ভুল বুঝতে পেরে গ্রেপ্তার সেই সাংবাদিককে ছেড়ে দিয়েছে ডিবি
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলার অভিযোগে দায়েরকৃত একটি মামলায় আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত এক ছাত্রলীগ নেতার নামের সঙ্গে মিল থাকার কারণে গ্রেপ্তার হন মেহেদি হাসান সাগর নামে এক ফটো সাংবাদিক। পরবর্তীতে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ওঠা দাবির মুখে যাচাই-বাছাই শেষে নিজেদের ভুল বুঝতে পারে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) রাত সাড়ে ১০টার দিকে ডিবি কার্যালয় থেকে ছাড়া পান মেহেদি। রাতে ওই সাংবাদিকের প্রতিষ্ঠান ঢাকা ট্রিবিউন এক প্রতিবেদনের মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
ঢাকা ট্রিবিউন জানায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গত ১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাস্পাস এলাকায় ভাঙচুরের অভিযোগে একটি মামলায় ঢাকা ট্রিবিউনের আলোকচিত্রী মেহেদি হাসান সাগরকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে পাঁচটার দিকে রাজধানীর কাকরাইল এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করার কথা জানায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। মেহেদি সে সময় সাফজয়ী নারী ফুটবল দলের ছাদখোলা বাসযাত্রার ছবি তোলার জন্য অফিসিয়াল অ্যাসাইনমেন্টে ছিলেন।
যে মামলায় সাংবাদিক মেহেদি হাসান সাগর গ্রেপ্তার হয়েছিলেন তার এজাহার সূত্রে জানা যায়, মামলায় ১৩৪ নম্বর আসামি মুজিব হল ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদি হাসান সাগর। আর গ্রেপ্তার ফটোসাংবাদিক সাগর সাংবাদিকতা শুরুর আগে একই হল শাখার ছাত্রলীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ছিলেন।
দুইজনের নামই মেহেদি হাসান সাগর। তাদের ডিপার্টমেন্ট এবং সেশনও একই। কিন্তু এজহারে যার নাম আছে তার পদবি সাংগঠনিক সম্পাদক। আর যাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তিনি তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ছিলেন এবং অনেক আগে থেকেই রাজনীতি ছেড়ে ফটো সাংবাদিকতা করছেন। এপিসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমেও কাজ করেন তিনি।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পালি ও বুদ্ধিস্ট স্টাডিজ বিভাগের অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ অফিসার বিশ্বজিত বড়ুয়া গণমাধ্যমকে বলেন, ‘মেহেদি হাসান সাগর নামের দুইজনই আমাদের বিভাগের শিক্ষার্থী। তাদের দুজনকেই চিনি। একজন সাংবাদিক আরেকজন রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।’
নিউ ইয়র্কভিত্তিক বার্তা সংস্থা এপির ঢাকা অফিসের একজন সাংবাদিক জানান, মেহেদি তাদের সঙ্গে খণ্ডকালীন (স্ট্রিংগার) হিসেবে কাজ করেন। জুলাই-আগস্টে এপির টেলিভিশনের জন্য তার কাছ থেকে ভিডিও ফুটেজ নিয়েছিলেন তারা।
ছাত্র আন্দোলনের ছবি তুলে আলোচিত ফটোসাংবাদিক জীবন আহমেদ এ ব্যাপারে তার ফেসবুকে লিখেন, ‘যে ছেলেটি জুলাইয়ে ক্যামেরা হাতে ছোটাছুটি করত, আজ সেই ছেলেটা হত্যা মামলার আসামি!’
গ্রেপ্তার মেহেদির হলের একজন বন্ধু নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আন্দোলনের পুরোটা সময় ঝুঁকি নিয়ে ছবি তুলেছেন এই মেহেদি হাসান সাগর। আর হল ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাগরকে ক্যাম্পাসে রাম দা হাতে দেখা গেছে, যার ছবি এবং ফুটেজও রয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে সাংগঠনিক সম্পাদক সাগরকে ধরিয়ে দিতে পোস্টারও করা হয়।
সাংবাদিক মেহেদীর গ্রেপ্তারের বিষয়টি ডিএমপির ফেসবুক পেজে পোস্ট করা হলে বিষয়টি নিয়ে সাগরের গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালীর বাউফলেও তীব্র সমালোচনার শুরু হয়।
আরটিভি/এসএইচএম
মন্তব্য করুন