• ঢাকা মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
logo

পদ্মা-মেঘনার বলে সাগরের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে 

চাঁদপুর প্রতিনিধি, আরটিভি নিউজ

  ০২ সেপ্টেম্বর ২০২০, ২১:২৫
ইলিশ সাগর পদ্মা
ফাইল ছবি

ভরা মৌসুমেও ইলিশের দেখা নেই চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনা নদীতে। কাঙ্ক্ষিত ইলিশ না পেয়ে হতাশ জেলেরা। চাঁদপুরের মৎস্য আড়তে এখন চাঁদপুরের ইলিশ বলে যেসব ইলিশ বিক্রি হচ্ছে সেগুলোর অধিকাংশ লক্ষ্মীপুর, হাতিয়া, সন্দীপ, বরিশাল, ভোলাসহ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা। আবার অনেক ইলিশ বার্মা থেকেও আসা। চাঁদপুর নৌ-সীমানার পদ্মা-মেঘনা নদীতে বিগত বছরের তুলনায় এ বছর রূপালী ইলিশের আকাল চলছে। যার ফলে জেলে ও মৎস্য ব্যবসায়ীরা ইলিশ মাছ চড়া দামে বিক্রি করতে দেখা গেছে। এতে করে সাধারণ ক্রেতারা ইলিশ ক্রয় করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন। অনেকের অর্থ থাকার কারণে ইলিশ ক্রয় করতে পারলেও অধিকাংশ ক্রেতা ইলিশ ক্রয় করতে না পেরে খালি হাতে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। যা কিছু কম দামে বিক্রি হচ্ছে তার অধিকাংশ ইলিশ মাছই পচা। এসব পচা মাছের সঙ্গে কিছু কিছু ভালো ইলিশও বিক্রি হচ্ছে।

আষাঢ় ও শ্রাবণ মাসের পুরো সময়টাই ইলিশের ভরা মৌসুম ছিল। কিন্তু সেই সময় পেরিয়ে এখন শুরু ভাদ্র মাস। এরপরও নদীতে ইলিশের দেখা নাই। প্রায় ইলিশ শূণ্যতা বিরাজ করছে চাঁদপুরের পদ্মা- মেঘনা নদীর বুকে। যাও পাওয়া যায় তার বেশিরভাগই সাগরের। সেই ইলিশের দামও সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। এক কেজি সাইজ বা তার নিচের এক একটা ইলিশ মাছ ঘাটেই বিক্রি হচ্ছে হাজার থেকে ১২শ’ টাকায়। আর জাটকা সাইজের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৫০০ টাকা কেজি দামে। অন্যদিকে স্বাদ কাছাকাছি থাকায় দক্ষিণাঞ্চলের এসব ইলিশকেই চাঁদপুরের ইলিশ বলে স্থানীয় আড়তে বিক্রি করা হচ্ছে। এখন প্রতিদিন ১০-২০টি ট্রাকে করে দক্ষিণাঞ্চল থেকে শত শত মণ ইলিশ এনে চাঁদপুরে বিক্রি করা হচ্ছে। সেখানকার ৫০০-৬০০ টাকা কেজি দরের ইলিশ চাঁদপুর বড় স্টেশন আড়তে এনে বিক্রি করা হয় ৮০০-১০০০ টাকা দরে।

ইলিশ ব্যবসায়ী আকবর আলী, মো. বিপ্লব ও সম্রাট হোসেন বলেন, এখন ইলিশের ভরা মৌসুম। কিন্তু বাজারে ইলিশের আমদানি নেই বললেই চলে। এই সময়টাতে অন্যান্য বছরে ১০ হাজার থেকে ১৫ হাজার মণ ইলিশ আমদানি হতো। কিন্তু বর্তমানে ইলিশ আমদানি হচ্ছে তিনশ থেকে চারশ মণ মাত্র। এর ফলে ইলিশের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে কিছুটা। বর্তমানে হাতিয়া, সন্দীপ, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর থেকে কিছু ইলিশ চাঁদপুরে আমদানি হচ্ছে। তবে যেই পরিমাণে আমদানি হচ্ছে চাহিদা তার কয়েক গুণ বেশি রয়েছে। ভরা মৌসুমে ইলিশ আমদানি না হলে আমাদের অনেক লোকসান গুণতে হবে।

চাঁদপুর মৎস্য বণিক সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাজী মো. শবেবরাত জানান, ইলিশের আমদানি কম, দামও বেশি। গত এক সপ্তাহ যাবত ঘাটে ইলিশ আমদানি দুই তৃতীয়াংশ কমে গেছে। লোকাল নদীর মাছতো নাই বললেই চলে। ঈদের পর টানা কয়েক দিন গড়ে এক দেড় হাজার মণ ইলিশ আমদানি ও সরবরাহ ছিল। এখন সরাদিনে পাঁচশ মণ ইলিশ আমদানি করা হচ্ছে না।

চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মাহমুদ জামান বলেন, সবার পক্ষে ইলিশ চেনা কঠিন। এর সমাধান পাওয়াও কঠিন। অন্য অঞ্চলের ইলিশ চাঁদপুরের ইলিশ বলে সবাই চালিয়ে দেয়। তবে এক্ষেত্রে চাঁদপুরের সুনাম রক্ষায় সংশ্লিষ্ট সবাইকে সতর্ক হয়ে কাজ করতে হবে। ক্রেতাদেরও যাচাই-বাছাই করে ইলিশ কিনতে হবে।

এ ব্যাপারে চাঁদপুর মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও ইলিশ গবেষক ড. মো. আনিছুর রহমান বলেন, নদীতে অমাবশ্যা ও পূর্ণিমার ওপর ভিত্তি করে জোয়ার-ভাটায় প্রভাব পড়ে। ভরা পূর্ণিমা বা অমাবশ্যার সময়টাকে বলে ভড়াকাতাল। আর ভরা পূর্ণিমা ও অমাবশ্যার মাঝামাঝি সময়টাকে বলে মরাকাতাল। মরাকাতালের সময়টাতে নদীতে জোয়ার-ভাটার প্রভাব কম থাকে। তিনি বলেন, বর্তমানে মরাকাতাল চলছে। তাই মাছ কিছুটা কম পাচ্ছে জেলেরা। তবে আর কিছুদিন পরেই ভরা পূর্ণিমাতে ইলিশে জেলেদের জাল ভরে উঠবে বলে আশা করেন তিনি। তাছাড়া নদীর বিভিন্ন স্থানে ডুবোচর ও দূষণের ফলে চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনা নদীতে ইলিশের মৌসুমেও জেলেরা তাদের কাঙ্খিত ইলিশ পায় না বলে জানান তিনি।

নিয়ম মেনে নদী শাসন ও দূষণরোধ করতে পারলে চাঁদপুরেও কাঙ্খিত ইলিশ পাবে জেলেরা। বিগত বছরগুলোর ন্যায় এ বছরও ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করছেন মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও ইলিশ গবেষক ড. মো. আনিছুর রহমান।

জেবি

মন্তব্য করুন

Bangal
rtv Drama
Radhuni
  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
ভারতে ইলিশ রপ্তানি বন্ধ চেয়ে করা রিট খারিজ
১০ দিনেও খোঁজ মেলেনি ৪ জেলের
৬ হাজার টাকায় বিক্রি হলো এক ইলিশ
পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা-বেনাপোল ট্রেন চলবে যেদিন থেকে