‘আরবরা যা পারেনি হামাস তা দেখিয়ে দিয়েছে’
আরব-ইসরাইল যুদ্ধে পরাজয়ের পর প্রথমে মিশর ও জর্ডান এবং এরপর আরব বিশ্বের দেশগুলো ইসরাইলমুখী হয়ে পড়ে। কিন্তু গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামাসের আক্রমণের পর পরিস্থিতি সম্পূর্ণরূপে পরিবর্তিত হয়ে যায়। যেখানে আরব বিশ্ব মাত্র কয়েক দিনে পরাজিত হয়েছিল সেখানে ফিলিস্তিনের যোদ্ধারা মাসের পর মাস তাদের প্রতিরোধ সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। ফিলিস্তিনের পাশে লেবাননের হিজবুল্লাহ, ইয়েমেনে হুথি, ইরাকের প্রতিরোধ যোদ্ধারা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করছে। আর ইরান সরাসরি ইসরাইলের সামরিক স্থাপনাগুলোতে আক্রমণের মাধ্যমে ইসরাইলকে কোণঠাসা করে ফেলেছে বলে মনে করেন ইরানের আল মুস্তফা (সা.) আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশস্থ কান্ট্রি ডিরেক্টর হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলেমিন শাহাবুদ্দীন মাশায়েখী।
ফিলিস্তিন ও লেবাননে ইসরাইলের অব্যাহত বর্বর হামলার প্রতিবাদে এক আলোচনা সভায় শুক্রবার (১ নভেম্বর) এসব কথা বলেন তিনি।
শাহাবুদ্দীন মাশায়েখী বলেন, ৭০ বছরের অধিক সময়কাল ধরে যায়নবাদী ইসরাইল ফিলিস্তিনের জনসাধারণের উপর নির্যাতন চালিয়ে আসছে এবং তাদের ভূখণ্ড জবরদখল করে যাচ্ছে। আরব-ইসরাইল যুদ্ধে পরাজয়ের পর প্রথমে মিশর ও জর্ডান এবং এরপর আরব বিশ্বের দেশগুলো ইসরাইলমুখী হয়ে পড়ে। কিন্তু গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামাসের আক্রমণের পর পরিস্থিতি সম্পূর্ণরূপে পরিবর্তিত হয়ে যায়। যেখানে আরব বিশ্ব মাত্র কয়েক দিনে পরাজিত হয়েছিল সেখানে ফিলিস্তিনের যোদ্ধারা মাসের পর মাস তাদের প্রতিরোধ সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। ফিলিস্তিনের পাশে লেবাননের হিজবুল্লাহ, ইয়েমেনে হুথি, ইরাকের প্রতিরোধ যোদ্ধারা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করছে।
তিনি আরো বলেন, কিছু কিছু দেশ মৌখিকভাবে ফিলিস্তিনকে সমর্থন করার কথা বলে ইসরাইলের সাথে সব ধরনের সম্পর্ক বজায় রেখে চলেছে। ইসরাইল ও তার দোসরদেরকে নিজেদের ভূমি ব্যবহার করে ফিলিস্তিন ও প্রতিরোধ আন্দোলনের জন্য সংগ্রামরত দেশগুলোতে আক্রমণের সুযোগ তৈরি করে দিচ্ছে। এরকম কপটতা পরিহার করে যদি সত্যিকার অর্থে মুসলমানরা একতাবদ্ধ হয়ে যায়নবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করে তাহলেই মুসলমানরা সফল হতে পারে।
সভায় খেলাফত মজলিসের মহাসচিব প্রফেসর ড. আহমদ আব্দুল কাদের বলেন, গত বছরের অক্টোবর মাসের আগে আরব বিশ্বের পরিস্থিতি এমন হয়ে পড়েছিল যে, কতিপয় আরব দেশ ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেওয়ার চিন্তা করতে থাকে। কিন্তু অক্টোবর মাসের যুদ্ধ সব হিসাব নিকাশকে বদলে দেয়। আরব দেশগুলো নিজেদের পরিকল্পনা থেকে দূরে সরে আসতে বাধ্য হয়। তিনি বলেন, মুসলিম দেশগুলো ঐক্যবদ্ধ না হলে ফিলিস্তিন মুক্ত করা সম্ভব নয়। আর মুসলমানদের ঐক্য সৃষ্টি না হওয়ার পেছনে কারণ হলো দেশগুলোতে ইসলামপন্থী সরকার না থাকা। যদি দেশগুলোতে ইসলামপন্থী সরকার থাকত তবে মুসলমানরা একতাবদ্ধ হওয়ার সুযোগ লাভ করত। তিনি ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের উদাহরণ টেনে বলেন, ইরানে বিপ্লব হওয়ার কারণেই তাদের পক্ষে সম্ভব হয়েছে মজলুম ফিলিস্তিনের পাশে দাঁড়ানোর।
আলোচনা সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের চেয়ারম্যান ও আল কুদস কমিটি বাংলাদেশ-এর সভাপতি অধ্যাপক ড. শাহ্ কাউসার মুস্তাফা আবুলউলায়ী বলেন, মুসলিম বিশ্বে বর্তমানে যে সংকট বিরাজ করছে তা মোকাবেলায় মুসলমানদের ঐক্যের বিকল্প নেই। মুসলিম দেশসমূহ ঐক্যবদ্ধ হওয়ার মাধ্যমেই কেবল দানবীয় ইহুদিবাদী আগ্রাসনকে প্রতিহত করা সম্ভব। তিনি বলেন, ন্যাটোর ন্যায় মুসলিম দেশগুলোর একটি সামরিক জোট গঠন করা এখন সময়ের দাবি। ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো অর্থনৈতিক জোট গঠন করে মুসলিম দেশসমূহ অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জন করতে পারে। তিনি সমস্ত মুসলিম উম্মাহকে আল্লাহর হুকুম মোতাবেক সম্মিলিত হতে উদাত্ত আহবান জানান।
সভায় ইসলামী শিক্ষা উন্নয়ন পরিষদ, বাংলাদেশ-এর সভাপতি অধ্যক্ষ ড. একেএম মাহবুবুর রহমান বলেন, ইমাম খোমেইনী (রহ) মুসলমানদের দুর্বলতার অন্যতম কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন যে, মুসলমানরা তাদের শত্রু-মিত্র চিনতে পারে না। আর যারা চিনতে পারে তারা শাসনক্ষমতাকে আঁকড়ে থাকার লোভে ইসলামের শত্রুদেরকে সহযোগিতা করে। তাই আমাদের প্রয়োজন শত্রু-মিত্রকে চেনা। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে ফিলিস্তিন প্রসঙ্গ আসা দরকার যাতে তরুণ প্রজন্ম এ বিষয়ে জানতে পারে, সচেতন হতে পারে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের চেয়ারম্যান ও আল কুদস কমিটি বাংলাদেশ-এর সভাপতি অধ্যাপক ড. শাহ্ কাউসার মুস্তাফা আবুলউলায়ীর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের সিনিয়র প্রফেসর ড. কেএম সাইফুল ইসলাম খান, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব অধ্যাপক ড. আহমদ আব্দুল কাদের, অধ্যক্ষ মুহাম্মাদ শওকাত হোসেনসহ অনেকে।
আরটিভি/এএইচ
মন্তব্য করুন