তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীরকে স্মরণ করলো মানিকগঞ্জবাসী
বরেণ্য নির্মাতা তারেক মাসুদ ও বিশিষ্ট সাংবাদিক মিশুক মুনীরের নবম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। তাই আজ নানা আয়োজনে তাদেরকে স্মরণ করেছে মানিকগঞ্জবাসী। ২০১১ ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন দেশের এই দুই কৃতিসন্তানসহ পাঁচজন।
বৃহস্পতিবার (১৩ আগস্ট) দুপুরে দুর্ঘটনাস্থল ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের ঘিওর উপজেলার জোকায় নির্মিত স্মৃতি স্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ, বৃক্ষ রোপণ এবং নিরাপদ সড়ক, ঢাকা-মানিকগঞ্জ-পাটুরিয়া রেল লাইন স্থাপন ও পাটুরিয়া-দৌলতদিয়ায় দ্বিতীয় পদ্মা সেতু সেতুর দাবিতে মানববন্ধন করেন তারা।
তারেক মাসুদ-মিশুক মনির স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদ, মানিকগঞ্জ প্রেসক্লাবসহ বেশ কয়েকটি সামাজিক সংগঠন এই কর্মসূচীর আয়োজন করে।
জেলা একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি দীপক ঘোষ, মানিকগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব চক্রবর্তী, সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম বিশ্বাস, স্মৃতি পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রিপন আনসারী, বারসিকের সমন্বয়কারী বিমল রায়, মানিকগঞ্জ লেখক সংঘের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলামসহ অনেকেই বক্তব্য রাখেন।
বক্তারা বলেন, ঢাকা-আরিচা সড়ক প্রশস্ত করা হলেও এখনও দুর্ঘটনার হার কমেনি। রাজধানী ঢাকার সাথে মানিকগঞ্জসহ পশ্চিম বঙ্গের যোগাযোগের ক্ষেত্রে ঢাকা-আরিচা সড়ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অদূর ভবিষ্যতে এর গুরুত্ব আরও বাড়বে, যা সড়ক পথে মেটানো সম্ভব নয়। একমাত্র রেলপথ নির্মাণ করলেই এই সমস্যার দুর হবে। ঢাকা-মানিকগঞ্জ-পাটুরিয়া রেল লাইন স্থাপন ও পাটুরিয়া ঘাট এলাকায় দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নির্মাণের দাবী জানাচ্ছি আমরা।
উল্লেখ্য, ২০১১ সালের ১৩ আগস্ট ‘কাগজের ফুল’ নামের একটি চলচ্চিত্র শুটিং স্পট থেকে ঢাকায় ফেরার পথে জোকায় চুয়াডাঙ্গা ডিলাক্সের একটি বাসের সাথে তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীরকে বহণকারী মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে নিহত হন তারেক মাসুদ ও মিশুক মনির সহ নিহত হন পাঁচ জন।
ওই ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে ঘিওর থানায় মামলা করে। বেপরোয়া গতিতে বাস চালিয়ে পাঁচজনের মৃত্যুর ঘটনায় ২০১৭ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি বাসচালক জামির হোসেনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেন মানিকগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আল-মাহমুদ ফায়জুল কবীর। রায়ের পর জামির হোসেন (৬০)কে প্রথমে মানিকগঞ্জ জেলা কারাগার ও পরবর্তীতে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী রাখা হয়েছিল। কারাবন্দী বাসচালক শহীদ সোহরাওয়ার্দী হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এই মাসের এক তারিখ মারা যান।
এছাড়া, তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীরের পরিবারের পক্ষ থেকে মানিকগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মোটরযান অধ্যাদেশ অনুযায়ী বাস-মালিক, চালক ও ইনস্যুরেন্স কোম্পানির বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণ চেয়ে পৃথক দুটি মামলা করা হয়। পরে সংবিধানের ১১০ অনুচ্ছেদ অনুসারে মামলা দুটি বাদীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে নিম্ন আদালত থেকে হাইকোর্টে যায়। এই মামলা শুনানি ও নিষ্পত্তির জন্য হাইকোর্টের বেঞ্চ নির্ধারণ করে দেন প্রধান বিচারপতি। হাইকোর্ট শুনানি শেষে তারেক মাসুদের পরিবারের করা ক্ষতিপূরণ মামলায় ২০১৭ সালের ৩ ডিসেম্বর রায় দেন। রায়ে তারেক মাসুদের পরিবারকে ৪ কোটি ৬১ লাখ ৭৫ হাজার ৪৫২ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে বলা হয়।
এসএ/জিএ
মন্তব্য করুন