দুর্দিনে চাল-ডাল-আলু পেয়ে ভিজলো বাউল শিল্পীদের চোখ
‘আমার ভাঙ্গা তরী, ছেড়া পাল/ চলবে আর কত কাল/ ভাবি শুধু একা বসিয়া/ রে দয়াল, এভাবে আর চলবে কত কাল/ তরী কিনারায় ভিড়াইয়া/ ভাবি শুধু কাঁদিয়া/যাবে কী এমনি দিন হাল/ রে দয়াল, এভাবে আর চলবে কতকাল...’ জনপ্রিয় একটি বাউল গানের কলি এটি।
করোনায় মানিকগঞ্জ জেলার সিংগাইর উপজেলার বায়রা গ্রামের বাউল শিল্পীদের অবস্থা এখন ওই গানের কলির চাইতেও খারাপ। কতদিন ধরে, কোথাও গানের আয়োজন নেই। বন্ধ হয়ে গেছে আয়-উপার্জন। নিদারুণ কষ্টে আছেন বাউল শিল্পীরা। অনেকের ঘরেই খাবার না থাকায় পরিবার-পরিজন নিয়ে তারা মানবেতর জীবন-যাপন করতে বাধ্য হচ্ছেন। কেউ কেউ ধার-দেনায়ও জড়িয়ে পড়েছেন।
করোনাকালে সরকারি-বেসরকারি অনেক মানবিক সহায়তা কর্মসূচি চালু থাকলেও এসব বাউল শিল্পীদের ভাগ্যে সে ধরনের কোনো সহায়তাও জুটেনি। এই দুঃসময়ে তাদের পাশে দাঁড়ালে তাদের কষ্ট কিছুটা হলেও লাঘব হবে এমন চিন্তা থেকেই এগিয়ে এসেছে পরিবেশ বার্তা এবং 'চাল-ডাল-আলু' নামক দুটি প্রতিষ্ঠান। তারা গ্রামের ২০ বাউলশিল্পীর পাশে দাঁড়িয়েছেন।
বাউল জাহাঙ্গীর বলেন, করোনার অনেক আগে থেকেই বাউল শিল্পীরা বেকার হয়ে বসে আছেন। কোনো আয়-উপার্জন নেই। গানের মধ্য দিয়ে আমরা মানুষকে বিনোদন দেই। দেশ-জাতি গঠনের কথা বলি। মানুষের আধ্যাত্মিক ও মানবিক উন্নয়নের কথা বলি। আর এই গানের মাধ্যমে আয়-উপার্জন করাই আমাদের পেশা। কিন্তু দীর্ঘদিন কোন অনুষ্ঠানের আয়োজন নেই। আয়-উপার্জন বন্ধ।
সুজন দেওয়ান জানান, শিল্পী-যন্ত্রী-দোহারী (সহযোগী) সবাই এখন কর্মহীন বেকার বসে আছেন। আমাদের বাউলরা এখন খুব কষ্টে আছেন, কিন্তু তাদের দেখার কেউ নেই। অন্যপেশার কর্মহীন লোকদের মতো বাউল শিল্পীদের প্রতিও একটু দৃষ্টি দিলে কষ্টটা কিছুটা লাঘব হতো।
চাল ডাল আলু’র সমন্বয়ক ফেরদৌস আহমেদ উজ্জল আরটিভি নিউজকে বলেন, আমরা ঢাকা শহরের নিম্ন আয়ের মানুষদের নিয়ে কাজ শুরু করলেও দেশজুড়েই প্রান্তিক মানুষের দু:খ দুর্দশায়ও এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি। কিন্তু আমাদের সামর্থ্য সামান্য। আমরা চাই সরকার এই বাউলদেরসহ সাধারণ মানুষের দায়িত্ব গ্রহণ করুক। অনুষ্ঠান শেষে আয়োজকরা আবারও বাউলদের পাশে দাঁড়ানোর সমাজের সামর্থ্যবানদের ও সরকারের প্রতি আহবান জানান।
আয়োজকদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন উন্নয়ন কর্মী তারিক হোসেন মিঠুল, বিমল রায়, শিমুল বিশ্বাস, নজরুল ইসলাম, এসএম নাঈম প্রমূুখ।
এসজে
মন্তব্য করুন