মোটা শরীরেই মাসুদের বোঝা
অস্বাভাবিক ওজন নিয়ে জীবনযুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছেন পঞ্চগড়ের মাসুদ রানা (২৮)। বয়স যত বাড়ছে ততোই তার জীবন অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ এর দিকে। স্থুল শরীরের কারণে পরিবারের অনেকটা বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছেন মাসুদ রানা। কারণ এখন তার শরীরের ওজন ১৪৮ কেজি। উচ্চতা ৫ ফিট ৬ ইঞ্চির ওপরে। নিজের দেহের এই অতিরিক্ত ওজন নিয়ে দিশেহারা। নিজের প্রয়োজনে হাঁটা-চলা করতেও বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে তার নিজের শরীর।
সেই মোটা শরীর নিয়েও কষ্ট করে স্নাতক পাস করেছেন। স্কুলজীবনের পঞ্চম শ্রেণিতেই মাসুদ রানার ওজন ৬২ কেজি। যতই বয়স বেড়েছে ততই তার শরীরের ওজন অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। কোনও চিকিৎসাই কাজে আসেনি তার শরীরের ওজন কমাতে। ২০১৮ সালে স্নাতক পাস করেছেন এই মোটা শরীর নিয়ে। তবুও বর্তমানে সে সমাজের বোঝা। কারণ চাকরির ইন্টারভিউতে অংশগ্রহণ করেছে কয়েকবার। তবে তার শরীর দেখে তাকে আর কেউ কাজে নেইনি। অতিরিক্ত দেহের ওজনের এই যুবকের বাড়ি পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার বেঙ্গহারি বনগ্রাম ইউনিয়নের কেরামতপাড়া গ্রামে।
সে ওই গ্রামের সাধারণ কৃষক আইনুল হকের ছেলে। কৃষক আইনুল হকের কৃষিই একমাত্র উপার্জনের উৎস। ভিটেমাটির পার্শে সামান্য কিছু জমিতে কৃষি উৎপাদন করে তাদের সংসার চলে। বয়সের ভাড়ে আইনুল হকও ধীরে ধীরে বার্ধ্যক্যে পরিণত হচ্ছেন। একদিকে অতিরিক্ত মোটা দেহের কারণে মাসুদ রানা কোনও কাজেই বাবাকে সাহায্য করতে পারছে না। নিজের বাড়িতেই এখন অসহায় হয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন মাসুদ রানা।
চিকিৎসার খরচও আর যোগাতে পারছে না তার পরিবার। শরীরের ওজনও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে তার। বিয়ের বয়সও পার হয়ে গেছে মোটা দেহের কারণ তাকে কোন মেয়ের বাবা তাদের মেয়ের সঙ্গে বিয়ে দিতে অস্বীকৃতি জানায়।
মাসুদ রানার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পঞ্চম শ্রেণি থেকে তার শরীরের ওজন বাড়তে থাকে। তবে তার পরিবার সে সময় ভেবেছিল এমনিতেই কমে যাবে তার শরীর। অষ্টম শ্রেণিতে যখন তার শরীর অস্বাভাবিক হয়েছে; তখন চিকিৎসা নিতে শুরু করে। বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা, এমনকি ক্লাসে যেতেই বিব্রত হয়েছিল সব সময়।
যে বেঞ্চে সে বসতো সেখানে কোনও বন্ধুই তার পাশে বসেনি। সেজন্য স্কুলে মাঠের একপাশে বসে থাকলেও সেখানেও তাকে দেখে ঠাট্টা বিদ্রুপ করেছিল সহপাঠীরা। সেজন্য বেশিরভাগ সময় স্কুলে উপস্থিত ছিলনা। সে সময় ১০৯ কেজি ওজন নিয়ে এভাবেই ২০০৮ সালে সেকেন্ডারি পাশের পর পড়ালেখাতে মন বসেনি। মাঝখানে দুই বছর পড়াশুনা থেকে বিরতি রেখেছিল নিজেকে। সে সময় হরমোন বিশেষজ্ঞ ডা. লায়েক আলী খানের পরামর্শে চিকিৎসা নিয়েছিল বেশ কিছু দিন। তবে চিকিৎসায় তার শরীরের ওজন কমেনি। তবুও প্রবল ইচ্ছা নিয়ে আবারও পড়াশুনা শুরু করে। পরে ২০১২ সালে বোদা পাথরাজ কলেজ থেকে ১২৮ কেজি ওজনের শরীর নিয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে। পরে ২০১২ সালে স্নাতক পাশ করেছে। কিন্তু তার শরীর নিয়ে অসহায় হয়ে পড়েছে।
মাসুদ রানা কান্নাজড়িত কণ্ঠে সাংবাদিকদের বলেন, একদিকে আমার পরিবার আমাকে নিয়ে কষ্টে আছে। অপরদিকে চিকিৎসাতেও কাজ হচ্ছে না, কিন্তু ডাক্তারদের কাছ থেকে আমি শুনেছি বিদেশে এর চিকিৎসা রয়েছে। তবে আমার পরিবারের সামর্থ্য নেই বিদেশে চিকিৎসা করানোর।
হৃদরোগ ও হরমোন বিশেষজ্ঞদের কাছে রংপুরে এবং ঢাকায় চিকিৎসা নিয়েছি। হাঁটাচলা শুরু করলেই পায়ের হাঁটুতে অতিরিক্ত ব্যথা হয়। এজন্য হাঁটতেও পারছি না। আমার পোশাক পাওয়া যায় না। কোন সুন্দর পোশাক পড়তে পারি না মোটা শরীরের কারণে। ২০১৬ সালে স্বাস্থ্য সহকারি পদে চাকরিতে আবেদনের পর শারীরিক অসুস্থতার কারণে যেতে পারিনি। এখন আমি পরিবারের বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছি। স্নাতক পাস করেও আমি অসহায় ।
জেবি
মন্তব্য করুন