বিগত সরকারের নিয়োগপ্রাপ্ত উপসচিবের অনিয়মে জর্জরিত চিকিৎসা অনুষদ
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের এক এমপির সুপারিশে বিধিমালা ভঙ্গ করে নিয়োগ পেয়েছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে বাংলাদেশ রাষ্ট্রীয় চিকিৎসা অনুষদের বর্তমান সচিব (ভারপ্রাপ্ত) ডা. মো. সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে। এ ছাড়াও বিগত সরকারের আমলে আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপির সহযোগিতায় বিভিন্ন ধরনের দুর্নীতির অভিযোগও আছে তার বিরুদ্ধে। আছে নারী কর্মকর্তাদের সঙ্গে অশোভন ও অশালীন আচরনেরও অভিযোগ। এতসব অভিযোগের পরও বহাল তবিয়তে তিনি এই সরকারের আমলেও সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। এখনও চালিয়ে যাচ্ছেন তার অপর্কম ও দুর্নীতি।
প্রতিষ্ঠানের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার অভিযোগ, কর্মীদের মধ্যে কোন্দলসহ বিভিন্নভাবে অসহযোগিতায় ইন্ধন জুগিয়ে যাচ্ছেন এই কর্মকর্তা। নিজের কাছে একক ক্ষমতা রাখার ব্যাপারেও তিনি সিদ্ধহস্ত।
তাদের সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, ২০০৮ সালের ২৮ মে প্রতিষ্ঠানটির সহকারী সচিব পদে যোগদান করেন সাইফুল ইসলাম। তারপর ২০১৩ সালে সংরক্ষিত নারী এমপি অধ্যক্ষ খাদিজা খাতুন শেফালীকে দিয়ে উপসচিব পদের জন্য সুপারিশ করেন। সেই সুপারিশপত্রে খাদিজা খাতুন লেখেন, ‘আবেদনকারী আমার স্বামী ও আওয়ামী পরিবারের সন্তান। উপসচিব পদে তাকে পদোন্নতি দেওয়ার জন্য জোর সুপারিশ করছি।’
এই সুপারিশের পাশাপাশি সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলা আওয়ামী লীগের একটি প্রত্যায়নপত্রও জমা দেন তৎকালীন এমপি অধ্যক্ষ খাদিজা খাতুন শেফালী। তার প্রেক্ষিতে ডা. মো. সাইফুল ইসলামকে উপসচিব পদে পদায়ন করা হয়। তারপর থেকেই তিনি বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। হিসাবরক্ষক কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসানের সঙ্গে মিলে দুর্নীতি, দেশ জুড়ে থাকা আই এইচ টি ম্যাটস অধিভুক্তির পরিদর্শনে অনিয়মসহ অন্যতম কাণ্ডারি হয়ে ওঠেন তিনি। তাকে নিয়ে ২০১৫ সাল থেকে শুরু করে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদও প্রকাশ হয়। অভিযোগ ওঠে দুর্নীতির। যদিও, বাংলাদেশ রাষ্ট্রীয় চিকিৎসা অনুষদের প্রবিধানমালা (৩) অনুযায়ী, অনুষদের কোন কর্মকর্তা-কর্মচারী তার বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার জন্য কোন মন্ত্রী বা সংসদ সদস্যের নিকট শরণাপন্ন হবে না, যা আইনত দণ্ডনীয়। এই বিধান কাগজে কলমে থাকলেও বহাল তবিয়তে চাকরি করে যাচ্ছেন ডা. মো. সাইফুল ইসলাম।
তবে, শুধু অর্থ কেলেঙ্কারি ও সুপারিশে চাকরিই নয়, তার বিরুদ্ধে আছে নারী কর্মীদের বিরুদ্ধে অশোভন ও অশ্লীল আচরনের অভিযোগ। এসব বিষয় নিয়ে সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে প্রাতিষ্ঠানিক অভিযোগ জানানোর পাশাপাশি থানায়ও সাধারণ ডায়েরি করেছিলেন উচ্চমান সহকারী মোছা. মাকসুদা আক্তার। কিন্তু, সেসব বিষয়ে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া তো হয়ইনি, উল্টো আগের সরকারের মন্ত্রী ও এমপির সুপারিশে বর্তমানে সচিব (ভারপ্রাপ্ত) পদে আসীন হয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন বিতর্কিত এ কর্মকর্তা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা দাবি করেন, সাইফুল ইসলামের কারণে পুরো প্রতিষ্ঠান আজ ধ্বংসের মুখে। তাকে দ্রুত সময়ে শাস্তির আওতায় না নিয়ে এলে সারাদেশে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়বে।
এসব অভিযোগের ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে ডা. মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘সব অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা, ষড়যন্ত্রমূলক ও ভিত্তিহীন। একবিন্দুও সত্য নয়।’
মন্তব্য করুন