প্রসব বেদনা উঠলে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি বিকেলে স্ত্রীকে রাজগঞ্জ মডার্ন হসপিটালে ভর্তি করেন ওই বাজারের ভাঙাড়ি ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন। এর পরপরই সিজারের মাধ্যমে একটি কন্যাসন্তান জন্ম দেন ওই নারী। জন্মের পরেই গুরুতর অসুস্থ নবজাতককে যশোর সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। কয়েক ঘণ্টা পর রাত সাড়ে নয়টার দিকে শিশুটির মৃত্যু হয়।
ক্লিনিকে সিজারের মাধ্যমে শিশুর মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পর বেরিয়ে আসে রাজগঞ্জ মডার্ন হসপিটালটির ভেতরের খবর। অভিযোগ ওঠে অনুমোদনহীন ক্লিনিকটিতে নেই কোনও অজ্ঞান বা সিজার করা ডাক্তার; এমনকি জরুরি সেবার জন্য একজন মেডিকেল অফিসারও নেই। নামমাত্র অনভিজ্ঞ চিকিৎসক দিয়ে নিয়মিত রোগীর সিজার হয় সেখানে।
আরও পড়ুন : বাস থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলা হলো প্রতিবন্ধী নারীকে!
এদিকে ক্লিনিকে শিশু মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে সেখানে ভিড় জমতে থাকে স্থানীয় কয়েকজন সাংবাদিকের। পরে কর্তৃপক্ষ তাদের ১০ হাজার টাকা দিয়ে ঘটনাটি চাপা দেয়। বিপত্তি ঘটে সেখানে। ১০ হাজার টাকা ভাগাভাগি নিয়ে নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্বে ভিতরের খবরটি বেরিয়ে আসে। পরে মণিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে খবর নিয়ে জানা গেছে, ২০২০ সালে ১০ শয্যার রাজগঞ্জ মডার্ন হসপিটালটি গড়ে উঠলেও তার নেই কোনও লাইসেন্স কিংবা রোগী ভর্তির অনুমোদন। এমনকি লাইসেন্স পাওয়ার আবেদনও করেননি ক্লিনিকের মালিকপক্ষ।
স্থানীয়রা জানান, অনুমোদন ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসক না থাকলেও নিয়মিত রোগী ভর্তি করে সিজার করিয়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন মডার্ন ক্লিনিকের মালিক। প্রকাশ্যে ঘটনাটি ঘটলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না যথাযথ কর্তৃপক্ষ। ফলে স্থানীয় কয়েকজন দালালকে ম্যানেজ করে ক্লিনিক চালাচ্ছেন মালিকপক্ষ।
আরও পড়ুন : মোবাইল ফোনে পরিচয়, অতঃপর প্রলোভন দেখিয়ে স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণ
মণিরামপুর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. অনুপ বসু বলেন, উপজেলায় ১৭টি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার আছে। যার মধ্যে মনোয়ারা ক্লিনিক, রোকেয়া ক্লিনিক, দি প্যাথ ও সেবা ডায়াগনস্টিক সেন্টার চলার অনুমোদন রয়েছে। বাকিগুলোর মধ্যে পাঁচটিতে সম্প্রতি অভিযান চালিয়ে সিলগালা ও জরিমানা করা হয়েছে। কাগজপত্রে ত্রুটি ও প্রয়োজনীয় লোকবল না থাকায় অন্যসবগুলো বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। রাজগঞ্জের মডার্ন ক্লিনিক, সেভ ডায়াগনস্টিক এবং বাঁকড়া পারবাজার সার্জিকাল ক্লিনিকের কোন লাইসেন্স নেই।
কথা হয় মডার্ন হসপিটালের পরিচালক আমিরুজ্জামানের সাথে। তিনি ক্লিনিকের অনুমোদন না থাকার বিষয়টি স্বীকার করে জানান, অনুমোদনের জন্য অনলাইনে আবেদন করা হয়েছে।
নবজাতকের মৃত্যুর বিষয়ে আমিরুজ্জামান বলেন, সিজার করার পর শ্বাসকষ্ট হওয়ায় চিকিৎসকের পরামর্শে নবজাতককে যশোর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে শিশুটি মারা গেছে। একপর্যায়ে এই প্রতিবেদককে দেখা করার প্রস্তাব দেন তিনি।
আরও পড়ুন : তৃতীয় লিঙ্গের মানুষকে কী বিয়ে করা জায়েজ?
মণিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা শুভ্রারাণী দেবনাথ বলেন, রাজগঞ্জের মডার্ন হসপিটালের কোনোপ্রকার কাগজপত্র না থাকায় তাদের কার্যক্রম বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। তারা রোগী ভর্তি করাতে পারবে না।
পি