ঢাকামঙ্গলবার, ০৮ এপ্রিল ২০২৫, ২৫ চৈত্র ১৪৩১

ফলোআপ

ঢাকায় প্রেমিকাকে ফ্ল্যাট কিনে না দেওয়ায় ৫ টুকরা করে হত্যা!

আরটিভি নিউজ

রোববার, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১ , ০২:৫৫ পিএম


loading/img
ভয়ঙ্কর প্রেমিকা।। ফাইল ছবি

এবার বেরিয়ে এলো অর্ধশত বছর বয়সী সেই প্রেমিকার ভয়ঙ্কর দিক। রাজধানী ঢাকায় ফ্ল্যাট কিনে না দেওয়ায় প্রেমিকের বুকে ছুরি মেরে হত্যা করা হয়। এরপর প্রেমিককে হাত-পা আলাদা করে পুরো শরীর ৫ টি খণ্ডে খন্ডিত করেন সেই ভয়ঙ্কর প্রেমিকা। সম্প্রতি রাজধানীর সায়েদাবাদের স্বামীবাগে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। এরপরই ওই ঘটনার রহস্য উদঘাটনে মাঠে নেমে পড়ে পুলিশ। ঘটনায় একটি হত্যা মামলাও দায়ের হয়। ইতোমধ্য ওই প্রেমিকাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে তিনি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিলে কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

বিজ্ঞাপন

ভয়ঙ্কর সেই প্রেমিকার নাম শাহনাজ পারভীন এবং হত্যার শিকার প্রেমিকের নাম সজিব হাসান। হত্যার শিকার সজিবের গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডের তাহেরহুদা ইউনিয়নের নারায়ণকান্দিতে।

আরও পড়ুন: ক্ষুধা, তৃষ্ণায় মরুভূমিতে এক পরিবারের ৮ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু

নিহত সজিব হাসানের মা সূর্য নেছা এবার চাঞ্চল্যকর তথ্য দিলেন। তিনি দাবি করছেন, সজিব তার কথিত স্ত্রী শাহনাজ পারভীনকে ঢাকায় ফ্ল্যাট কিনে না দেওয়ায় সজিবকে হত্যা করা হয়েছে। গ্রামের বাড়িতে জমি বিক্রি করতে চাপ দিচ্ছিল তার কথিত স্ত্রী শাহনাজ। কিন্তু সজিব সেটিতে রাজি হয়নি। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে শাহনাজ তাকে ছুরি দিয়ে খণ্ড-বিখণ্ড করে হত্যা করে। প্রায় ১১ বছর আগে সজিব এবং শাহনাজ স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে ঝিনাইদহের গ্রামের বাড়িতে গিয়েছিলো। 

সূর্য নেছা বলেন, ওই বয়স্ক নারী আমার ছেলেকে ফাঁদে ফেলে ব্লাকমেইলিং করে আসছিলো। সজিবের সঙ্গে নারীকে প্রথমে আমরা মেনে নিতে না চাইনি, পরে একসময়ে সন্তানের সুখের কথা চিন্তা করে মেনে নেই। এই নারীর নাম যে শাহনাজ, তা আমরা জানতাম না। আমরা পরিবারের সদস্যরা ও এলাকাবাসী তাকে সাদিয়া ইসলাম মৌ নামে চিনতাম এবং ওই নামেই তিনি পরিচয় দিয়েছিলেন। সজিবকে হত্যার পর তার নাম যে ‘শাহনাজ’ সেটি আমরা জানতে পারি।

মা সূর্য নেছা বলেন, আমাদের ছেলে সজিব ঢাকায় কোথায় থাকতো ওই নারীর চাপের মুখে পড়ে সে তা কখনো জানায়নি। যদিও তারা মাঝে মাঝে বাড়ি আসত এবং আত্মীয়দের বাড়িতে বেড়াতে যেত। ওই নারী জানায়, তাদের গ্রামের বাড়ি যশোরের সোনাপুর। ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে তাদের বাসা। তারা ৬ ভাইবোন। বড় ভাই ব্যাংকে চাকরি করেন। আর ছোট ভাইবোনরা কানাডায় থাকে। অথয়, এখানে অনেক মিথ্যা কথা বলেছে শাহনাজ পারভীন।

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন: পটিয়ায় কাউন্সিলর প্রার্থীর ভাই গুলিতে নিহত

ঝিনাইদহের নারায়ণকান্দি ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার আনিছ মিয়া জানান, সজিব ও সেই নারীকে ১০ থেকে ১২ বছর যাবত স্বামী-স্ত্রী হিসেবেই জানি। এলাকায় এসে প্রতিবার সপ্তাহখানেক থাকত। হত্যাকাণ্ডের পরে নানা ধরনের চাঞ্চল্যকর তথ্য শুনতে পাচ্ছি।

অন্যদিকে ৫০ বছর বয়সী সেই প্রেমিকা বলছেন উল্টো ঘটনা। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি পুলিশকে জানান, সজিব তার স্বামী নয়। তার স্বামী একটি প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। তাদের সংসারে ২ মেয়ে। প্রায় ৫ বছর আগে তার ১ মেয়েকে স্কুলে নেওয়ার সময় শ্যামলী পরিবহনের কাউন্টারের স্টাফ সজিব হাসানের সঙ্গে পরিচয় হয়। প্রথমে অল্পস্বল্প কথা হতো। এরপর প্রেমে জড়িয়ে তারা অনৈতিক সম্পর্কে লিপ্ত হন। তখনই সজিব শাহনাজকে স্ত্রী হিসেবে পরিচয় দিয়ে স্বামীবাগে বাসা ভাড়া নেন। প্রায় প্রতিদিনই দিনের বেলায় সজিবের ভাড়া বাসায় এসে সময় কাটাতেন শাহনাজ। আর সন্ধ্যায় স্বামীর বাসায় চলে যেতেন। বুটিকসের কাজ শেখার কথা বলে বাসা থেকে নিয়মিত বের হতেন শাহনাজ। তার স্বামী ও সজিবের বাসা ওয়ারীতেই।

শাহনাজ পুলিশকে জানিয়েছেন, সজিব তার সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কের কথা অন্যদের জানিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে প্রায়ই টাকা আদায় করতেন। এমনকি শাহনাজের কলেজ পড়ুয়া মেয়ের সঙ্গেও সজিব অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে গিয়েছিলো। যা টের পেয়ে যান শাহনাজ। সজিবের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি স্বামীর সঙ্গেও শাহনাজের মধুর সম্পর্কের কমতি ছিলো না। যদিও স্বামী-স্ত্রী দু'জন মাঝেমাঝে ঝগড়া করতেন। সজিবের সঙ্গে টানা ৫ বছর বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক রাখলেও স্বামী তা টের পাননি।

আরও পড়ুন: দামি গাড়িটাই ছিলো দিহানের মেয়ে পটানোর প্রধান হাতিয়ার

গত বৃহস্পতিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে সায়েদাবাদের কে এম দাস লেনের একটি ভাড়া বাসা থেকে উদ্ধার করা হয় সজীবের মরদেহের ৫ টুকরো। তখন পাশেই খাটের উপর বসে ছিলেন প্রেমিকা শাহনাজ পারভীন। পরে, সেখান থেকেই তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ ঘটনায় ওয়ারী থানা-পুলিশ বাদী হয়ে প্রেমিকাকে একমাত্র আসামি করে মামলা দায়ের করে। 

প্রতিবেশীরা বলছেন, ৫ থেকে ৬ বছর ধরে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে সায়েদাবাদের কে এম দাস লেনের ৬ তলা ভবনের চতুর্থ তলায় বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতেন ৫০ বছর বয়সী শাহনাজ ও বাসের টিকিট কাউন্টারের কর্মী ৩২ বছরের সজিব। এদিকে স্ত্রী নিখোঁজ থাকায় মঙ্গলবার (০৯ ফেব্রুয়ারি) ওয়ারী থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন আটককৃত শাহনাজের আসল স্বামী।

ডিএমপির ওয়ারী বিভাগের বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) শাহ ইফতেখার আহমেদ বলেন, পারভিন ৩ দিন যাবত নিখোঁজ জানিয়ে তার স্বামী ওয়ারী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। পুলিশ শাহনাজ পারভিনকে খুঁজতে গিয়ে সজিবের মরদেহ পায়। যে মরদেহের পাশেই পারভিন বসে ছিলো।  

আরও পড়ুন: এসব হাওয়াই মিঠাইয়ে জড়িয়ে আছে শামীমের ভালোবাসা

পুলিশ জানায়, সজিবের সঙ্গে পারভিনের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। সে কারণে পারভিন তার স্বামীর বাসা থেকে ৩ দিন আগে টাকা-পয়সা ও স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে পালিয়ে সজিবের বাসায় ওঠেন। জিডি হওয়ার পর মোবাইল ফোন ট্র্যাক করে শাহনাজ পারভিনের অবস্থান নিশ্চিত হয়ে সজিবের বাসায় যায় পুলিশ। সেখানে পারভিনকে পাওয়ার পাশাপাশি সজিবের লাশও মেলে।

পারভিনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ‍ডিসি বলেন, গত বৃহস্পতিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) সকালে ঝগড়ার সময় এই হত্যাকাণ্ড ঘটে। তিনি বলেছেন, সজিবের সঙ্গে তার প্রথমে ঝগড়া হয়, তখন সজিব তাকে ছুরি দিয়ে আঘাত করে। পরে ধস্তাধস্তির মধ্যে ছুরি পারভিনের হাতে চলে আসে। তখন তিনি সজিবকে ছুরি মারলে সে মারা যায়। এরপর পারভিন রান্না ঘরের বটি দিয়ে সজিবের মরদেহ পাঁচ টুকরা করার কথা স্বীকার করে।

শাহনাজ পারভিনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী পুলিশ বলছে, পরিস্থিতিতে সজিব হাসান তার টাকাপয়সা ও স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে বিক্রি করতে চাইলে কথা-কাটাকাটি হয়। এর জেরেই সজিব হাসান তাকে ছুরি দিয়ে হত্যা করতে চাইলে ওই ছুরি কেড়ে নিয়ে উল্টো সজিব হাসানের বুকের নিচে আঘাত করেন। হত্যাকারী শাহনাজ পারভিন প্রেমিক সজিবের তুলনায় শারীরিক গঠনে খুবই ভালো। হত্যা শেষে ছুরি দিয়ে সজিবের দু’হাত, দু’পা বিছিন্ন করে হত্যা করা হয়। এ কাজে ব্যবহৃত ছুরি ও শিল উদ্ধার করেছে পুলিশ।

আরও পড়ুন : ভালোবাসা সম্পর্কে ইসলাম যা বলে

কেএফ

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন


© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৬-২০২৫ | RTV Online |