দেশে অসংখ্য বিশ্ববিদ্যালয় থাকলেও শিক্ষার্থীরা যোগ্য হচ্ছে না: ড. শামসুদ্দিন
মানবসম্পদ বিশেষজ্ঞ ড. মুহম্মদ শামসুদ্দিন বলেছেন, দেশে পঞ্চাশেরও অধিক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। দেড় শতাধিক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। কিন্তু আমাদের শিক্ষার্থীদের যোগ্য হয়ে উঠছে না। বিশ্ব বাজারে চাকরির সুযোগ থাকা সত্ত্বেও যোগ্যতা ও দক্ষতা না থাকায় তারা সুযোগ হারিয়ে ফেলছে।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইসলামিক ফাইন্যান্সের (বিআইআইএফ) উদ্যোগে ‘টোয়েন্টি ফার্স্ট সেঞ্চুরি হিউম্যান ক্যাপিটাল ফর ফাইন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউশন্স’ শীর্ষক সেমিনারে এ সব কথা বলেন মানবসম্পদ বিশেষজ্ঞ ড. মুহম্মদ শামসুদ্দিন।
সোমবার (৬ জানুয়ারি) রাজধানীর মতিঝিলে বিআইআইএফ এর কনফারেন্স হলে সেমিনারটি অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এতে কি-নোট স্পিকার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্বব্যাংক, ইউএনডিপি, ইউএসএইড, ডিএফআইডি-ডিএএনআইডিএ, এডিএনওসি, ইউরোপিয়ান কমিশন, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের কনসালটেন্ট ও আন্তর্জাতিক মানবসম্পদ বিশেষজ্ঞ ড. মুহম্মদ শামসুদ্দিন।
ড. মুহম্মদ শামসুদ্দিন বলেন, আমাদের দেশের কর্মক্ষম জনসংখ্যাকে বিশ্বমানের জনসম্পদে পরিণত করতে মানব সম্পদ ব্যবস্থার বিকল্প নেই। দেশে পঞ্চাশেরও অধিক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। দেড় শতাধিক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। কিন্তু আমাদের শিক্ষার্থীদের যোগ্য হয়ে উঠছে না। বিশ্ব বাজারে চাকরির সুযোগ থাকা সত্ত্বেও যোগ্যতা ও দক্ষতা না থাকায় তারা সুযোগ হারিয়ে ফেলছে। এদের সঠিক ক্যারিয়ার প্লানিংয়ের আওতায় আনা উচিত। সঠিক প্লাটফর্ম গঠনের মাধ্যমে তারা ক্যারিয়ার বেজড স্কিল অর্জনে উৎসাহী হবে এবং ভবিষ্যৎ বিশ্ব বাজারের উপযোগী দক্ষ গ্রাজুয়েট তৈরি হবে।
শিক্ষার্থীদের আত্মবিশ্বাসী হওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি আরো বলেন, এ দেশে বেশি শিক্ষিতরা বেশি স্বার্থপর ও আত্মকেন্দ্রিক বলেই অধিকাংশ মানুষ সমস্যা ভোগ করে। নিজের যোগ্যতা বাড়িয়ে আত্মশক্তি- আত্মবিশ্বাসে বলিয়ান হয়ে নিজের চেষ্টায়ই নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে। সততা ও দক্ষতার সমন্বয় প্রয়োজন। এছাড়া মানবিক ও নৈতিক মূল্যবোধ এবং পেশাদারিত্বও খুব বেশি দরকার। কে কত বছর চাকরি করছে প্রমোশনে তা বিবেচনা করা ঠিক নয়, পারফরমেন্স ও কন্ট্রিবিউশনকে বিবেচনা করতে হবে।
ড. মুহম্মদ শামসুদ্দিন বলেন, চাকরিকেন্দ্রিক যেকোন কাজ পেলেই করা ঠিক না। নিজের পছন্দ-আগ্রহ, দক্ষতা, ক্যারিয়ার ও সম্ভাবনাকে বিবেচনা করে কর্মক্ষেত্র ঠিক করতে হবে। বিদেশে অদক্ষ শ্রমিকদের পাঠানোর সংকটটা হচ্ছে দক্ষদেরও মূল্যায়ন হয় না। এজন্য প্রয়োজনে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের মাধ্যমে যথাযথ উদ্যোগ ও পদক্ষেপ দরকার।
বিআইআইএফ এর প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ও মহাপরিচালক ড. এম. আবদুল আজিজের সভাপতিত্বে এতে বক্তব্য দেন রিলায়েন্স গ্রুপের সাবেক এমডি মুহাম্মাদ আব্দুল জব্বার, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্রফেশনাল ডেভেলপমেন্টের কাজী মুহাম্মাদ মুর্তজা আলী, সাবেক সিনিয়র সচিব মো. সাইফুল্লাহ, এনসিসি ব্যাংকের এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. শফিউল্লাহ, সেন্ট্রাল শরীয়াহ্ বোর্ড ফর ইসলামিক ব্যাংকস অব বাংলাদেশ এর সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল্লাহ শরীফ, ইসলামী ব্যাংকের ফরেন রেমিটেন্স ডিভিশনের মো. আনিসুর রহমান, বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক ড. মুহাম্মাদ আমির হোসেন, ড. গোলজারে নবী ও মো. সাইদুল ইসলামসহ অনেকে।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, সবাইকে নিয়ে চিন্তা করলে দায়িত্বজ্ঞান বৃদ্ধি পায়। তারাই জাতীয় সম্পদ হবে, বিশ্বের সম্পদ হবে, উম্মাহর সম্পদ হবে; যারা মানব পুঁজিকে ব্যবহার করে মানব উন্নয়নের জন্য কাজ করতে সক্ষম। যারা ব্যবস্থাপনায় অপারদর্শী তারা সেবার মান বাড়াতে পারে না, সামাজিক সমস্যার সমাধান করতে পারে না, ন্যায়পরায়ণতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে না। আসলে মেরুদণ্ডহীনদের গুরুত্বপূর্ণ পদে বসিয়ে রেখে এবং ইসলামিক মূল্যবোধকে গুরুত্ব না দিয়ে কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন কখনোই সম্ভব হবে না।
আরটিভি/এএইচ
মন্তব্য করুন