ঢাকাবুধবার, ১৯ মার্চ ২০২৫, ৫ চৈত্র ১৪৩১

পরকীয়ার জেরে দিনমজুরকে গলা কেটে হত্যা, আটক ২

স্টাফ রিপোর্টার (চাঁদপুর), আরটিভি নিউজ 

মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ ২০২৫ , ০৫:৫৬ পিএম


loading/img
ছবি: সংগৃহীত

পরকীয়া ও টাকা লেনদেনের কারণে চাঁদপুরের শাহরাস্তিতে প্রবাসী আবুল হোসেন মানিকের বাসার ছাদে দিনমজুর আলমগীর হোসেনকে (৩৫) মা-মেয়ে মিলে জবাই করে হত্যা করার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই হত্যার রহস্য উন্মোচন করেছে শাহরাস্তি থানা পুলিশ। 

বিজ্ঞাপন

পুলিশ জানায়, শাহরাস্তি উপজেলার মনিপুর গ্রামে সোমবার রাতেই পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্যে বাড়ির মালিক প্রবাসী মানিকের স্ত্রী খোদেজা বেগম ও তার মেয়ে মাহমুদা আক্তার সোনিয়াকে থানায় নিয়ে আসে। ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের পর সোনিয়া এ হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করে। অভিযুক্ত দুই নারী মা ও মেয়েকে পুলিশ আটক করে চাঁদপুর কোট হাজতে প্রেরণ করেছে। একইসঙ্গে নিহত আলমগীরের মরদেহ চাঁদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছে পুলিশ। হত্যাকাণ্ডের শিকার আলমগীরের এক ছেলে ও দুই কন্যাসন্তান রয়েছে। তার স্ত্রীর নাম তাছলিমা বেগম। সে মাইকে প্রচারণার কাজ করতো। মাইকম্যান ও বটবটি চালিয়ে শ্রমজীবী মানুষ হিসেবে জীবিকা নির্বাহ করতো।

এ চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিহতের ভাই রফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে বিল্ডিংয়ের মালিক আবুল হোসেনের স্ত্রী খোদেজা বেগম প্রকাশ পান্না (৫০) তাদের মেয়ে, জনৈক তুষারের স্ত্রী মাহমুদা আক্তার সোনিয়াকে (৩০) অভিযুক্ত করে শাহরাস্তি মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।

বিজ্ঞাপন

মামলার এজাহার সূত্রে প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, নিহতের সঙ্গে ওই অভিযুক্ত দুই নারী মা খোদেজা এবং মেয়ে সোনিয়ার সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্ক ও আর্থিক লেনদেনের বিষয়াদি জড়িত রয়েছে। ওই বিবাদের ধুম্রজালে হত্যাকাণ্ডটি ঘটে থাকতে পারে বলে পুলিশ ধারণা করছে। একই সঙ্গে ওই হত্যাকাণ্ডে কারা জড়িত রয়েছে পুলিশ তাও খতিয়ে দেখছে।

মাহমুদা আক্তার সোনিয়া জানান, আলমগীরের সঙ্গে তার সম্পর্ক রয়েছে। আলমগীর তাকে বিরক্ত করতো। এই ক্ষোভের কারণেই তাকে হত্যা করা হয়েছে। হত্যায় ব্যবহৃত ছুরিটি ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ উদ্ধার করেছে। 

সোনিয়া জানায়, চিতোষী বাজার থেকে হত্যায় ব্যবহৃত ছুরিটি কেনা হয়। ওই ছুরি দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করে আলমগীরকে হত্যা করা হয়। 

বিজ্ঞাপন

আলমগীরের স্ত্রী তাছলিমা বেগম জানান, আমার স্বামী সোনিয়ার কাছে ১২ লাখ টাকা পাবে, টাকা দিবে বলে সোনিয়া ফোন করে আমার স্বামীকে বাসায় নিয়ে খুন করেছে।

পুলিশ ও স্থানীয় এলাকাবাসী জানায়,ওই রাতে প্রবাসী গৃহকর্তা মানিকের হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হওয়া  বিল্ডিং এর পাশ দিয়ে তার  সম্পর্কে  ছোট ভাই  নজরুল ইসলাম শিপন তারাবির নামাজ আদায় শেষে ঘরে ফিরছিলেন। ওই এলাকা অতিক্রমের সময় ঘটনা সংঘটিত হওয়া বিল্ডিংয়ের ছাদে অস্বাভাবিক শব্দ শুনতে পান। পরে তিনি চোর চোর বলে চিৎকার করে ওই বিল্ডিং এর গৃহকর্তা প্রবাসী মানিকের স্ত্রী তার সম্পর্কে ভাবি খোদেজা বেগমসহ ছাদে উঠেন শিপন। 

উঠেই দেখেন, পার্শ্ববর্তী নতুন বাড়ির মৃত শহীদ উল্লাহর পুত্র আলমগীর হোসেনকে কেবা কারা গলা কেটে শরীরের বিভিন্ন অংশে ছুরিকাহত করে নিথর দেহ ফেলে রেখেছে। পরে তাদের ডাক চিৎকারে স্থানীয়রা ছুটে এসে একই দৃশ্য দেখতে পেয়ে সেখানে ভিড় জমায়। ওই সময় নিহতের স্বজন  মো. জাহিদ হাসান ঘটনাস্থল থেকে মুঠোফোনে ৯৯৯ ফোন দিয়ে ঘটনাটি পুলিশকে অবহিত করেন। পরে মুহূর্তের মধ্যে ওই সংবাদ চারদিকে চাউর হলে শাহরাস্তি মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি মোহাম্মদ আবুল বাসার পুলিশ সঙ্গীও ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে হাজির হন। মধ্যরাত অবধি 
পিবিআইর অতিরিক্ত ডিআইজি মোস্তাইন হোসেন, কচুয়া সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার রিজওয়ান সাঈদ জিকোসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট কাজ করে।

সোনিয়া উক্ত ঘটনায় নিজে দায় স্বীকার করলেও এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত কারো সম্পৃক্ততা রয়েছে কিনা তা বলছে না। কিন্তু ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধারকৃত মোবাইলে সূত্র ধরে পুলিশ ধারণা করছে, এ ঘটনায় আরও কেউ জড়িত রয়েছে। 

শাহরাস্তি মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবুল বাসার জানান, আলমগীর হোসেনের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্যে প্রেরণ করা হয়েছে । ধারালো অস্ত্রের আঘাতে নিহতের গলাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখমের চিহ্ন রয়েছে। পুলিশ ঘটনা স্থল থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরি ও আলামত জব্দ করেছে। 

তিনি আরও জানান, এ ঘটনায় প্রবাসী আবুল হোসেনের স্ত্রী ও মেয়েকে আটক করে কোর্টে প্রেরণ করা হয়েছে। আদালতে আসামির ৫ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত অন্যদের আটক অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

আরটিভি/এএএ  

 

 

 

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন


© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৬-২০২৫ | RTV Online |