রয়্যাল এনফিল্ড কিনতে মধ্যরাত থেকে ক্রেতার লাইন
মোটরসাইকেলের জগতে আইকনিক ব্র্যান্ড ‘রয়্যাল এনফিল্ড’ বাংলাদেশে যাত্রা শুরু করেছে। ইতোমধ্যে লঞ্চ হয়েছে ব্র্যান্ডের চারটি মডেলের মোটরসাইকেল। মোটরসাইকটি কিনতে মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) সকাল ১০টা থেকে শুরু হয়েছে প্রি-বুকিং। আর প্রি-বুকিং দিতে গতকাল মধ্যরাত থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন ক্রেতারা। এখনও শতশত মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন।
মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) রাজধানীর তেজগাঁওয়ে রয়্যাল এনফিল্ডের ফ্ল্যাগশিপ শোরুম ঘুরে দেখা যায়, কাঙ্ক্ষিত মোটরসাইকেল পেতে শোরুমের ভেতর রয়েছেন শতাধিক ক্রেতা। প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা শোরুমের ভেতরেও প্রি-বুকিং নিতে হিমশিম খাচ্ছেন।
শোরুমের একজন নিরাপত্তাকর্মী জানিয়েছেন, সকালের দিকে যারা প্রি-বুকিং দিয়েছেন তারা রাত ৩টা ও এরপর থেকে লাইনে এসে দাঁড়িয়েছেন।
প্রি-বুকিং দেওয়া এক ক্রেতা বলেন, এখানে আসছি সকাল ৯টা ৪০ মিনিটের দিকে, কিন্তু শো-রুমে ঢুকতে পেরেছি দুপুর দেড়টার দিকে। তারপর প্রি-বুকিং দিতে পেরেছি। পছন্দের বাইক প্রি-বুকিং দিতে আমার এক বছরের অপেক্ষা শেষ হলো আজ।
এখন পর্যন্ত কী পরিমাণ মোটরসাইকেল প্রি-বুকিং হয়েছে, সে বিষয়ে কিছু জানাতে পারেনি বাংলাদেশে রয়্যাল এনফিল্ডের প্রস্তুতকারক ও পরিবেশক ইফাদ মোটরস লিমিটেডের কর্মকর্তারা।
এ বিষয়ে তাদের একজন বলেন, অনেকে অনলাইনে প্রি-বুকিং দিয়েছেন। আবার অনেকেই নগদ টাকায় প্রি-বুকিং দিতে চান, তারা আজ এখানে এসেছেন। ফলে এখন আমরা সবাই ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছি। এখনই এই হিসাবটা বলা যাচ্ছে না। প্রি-বুকিং মানি ধরা হয়েছে ২৫ হাজার টাকা।
এর আগে, ২১ অক্টোবর এই শোরুমে এক অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে দেশের বাজারে প্রথমবারের মতো রয়্যাল এনফিল্ড মোটরসাইকেলের যাত্রা শুরু হয়। অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বাংলাদেশের বাজারের জন্য ৩৫০ সিসির চারটি মডেলের মোটরসাইকেল লঞ্চ করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে— হান্টার, ক্লাসিক, বুলেট ও মিটিয়র।
ইফাদ মোটরস লিমিটেডের রয়্যাল এনফিল্ড বিভাগের হেড অব বিজনেস মমিনুর রহমান তানভীর জানান, বাজারে হান্টার মডেলের দাম শুরু হয়েছে তিন লাখ ৪০ হাজার টাকা থেকে; ক্লাসিক মডেলের দাম শুরু হয়েছে চার লাখ ৫ হাজার টাকা থেকে; বুলেট মডেলের দাম শুরু হয়েছে চার লাখ ১০ হাজার টাকা থেকে এবং মিটিয়র মডেলের দাম শুরু হয়েছে চার লাখ ৩৫ হাজার টাকা থেকে।
তিনি বলেন, এই চারটি মডেলে থাকবে উন্নত ফুয়েল ইনজেকশন সিস্টেম এবং পরিমার্জিত সিঙ্গেল-সিলিন্ডার ‘জে’ (J) সিরিজের ইঞ্জিন। এ ছাড়া রং ও ব্রেকিং সিস্টেমের ওপর ভিত্তি করে আলাদা ভেরিয়েন্টও থাকবে। রয়্যাল এনফিল্ডের মোটরসাইকেল কিনতে হলে প্রি-বুকিং বাধ্যতামূলক। ক্রেতারা এটি ওয়েবসাইট ও শোরুম থেকে প্রি-বুকিং করতে পারবেন।
জানা গেছে, রয়্যাল এনফিল্ড উৎপাদনের জন্য কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় একটি সর্বাধুনিক উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপন করেছে ইফাদ মটরস লিমিটেড। এটি স্থানীয়ভাবে বিশ্বমানের মোটরসাইকেল উৎপাদন করতে সক্ষম।
দীর্ঘ দুই দশক ইঞ্জিন সক্ষমতার ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করে রাখার পর ২০২৩ সালে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত ৩৭৫ সিসি পর্যন্ত ইঞ্জিন সক্ষমতার মোটরসাইকেলের অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ সরকার।
উল্লেখ্য, রয়্যাল এনফিল্ডের মোটরসাইকেল উৎপাদনের যাত্রা শুরু ১২৩ বছর আগে, ইংল্যান্ডে। মূলত সামরিক ব্যবহারের জন্য মোটরসাইকেলটির উৎপাদন শুরু হয়। এটি এখনো চালু থাকা বিশ্বের প্রাচীনতম টু–হুইলার ব্র্যান্ড।
জানা যায়, ১৯৫০–এর দশকে রয়্যাল এনফিল্ড ভারতের মাদ্রাজ মোটরসের সঙ্গে যৌথভাবে এনফিল্ড ইন্ডিয়া গঠন করে এবং ভারতীয় সেনাবাহিনীর জন্য বুলেট ৩৫০ মোটরসাইকেল সংযোজন শুরু করে। পরের কয়েক দশকে রয়্যাল এনফিল্ড ভারতীয় মোটর সাইক্লিংয়ের প্রতীক হয়ে ওঠে। যুক্তরাজ্যে ১৯৭০ সালে এর উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে রয়্যাল এনফিল্ড ভারতীয় শিল্পগোষ্ঠী আইশার মোটরসের শতভাগ নিয়ন্ত্রণাধীন।
আরটিভি/একে
মন্তব্য করুন