আপিল করতে ঢাকায় আসছেন মিন্নির বাবা
রিফাতকে রক্ষার চেষ্টা ছিল মিন্নির অভিনয়: আদালত
বরগুনার আলোচিত রিফাত হত্যা মামলার পূর্ণাঙ্গ রায়ের কপি হাতে পেয়ে উচ্চ আদালতে আপিল করতে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর। আজ শনিবার (৩ অক্টোবর) সন্ধ্যা ৭টার দিকে বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালত থেকে পূর্ণাঙ্গ রায়ের সার্টিফায়েড কপি হাতে পেয়ে তিনি ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন। এদিকে আগামীকাল রোববার (৪ অক্টোবর) সকালে মিন্নিসহ ৬ জনের ডেথ রেফারেন্সের নথি হাইকোর্টে পৌছানোর কথা রয়েছে।
পূর্ণাঙ্গ রায়ে বলা হয়- ‘মিন্নিই ছিল রিফাত হত্যার মূল হোতা। ঘটনাস্থলে রিফাতকে কোপানোর সময় তাকে রক্ষার চেষ্টা ছিল মিন্নির অভিনয়। বরং সুকৌশলে রিফাতকে হত্যায় সহায়তা করেছে সে।’
মিন্নির আইনজীবী মাহবুবুল বারী আসলাম বলেন, রায়ের কপি আজ সন্ধ্যার দিকে হাতে পেয়েছি। রায়ের কপি নিয়ে মিন্নির বাবা আজ রাতেই ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়েছেন। আগামীকাল রোববার (৪ অক্টোবর) উচ্চআদালতে আপিলের জন্য আবেদন করবেন তিনি।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর বরগুনার জেলা ও দায়রা জজ আছাদুজ্জামান চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করেন। মৃত্যুদণ্ডের পাশাপাশি ৬ আসামির সবাইকে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা করেন আদালত। এ হত্যার ঘটনায় পুলিশ ২৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দিলেও তার মধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামির বিচার চলে এ আদালতে।
আরও পড়ুন:
‘বাবা কনডেম সেলে আমি ভালো নেই’
কারাগারের কনডেম সেলে মিন্নি ছাড়া আর কোনও নারী নেই
ফাঁসির রায় ঘোষণার সময় যেমন ছিলেন মিন্নি
কারাগার থেকে মুঠোফোনে বাবা-মায়ের সঙ্গে মিন্নির কান্নাকাটি
ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- মৃত রিফাতের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি (২০), রাকিবুল হাসান রিফাত ফরাজি (২৪), আল কাইউম ওরফে রাব্বি আকন (২২), মোহাইমিনুল ইসলাম সিফাত (২০), রেজওয়ান আলী খান হৃদয় ওরফে টিকটক হৃদয় (২৩) ও হাসান (২০)।।
এছাড়াও মামলার অপর ৪ আসামি রাফিউল ইসলাম রাব্বি (২১), সাগর (২০), মুসা (২৩) ও কামরুল ইসলাম সাইমুনকে (২২) খালাস দেওয়া হয়। রায় ঘোষণার পর মিন্নিসহ ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত ছয় আসামিকে বরগুনা জেলা কারাগারের কনডেম সেলে রাখা হয়েছে। এই কনডেম সেলে রিফাত হত্যার ৬ আসামি ছাড়া অন্য কোনো বন্দিই নেই বলে কারা সূত্রে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট ঘটনার মামলার রায়ে কি আছে? কেনই বা সাক্ষী থেকে মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত হলেন মিন্নি, সেই বিষয়ে বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়েছে।
রায়ের ২১৭ পৃষ্ঠায় বলা হয়, এ মামলার ভিডিও ফুটেজ দুটি এই মামলার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও জীবন্ত সাক্ষ্য। এসময় মিন্নির সাহায্য করার ঘটনা রক্ষা করার কৌশল মনে হলেও সে তার স্বামীকে রক্ষা করতে ঢাল না হয়ে অন্যদের দিকে নির্ভীকভাবে নিরস্ত্র করার চেষ্টা করছিল। যাতে আসামিদের সাথে তার সম্পর্কের গভীরতা প্রকাশ পায়।
রায়ের ২৩২ পৃষ্ঠায় বলা হয়, রিফাত হত্যা পরিকল্পনার মূল উদ্যোক্তা আসামি মিন্নি। তার উদ্যোগেই আসামি নয়ন বন্ড সাড়া দেয় এবং তারা পরামর্শ করে পরিকল্পনাটি প্রণয়ন করে। আসামি নয়ন বন্ড আসামি রিফাত ফরাজীর সাথে পরামর্শ করে চূড়ান্ত করে এবং সে অনুযায়ী, ঘটনার সময় আসামি নয়ন বন্ড, রিফাত ফরাজী, রাব্বী আকন, টিকটক হৃদয়, সিফাত, মো. হাসান ও মিন্নি পরিকল্পনা মোতাবেক ভিকটিম রিফাত ফরাজীর হত্যার প্রমাণিত ভূমিকা পালন করে। নয়ন বন্ড ও রিফাত ফরাজী ভিকটিম রিফাত শরীফকে কোপানোর সময় অভিনয় করছিলেন মিন্নি। সম্মিলিত কোপানোর ফলেই রিফাত মারা যায়।
কেএফ/পি
মন্তব্য করুন