‘নোয়াখালীর ঘটনার জন্য থানার ওসিই দায়ী’
নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে এক নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ঘটনায় ৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ তবে ঘটনার একমাস পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিও দেখে উদ্যোগী হওয়ায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে৷ এমনকি এই ঘটনার জন্য থানার ওসিকেই দায়ী করেছেন সাবেক এক পুলিশ কর্মকর্তা। খবর ডয়েচে ভেলে।
গত ২ সেপ্টেম্বরের ঘটনা হলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নির্যাতনের ভিডিওটি ভাইরাল হয় গত শনি ও রোববারের দিকে৷ এরপরই বর্বরোচিত ঘটনাটি জানতে পারে পুলিশ৷ তাও বেগমগঞ্জ থানা পুলিশ জানতে পারেনি, কোনো ব্যবস্থাও নেয়নি। নোয়াখালী জেলার এসপির নজরে এলে তিনি দুর্বৃত্তদের গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেন এবং তারপর তৎপর হয় পুলিশ৷
এ ঘটনায় নারী নির্যাতনের ও আরেকটি পর্নোগ্রাফি আইনে দুটি মামলায় ৯ জনকে আসামি করা হয়েছে৷ ন্যাক্কারজনক এ ঘটনায় এ পর্যন্ত ৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷
গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- রহমত উল্যা, আবদুর রহিম, ঘটনার মূলহোতা দেলোয়ার বাহিনীর প্রধান দেলোয়ার, মামলার প্রধান আসামি বাদল, একলাশপুর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন ওরফে সোহাগ মেম্বার ও একই ইউনিয়নের পূর্ব একলাশপুর গ্রামের লোকমান মিয়ার ছেলে সাজু (২১)।
স্থানীয় ঘটনা একমাসেও কেন তারা জানতে পারলেন না- এই প্রশ্নের জবাবে বেগমগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হারুন অর রশীদ বলেন, ‘আমাদের কেউ জানায়নি৷ কেউ অভিযোগও করেনি৷ ফলে আমরা জানতে পারিনি৷ ফেসবুকে ভিডিও ভাইরাল হলে আমরা জানতে পারি৷’
ওসির এই জবাবটি গ্রহণযোগ্য নয় বলে মনে করেন পুলিশের সাবেক এআইজি এবং ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা বিভাগের সাবেক প্রধান সৈয়দ বজলুল করিম৷ তিন বলেন, ‘কেউ জানাবে সেজন্য পুলিশের বসে থাকার সুযোগ নেই৷ অনেক সময় প্রভাবশালীদের কারণে অসহায় মানুষ মুখ খোলে না৷ কিন্তু পুলিশের তো তথ্য সংগ্রহের নিজস্ব চেইন থাকে৷ গ্রামের চৌকিদারও তাদের তথ্য দিতে বাধ্য৷ আর এখন থানা পর্যায় পর্যন্ত গোয়েন্দা সংস্থা কাজ করে৷’
তিনি বলেন, ‘এর জন্য ওই থানার ওসি দায়ী৷ হয় তিনি জেনেও ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার জন্য গোপন করেছেন অথবা তিনি থানায় কিছু খেয়ে ঘুমিয়ে কাটান৷ তার দায়িত্ববোধ বলে কিছু নেই৷’
নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার একলাশপুর ইউনিয়নে এক মাস আগে এই মধ্যযুগীয় বর্বরতার ঘটনা ঘটে নির্যাতিতার নিজ ঘরে৷ দুর্বৃত্তরা নারীর ঘরে ঢুকে তাকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন করে৷ তিনি তাদের পা ধরে ‘বাবা’ডেকেও রেহাই পাননি৷ নির্যাতকরা নির্যাতনের ঘটনা মোবাইল ফোনের ক্যামেরায়ও ধারণ করে উল্লাস প্রকাশ করে৷
আরও পড়ুনঃ
গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন: ইউপি সদস্যসহ গ্রেপ্তার আরও ২
মেয়ের সন্ধান জানতে চাওয়ায় বাবাকে পেটানোর ভিডিও ভাইরাল
হিলিতে দুই ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিককে জেল-জরিমানা
ঘটনার একমাস পর ভাইরাল হওয়া ভিডিও দেখে পুলিশের নড়েচড়ে বসা এবং শুরুতেই ভুক্তভোগীর পরিবারকে জড়ানোর চেষ্টাকে কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না মানবাধিকার কর্মীরা৷ তারা মনে করেন, আসলে এটা অপরাধীদের সাথে পুলিশের যোগাযোগ থাকার কারণেও ঘটনাটি এতদিন চাপা থাকতে পারে৷
মানবাধিকারকর্মী এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সাবেক নির্বাহী পরিচালক শিপা হাফিজ বলেন, ‘২০১৫ সালে শিশু রাজন হত্যার ঘটনায়ও আগে পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি৷ ফেসবুকে আসার পর তারা তৎপর হয়৷ তারা আগে জানলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি৷ পুলিশ একটি অকার্যকর এবং রাজনৈতিক বাহিনীতে পরিণত হয়েছে৷ যাদের ক্ষমতা আছে, প্রভাব আছে তাদের পিছনে ছুটে বেড়াচ্ছে৷ সাধারণ মানুষের জন্য পুলিশ নয়৷ রাস্তায় ১০টা ধর্ষণ হলেও তারা ফিরে তাকাবে না৷ আমাদের মন্ত্রীরা, জনপ্রতিনিধিদের কেউ কি এখন পর্যন্ত বলেছেন প্রতিদিন ধর্ষণ হচ্ছে, আমরা লজ্জিত?’
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা বিভাগের সাবেক প্রধান সৈয়দ বজলুল করিম বলেন, ‘পুলিশ তার দায়িত্ব থেকে অনেকটাই সরে যাচ্ছে৷ তারা মানুষের জন্য কাজ না করে ক্ষমতার দিকে তাকিয়ে থাকে। যার ফল এই ভয়াবহ পরিস্থিতি৷’
পি
মন্তব্য করুন