প্রকৌশলী কামরুল ইসলাম সিদ্দিকের মৃত্যুবার্ষিকীতে দোয়া-মাহফিল
আজ পহেলা সেপ্টেম্বর, প্রকৌশলী কামরুল ইসলাম সিদ্দিকের ১৬তম মৃত্যুবার্ষিকী।
কিংবদন্তি এ প্রকৌশলীর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে রোববার (১ সেপ্টেম্বর) বিকেলে এলজিইডির কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়। মিলাদে অংশ নেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বরেণ্য প্রকৌশলী কামরুল ইসলাম সিদ্দিক ছিলেন নগর ও আঞ্চলিক পরিকল্পনাবিদ এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নের স্বপ্নদ্রষ্টা। তারই সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার ফসল আজকের স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)।
প্রকৌশলী কামরুল ইসলাম সিদ্দিককে বলা হয় গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নের রূপকার। কারণ যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের উন্নয়নে গ্রামের অর্থনীতি গতিশীল করতে তিনি হাতে তুলে নিয়েছিলেন গুরুদায়িত্ব। শুরু করেছিলেন দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের অবকাঠামো নির্মাণের কাজ।
কামরুল ইসলাম সিদ্দিক ১৯৪৫ সালের ২০ জানুয়ারি কুষ্টিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। পিতা কৃষিচিন্তক প্রয়াত নূরুল ইসলাম সিদ্দিক এবং রত্নগর্ভা মা বেগম হামিদা সিদ্দিকের দ্বিতীয় সন্তান সিদ্দিকের শৈশব ও শিক্ষা জীবনের প্রথম অধ্যায় কাটে লালন শাহ, রবীন্দ্রনাথ এবং মীর মশাররফ হোসেনের স্মৃতিধন্য কুষ্টিয়ায়।
তুখোর মেধাবী কামরুল ইসলাম সিদ্দিক ১৯৬৬ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৬৭ সালে কুষ্টিয়া জেলা পরিষদে সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে জীবন গড়ার স্বপ্ন জলাঞ্জলি দিয়ে হাতে তুলে নেন অস্ত্র। নয় মাস মুক্তি সংগ্রামে বিজয়ের পর নতুন করে শুরু করেন দেশ গড়ার সংগ্রাম।
১৯৭৭ সালে যুক্তরাজ্যের শেফিল্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আরবান এন্ড রিজিওনাল প্ল্যানিংয়ে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করেন। এলজিইডির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নে নিরলস পরিশ্রম করে হয়ে ওঠেন অবকাঠামো উন্নয়নের প্রবাদ পুরুষ। ১৯৯৯ সালে পিডিবির চেয়ারম্যান হিসেবেও সফলতার স্বাক্ষর রাখেন কামরুল ইসলাম সিদ্দিক। আধুনিক নগর কাঠামো গড়ে তোলার স্বপ্ন ছিল তার। তিনি কেবল স্বপ্নদ্রষ্ট্রাই ছিলেন না, ছিলেন স্বপ্ন বাস্তবায়নের কারিগরও।
বাংলাদেশের সড়ক যোগাযোগের ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য বিশ্বব্যাংক কামরুল ইসলাম সিদ্দিককে ১৯৯৯ সালে ইন্টারন্যাশনাল রোড ফেডারেশন কর্তৃক বর্ষসেরা ব্যক্তি ঘোষণা করেন। কাজের স্বীকৃতি হিসেবে পেয়েছেন ভাসানী স্বর্ণপদক, কবি জসীম উদ্দীন স্বর্ণপদক, আইইবি স্বর্ণপদক, শেরেবাংলা স্বর্ণপদক, বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী স্বর্ণপদকসহ বহু পুরস্কার।
২০০৮ সালের আজকের দিনে (১ সেপ্টেম্বর) কর্মচঞ্চল এই মানুষটি ৬৩ বছর বয়সে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। আমৃত্যু নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন প্রচারবিমুখ এই মানুষটি। কামরুল ইসলাম সিদ্দিক তার কাজের মধ্যে দিয়েই বেঁচে থাকবেন দেশের মানুষের মাঝে।
মন্তব্য করুন