• ঢাকা শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ৬ পৌষ ১৪৩১
logo

প্রবাসে থেকেও ঢাকায় হত্যা মামলার আসামি, বাদ দিতে চাঁদা দাবি

আরটিভি নিউজ

  ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০৩
মামলা
সংগৃহীত

বিদেশে থেকেও হত্যার অভিযোগে মামলার আসামি হলেন ওমান প্রবাসী লোকমান। মামলায় ৪৯নং আসামী করা হয়েছে তাকে। অথচ ঘটনার সময় তিনি ওমানে ছিলেন, বর্তমানেও তিনি ওমানেই অবস্থান করছেন।

শুধু তাই নয়, এই মামলায় এমন অনেকেই আছেন যারা ঘটনার সময় ঢাকায়ই ছিলেন না। কেউ কেউ নিজ কর্মস্থলে ছিলেন। তবে অভিযোগ উঠেছে পূর্ব শত্রুতার জের ধরেই তাদের আসামী করা হয়েছে। এই তালিকা থেকে নাম বাদ দিতে চাওয়া হচ্ছে মোটা অঙ্কের চাঁদা।

মামলা সূত্রে জানা যায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে গত ৫ আগস্ট রাজধানীর মিরপুর-১৪ কাফরুল পুলিশ লাইন্সের সামনে বিক্ষোভের সময় নিহত হন ভোলার চরফ্যাশনের মো. ফজলু। এ হত্যার ঘটনায় দেশের বিভিন্ন জেলার ৭১ জনসহ অজ্ঞাত আরও ২/৩শ’ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে। এসব আসামির মধ্যে ৫ জন ভোলার লালমোহন উপজেলার স্থায়ী বাসিন্দা।

এই ঘটনায় মো. ফজলুর স্ত্রীকে বাদী সাজিয়ে আজমিন জাফর ইকবাল তালুকদার কাফরুল থানায় হত্যা মামলা করান এবং নিজেই এই মামলার ৩নং সাক্ষী হন।

মামলার ৫৯ নম্বর আসামি ব্যবসায়ী মো. শাহিন, তার ছোট ভাই ৬০ নম্বর আসামি মো. রায়হান, ৬২ নম্বর আসামী ট্রাক চালক মাহবুব ও ৬৩ নম্বরে তার ছেলে সবুজকে আসামি করা হয়েছে। এদের মধ্যে কেউই ঘটনাস্থলে ছিলেন না বলে জানা গেছে। এরপরও তাদেরকে আসামি করে বাদী এবং নেতাদের কথা বলে নাম কাটানোর জন্য ১০ লাখ টাকা দাবি করেছেন মামলার সাক্ষী আজমিন।

এলাকার ব্যক্তিগত শত্রুতার জেরে মামলার সাক্ষী আজমিন জাফর ইকবাল তাদেরকে গায়েবী মামলায় জড়িয়ে নাম কাটানোর কথা বলে জনপ্রতি ৫ থেকে ১০ লাখ টাকা দাবি করেছেন। এ সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্যপ্রমাণে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।

এদিকে, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মামলায় নিরীহ কেউ যেন হয়রানির শিকার না হন, সেজন্য বিএনপি শুরু থেকেই কঠোর অবস্থানে রয়েছে। তবে বিএনপির সেই অবস্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ করে দলের একাধিক নেতার নাম ভাঙিয়ে পাঁচ জন আসামির কাছে জনপ্রতি পাঁচ থেকে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন মামলার সাক্ষী আজমিন। দরকষাকষির একপর্যায়ে বিষয়টি ৩ লাখ টাকা চায় সে।

আমিন জাফর ইকবাল ঢাকা মহানগর বিএনপির মিডিয়া প্রচার দলের সভাপতি হিসেবে ভিজিটিং কার্ড দেখাচ্ছে।

জানা গেছে, এই আজমিন ব্যক্তিগত শত্রুতাকে কেন্দ্র করে প্রবাসী, নিরীহ শ্রমজীবী, ছাত্র ও ব্যবসায়ীদের টার্গেট করে মামলায় ফাঁসিয়ে মামলা থেকে নাম বাদ দিতে কোটি টাকা আয়ের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করছেন।

তিনি এসব প্রতারণার কাজে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার নামও নিজের ভিজিটিং কার্ডে ব্যবহার করেন। আজমিনের একটি ভিজিটিং কার্ডে দেখা যায়, সেখানে তিনি নিজেকে ‘আল জাজিরা নিউজ বিডির সাংবাদিক’ হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। এছাড়াও ওই ভিজিটিং কার্ডে নিজের পরিচয় হিসেবে ‘নিউ গ্রাম বাংলা উন্নয়ন সংস্থার চেয়ারম্যান, ঢাকা ওয়ান্ডার্স ক্লাব মতিঝিলের সদস্য, সাবেক সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক ঢাকা মহানগর উত্তর জিয়া মঞ্চ, সাবেক যুগ্ম আহবায়ক ঢাকা মহানগর উত্তর তরুণ প্রজন্ম দল, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ঢাকা সরকারি বাংলা কলেজ ছাত্রদল, সাবেক সভাপতি মোহাম্মদপুর থানা জিয়া মঞ্চ’ লিখেছেন।
তার বাড়ি ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার শশিভূষণ থানার জাহানপুর ইউনিয়নে বলে জানা গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ মামলার আসামিরা আজমিন জাফর ইকবালের শ্বশুর বাড়ির লোকজন। মূলত শ্বশুরবাড়ির পারিবারিক জমিজমার বিবাদকে কেন্দ্র করে তাদেরকে দু’টি হত্যা মামলায় জড়িয়েছেন আজমিন। এখন নাম কাটানোর কথা বলে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন তিনি।

নিহত ফজলু হত্যা মামলার বাদী সুরাইয়া বলেন, আমি আমার স্বামী হত্যার বিচারের জন্য মামলা করেছি, টাকার জন্য নয়। আমার নাম বলে কেউ টাকা চেয়েছে কিনা জানি না। আমি কারও কাছে টাকা চাইনি।

সাক্ষীর শ্বশুরবাড়ি এলাকার ওমান প্রবাসীসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলার বিষয়ে সুরাইয়া বলেন, আমি তো সব আসামিকে চিনি না। ওই ঘটনায় অনলাইনে সার্চ দিয়ে মামলা সাজানো হয়েছে। নিরীহ কাউকে আমি মামলায় ফাঁসাব না।

আসামিদের কয়েকজনের বাড়ি তার শ্বশুরবাড়ির এলাকার স্বীকার করে আজমিন জাফর ইকবাল তালুকদার বলেন, আমি মামলার বিষয়টি প্রথমে জানতাম না, পরে জেনেছি। তাদের একজন আমার সাথে যোগাযোগ করেছিল। তখন একপর্যায়ে নাম কাটাতে তিন লাখ টাকার কথা বলেছি। নাজিম উদ্দিন আলম ভাই চরফ্যাশনের নেতা, মামলাও যেহেতু চরফ্যাশনের লোকজনের, সেজন্য আলম ভাইয়ের সাথে কথা বলব বলে জানিয়েছি। তারা ইচ্ছা করে টাকা-পয়সার আলাপ করে এখন আমাকে ফাঁসাতে চাচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি।

বিএনপি নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য নাজিম উদ্দিন আলম বলেন, ছাত্র আন্দোলনে অনেক মানুষ গণহত্যার শিকার হয়েছেন। বিএনপি এবং বর্তমান সরকার এর বিচার করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তবে কোনভাবেই নিরীহ মানুষকে এসব মামলায় জড়ানোর বিন্দুমাত্র সুযোগ নেই। কেউ যদি আমার বা বিএনপির নাম ভাঙিয়ে আসামি বাণিজ্যের অপচেষ্টা করে তাহলে তাকে বেঁধে রেখে খবর দিবেন। এ বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আরটিভি/এএইচ

মন্তব্য করুন

Bangal
rtv Drama
Radhuni
  • রাজধানী এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
সিরাজগঞ্জে বিএনপির কর্মী খুন, ২৯ জনের নামে মামলা 
ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনে একদিনে ৯৭৯ মামলা 
বাঘারপাড়ায় আ.লীগের ৩০৮ নেতাকর্মীর নামে মামলা
ববির ২১ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি