দুই মাস ধরে বাড়িতে অবরুদ্ধ বৃদ্ধার পরিবার
অর্থবিত্ত, ক্ষমতার দাপট আর পেশি শক্তির কাছে অসহায় মনবতা। গত দুইমাস ধরে নিজ বাড়িতে অবরুদ্ধ হয়ে মানবেতর জীবন কাটছে অসহায় এক বৃদ্ধার পরিবারের। বাড়ির মেইন গেটের সামনে ইটের প্রাচীর নির্মাণ করায় এখন অবরুদ্ধ পরিবারটি। এমনিই অমানবিক ঘটনা ঘটেছে দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার কাটলা ইউনিয়নে।
প্রতিকারের আশায় উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউএনওর কাছে ধরনা দিয়েও কোনও প্রতিকার না পাওয়ার অভিযোগ অসহায় পরিবারটির। ফলে তাদের এখন অবরুদ্ধ হয়ে মানবেতর জীবন কাটাতে হচ্ছে। প্রতিবেশীর এই অমানবিক আচরণ কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না স্থানীয়রা। এ ঘটনাকে চরম অনামবিক বলেন মনে করেন তারা। মানুষের চলাচলের রাস্তা কখনোই বন্ধ করা ঠিক নয় বলেও দাবি তাদের।
এ বিষয়ে বিরামপুর উপজেলা চেয়াম্যান খায়রুল আলম রাজুর কাছে জানতে চাইলে তিনি আরটিভি নিউজকে জানান, বৃদ্ধার বাড়ির সামনে প্রাচীর নির্মাণ করে চলাচল বন্ধ করার বিষয়টি অমানবিক। প্রাচীর নির্মাণকারী শাহানাজ পারভীন প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধার মেয়ে। এ কারণে সমাধান হতে বিলম্ব হচ্ছে। তবে উভয়ের সঙ্গে আলোচনা চলছে বিষয়টি মীমাংসা করে বৃদ্ধার চলাচলের রাস্তা বের করে দেয়া হবে।
এ বিষয়ে বিরামপুর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মুক্তিযোদ্ধা ইসহাক আলী মন্ডল ওরফে চেংগিস খাঁ আরটিভি নিউজকে জানান, মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের কেউ অপরাধ করলে তার বিচার হবে না তা হতে পারে না। আইন সবার জন্য সমান। বৃদ্ধার পরিবারের সঙ্গে যে আচরণ করা হয়েছে তা অন্যায় ও অমানবিক। মুক্তিযোদ্ধার কন্যা হয়ে শাহানাজ পারভিন যে কাজটি করছে তা মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য লজ্জাজনক। তিনি অচিরেই বৃদ্ধার পরিবারের চলাচলের জন্য রাস্তা বের করে দেয়ার জন্য জোর দাবি জানান।
সরেজমিনে দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার কাটলা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ৬০ বছরের জবেদা বিবির বাড়ির প্রধান গেটের সামনে বাউন্ডারি ওয়াল দিয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে কাটলা ইউনিয়ন ভূমি অফিস। অন্যদিকে চলাচলের রাস্তা কিছুটা থাকলেও প্রতিবেশী শাহানাজ বেগম ইটের প্রাচীর নির্মাণ করায় এখন পুরোপুররি অবরুদ্ধ বৃদ্ধা জবেদা বিবির পরিবার। নির্মাণাধীন ভূমি অফিসের ৩-৪ ফিট উচ্চতার বাউন্ডারি ওয়াল টপকে বাড়িতে প্রবেশ করতে হয় ৬০ বছরের জবেদা বিবি ও তার পরিবারের সদস্যদের। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে এভাবে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করতে হবে কখনও ভাবনাতেই আসেনি এই বৃদ্ধা ও তার পরিবারের।
বৃদ্ধা জবেদা বিবি আরটিভি নিউজকে জানান, এতোদিন স্বাভাবিকভাবে চলাচল করলেও বাড়ির প্রধান দরজার সামনে স্থানীয় ভূমি অফিস এবং প্রতিবেশী শাহানাজ পারভীন ইটের প্রাচীর তৈরি করায় তাকে এখন ৩-৪ ফিট উচ্চতার বাউন্ডারি ওয়াল টোপকে তাকে বাড়িতে প্রবেশ করতে হয়। এভাবে চলাচল করতে গিয়ে তাকে কয়েকবার দুর্ঘটনার শিকারও হতে হয়েছেন তিনি।
বৃদ্ধার ছেলে নাসির উদ্দিন অভিযোগ, নির্মানাধীণ ভূমি অফিসের পেছনের দিকে সরকারিভাবে চলাচলের রাস্তা দেয়া হলেও প্রতিবেশী শাহানাজ পারভীন তার লোকবল নিয়ে রাতারাতি বাড়ির সামনে ইটের প্রাচীর তুলে তাদের অবরুদ্ধ করে রেখেছে। অথচ ওই জায়গাটি শাহানাজ পারভিনের বাবার প্রায়াত মুক্তিযোদ্ধা ফজুলর রহমানের কাছ থেকে ২৫ হাজার টাকার বিনিময়ে স্ট্যাম্পের ওপর লেখাপড়া করে কেনা হয়েছে। সেখানে শাহানাজ পারভীনের স্বাক্ষরও আছে।
তিনি আরও জানান, বিষয়টি নিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইউএনওর কাছে লিখিত অভিযোগ করেও কোনও বিচার পাচ্ছি না। দীর্ঘ প্রায় দুই মাস ধরে তারা নতুন-নতুন তারিখ দিয়ে বিচারের নামে কালক্ষেপণ করা হচ্ছে অথচ তারা কোনও বিচার করছেন না। তিনি অভিযোগ করেন, আমি অসহায় হওয়ায় আমার বিচারের আসায় সবার দারে-দারে ঘুরেও কোনও বিচার পাচ্ছি না।
স্থানীয় বকুল হোসেন, মোখলেছার রহমান, মমিনুল ইসলাম জানায়, ভূমি অফিস নির্মাণের সময় সাধারণের চলাচলের জন্য অফিসের পেছন দিকের সরকারিভাবে রাস্তা ছেড়ে দেয়া হয়। কিন্তু শাহানাজ পারভীন রাতারাতি ওই বৃদ্ধার বাড়ির সামনে প্রাচীর নির্মাণ করে পরিবারটিকে অবরুদ্ধ করে রাখে। এখন পরিবারটি বাড়ি থেকে বের হতেও পারছে না আবার বাড়িতে ঢুকতেও পাড়ছে না। ফলে তারা মানবেতর জীবন-যাপন করছে। তারা অনতিবিলম্বে বৃদ্ধার ও তার পরিবারের চলাচলের রাস্তার ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি জানান।
সম্প্রতি শাহানাজ পারভীনের লোকজন নির্মাণাধীন ভূমি অফিনের পেছনে সরকারি রাস্তা দখল করে আরও একটি ইটের ওয়াল নির্মাণের সময় বিরামপুর থানা পুলিশ এসে বাধা দেয়। পরে পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে ওয়াল নির্মান করলে একজনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। পরে রাতে তাকে মুসলেকা নিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রতিবেশী শাহানাজ পারভীন প্রাচীর নির্মাণের বিষটি অমানবিক হয়েছে শিকার করে আরটিভি নিউজকে জানান, সেখানে প্রাচীর নির্মাণ করে তার ব্যবহৃত স্কুটি (মোটরসাইকেল) রাখার ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। তিনি দাবি করেন আমার জায়গায় আমি কাউকে ব্যবহার করতে দেব না। তবে তিনি শিকার করেন তার বাবা প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা ফজুলর রহমান প্রতিবেশী নাসির উদ্দিনের কাছে ২৫ হাজার টাকার বিনিময়ে জায়গাটির পজিশন বিক্রি করেছেন। যা রেজিস্ট্রি করা হয়নি।
জেবি
মন্তব্য করুন