুতা ব্যবসায়ী। করোনার প্রাদুর্ভাব শুরুর সময়ে আনোয়ার কর্মহীন হয়ে পড়েন। এ সময় সংসারের চাপ সামলাতে নাঈমকে তার মা-বাবা কিশোরগঞ্জের ভৈরবের একটি ওয়ার্কশপে কাজে দেন। এই ওয়ার্কশপে কাজ করতে গিয়েই তার ডান হাতটি মেশিনে ঢুকে যায়। শেষে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে কনুই থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয় ডান হাতটি। 

প্রকাশিত প্রতিবেদনটি যুক্ত করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশনা চেয়ে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে শিশুটির বাবা হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ওই বছরের ২৭ ডিসেম্বর হাইকোর্ট রুল দেন। রুলে শিশুটিকে দুই কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয় বিবাদীদের। একইসঙ্গে ২০২০ সালের ২৮ সেপ্টেম্বরের ওই ঘটনা নিজ কার্যালয়ের একজন কর্মকর্তাকে দিয়ে অনুসন্ধান করতে কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেওয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় রুলের শুনানি শেষে রায় ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। 

২০২৪ সালের ৩১ জানুয়ারি হাইকোর্ট তার রায়ে নাঈমকে ৩০ লাখ টাকা ফিক্সড ডিপোজিট করে দিতে নির্দেশ দেন। আদালত বলেছিলেন, চলতি বছরের এপ্রিল মাসের মধ্যে ১৫ লাখ টাকার ডিপোজিট এবং ডিসেম্বরের মধ্যে ১৫ লাখ টাকার ডিপোজিট করতে হবে। ১০ বছর পর নাঈম ডিপোজিটের টাকা উত্তোলন করতে পারবে। একইসঙ্গে শিশুটি এইচএসসি পাস না করা পর্যন্ত তাকে প্রতি মাসে ৭ হাজার টাকা করে দিতে বলা হয়েছিল। ভৈরবের নূর ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপের মালিককে এই আদেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়। 

বিজ্ঞাপন

এ বিষয়ে জারি করা রুল নিষ্পত্তি করে বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি কাজী জিনাত হকের সমন্বয়ে গঠিত তৎকালীন হাইকোর্ট বেঞ্চ এই রায় ঘোষণা করেন। আদালতে রিট আবেদনকারীর পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী ব্যারিস্টার অনীক আর হক ও অ্যাডভোকেট মো. বাকির উদ্দিন ভূঁইয়া। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী তামজিদ হাসান। তারা বিনা পয়সায় শিশুটির পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন। অন্যদিকে ওয়ার্কশপ মালিকের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, আইনজীবী আবদুল বারেক। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাশ গুপ্ত। 

পরে সে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হয়। তবে শিশু নাঈমকে ৩০ লাখ টাকা ফিক্সড ডিপোজিট করে দিতে বলা হাইকোর্টের রায় বহাল রাখেন আপিল বিভাগ। গত ১৯ নভেম্বর আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ এ আদেশ দেন। 

আরটিভি/এসএইচএম

 

 

 

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন

Loading...


© All Rights Reserved 2016-2025 | RTV Online | It is illegal to use contents, pictures, and videos of this website without authority's permission