বুয়েট ছাত্র আবরার হত্যার একবছর
হত্যাকারীদের ফাঁসি যেন ওর দাদা দেখে যেতে পারেন: আবরারের মা
‘এখন আমার একটাই দাবি আবরারের হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হোক এবং তা দ্রুত কার্যকর হোক; যেন ওর বৃদ্ধ দাদা দেখে যেতে পারেন।’ বুয়েটের মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যার একবছরে তার মা রোকেয়া খাতুন এই একটাই দাবি জানান।
কুষ্টিয়া শহরের পিটিআই রোডের বাসায় গিয়ে দেখা যায়, আবরারের জামাকাপড়, বইপত্র, ব্যবহৃত জিনিসপত্রে প্রিয় ছেলেকে খুঁজে ফিরছেন তার মা। আবরারের পায়ের নতুন জুতা দেখিয়ে তার মা বলেন, এক সপ্তাহও পরতে পারেনি জুতাটা। আবরারের বিভিন্ন জিনিসপত্রের দিকে নির্বাক তাকিয়ে থাকেন তিনি। চোখের পানি যেন কোনও বাধা মানে না। মাঝে বারান্দার গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে থাকেন। এই বুঝি ব্যাগ কাঁধে করে আবরার রাস্তা ধরে আসবে।
কাঁদতে কাঁদতে আবরারের মা বলেন, ‘যাকে কোনোদিন আমরা একটা চড়ও মারিনি। সবাই দেখেছে আমার সেই আবরাকে কত নির্মমভাবে মারা হয়েছে। এখন একটাই দাবি সব আসামীর সর্বোচ্ছ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড চাই। আর এই মৃত্যুদণ্ড যেন এত তাড়াতাড়ি কার্যক্রর হোক যাতে আবরারের বৃদ্ধ দাদা দেখে যেতে পারেন। ওর দাদা ওকে কোলেপিঠে করে অনেক কষ্টে মানুষ করেছিল। তার এখন ৯০ এর উপরে বয়স। আমাকে প্রশ্ন করে- তোমার ছেলের হত্যার বিচার কবে হবে? আমি দেখে যেতে পারব না? এই কথার কোনো উত্তর দিতে পারি না। সবতো আমার হাতে নেই। মামলার সাক্ষ্য শুরু হয়েছে। ওর আবরার বাবা সাক্ষ্য দিতে ঢাকায় অবস্থান করছেন। আবরারের মা বলেন, যেন বিচার দ্রুত হয়। সবারই যেন মৃত্যুদণ্ড হয় এবং তা যেন দ্রুত কার্যক্রর হয়।
আরও পড়ুন :
অনরবত কষ্টের পানি ঝরতে থাকা চোখ বন্ধ করে দম নিয়ে আবরার মা বলেন, এত ভালো ছেলে, ওকে এত নির্মমভাবে মরতে হবে কোনদিন ভাবতেও পারিনি। মা হিসেবে অনেক সময় রাগ হয়, মনে মনে বলি ওদেরকে হাতের কাছে পেলে পেটাবো, কিন্তু দেশে তো আইন আছে, একথা আমি বলতে পারি না, দেশের আইন অনুসারেই চলছি।
তিনি বলেন, ওই সময় দেশের সব ইউনিভার্সিটির ছেলেরা যেভাবে বিচার দাবিতে তোলপাড় করেছে আমি দেশের ওইসব শিক্ষার্থীর জীবনের নিরাপত্তা চাই। শিক্ষাজীবন শেষ করে দেশের সব শিক্ষার্থী যেন তার মায়ের কাছে ফিরে যেতে পারে। কোনো মা যেন এই চিন্তা না করে যে আমার সন্তান ফিরে আসবে তো?’
আবরার ফাহাদের কথা মনে হলে চোখের পানি ধরে রাখতে পারেন না প্রতিবেশীরাও। প্রতিবেশী রহমত আলী বলেন, মেধাবী একটা ছাত্র কি যে কষ্ট দিয়ে মারলো, শুনলে চোখের পানি আটকায় না। আমরা এর সকল হত্যাকারীদের মৃত্যুদণ্ড চাই।
কুষ্টিয়া সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা আতাউর রহমান আতা বলেন, আবরারের পরিবার যেন সঠিক বিচার পায় আমি সেই দাবি করব।প্রধানমন্ত্রী তো কাউকেই ছাড় দেন না। ওইসব দুষ্কৃতকারী যারা সংগঠনের নাম ভাঙিয়ে এতবড় কাণ্ড ঘটিয়েছে তাদেরকে সঠিকভাবে চিহ্নিত করে সবারই যেন সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়া হয়।
পড়ার টেবিল
আবরারের ছোট ভাই ফাইয়াজ আবরারও এখন শহরের এই বাড়িতেই থাকেন। ভাইয়ের রুমের পাশেই তার রুম। মাঝে ভাইয়ের রুমের শূন্য বিছানা গুছিয়ে দেন তিনি, ভাইয়ের এটা সেটা নেড়ে আবার যত্নে সাজিয়ে রাখেন।
আবরারের শূন্য বিছানা
ফাইয়াজ আবরার বলেন, করোনার কারণে বেশ-কিছুদিন বন্ধ ছিল বিচার কাজ। আবার শুরু হয়েছে। এখন মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে। তিনজন আসামি এখনও গ্রেপ্তার হয়নি, তাদেরকে দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি করি।
গত বছরের ৬ অক্টোবর রাতে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এর শেরে বাংলা হলের ২০০৫ নম্বর কক্ষে একদল বিপথগামী ছাত্ররা ৬ ঘণ্টা ধরে নির্মম নির্যাতন করে মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদকে হত্যা করে। পরদিন ৭ অক্টোবর সকালে তার লাশ উদ্ধার হলে প্রতিবাদে সারাদেশ বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। ঘটনার পর ভূমিকার জন্য আন্দোলনরত শিক্ষার্থী, মিডিয়া, প্রশাসন ও প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে আবরারের মা বলেন, রায় ও তা কার্যক্রর পর্যন্ত সবাই যেন তার পাশে থাকেন।
জিএ
মন্তব্য করুন